মিল্কিওয়ের নিকটবর্তী একটি ছোট ছায়াপথে কীভাবে বড় আকারের তরুণ তারার ‘জন্ম’ হয় তা নিয়ে চমকপ্রদ এক আবিষ্কার করেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার শক্তিশালী ‘জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ’ বা জেডব্লিউএসটি ও ‘আটাকামা লার্জ মিলিমিটার/সাবমিলিমিটার অ্যারে’ বা এএলএমএ ব্যবহার করে ‘লার্জ ম্যাজেলানিক ক্লাউড’ বা এলএমসি নামের ছায়াপথে নবজাতক এক বড় তারাগুচ্ছ খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা, যা বিশালকার তারা গঠনের প্রাথমিক পর্যায়ের এক বিরল ঝলক দিয়েছে বলে দাবি তাদের।
প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি বছর আগে বড় আকারের তারাগুচ্ছ বেশ সাধারণ বিষয় ছিল, যা প্রতি বছর শত শত তারা তৈরি করত। তবে সময়ের সঙ্গে এ ধরনের তারা গঠনের গতি ধীর হয়ে গেছে এবং আমাদের মহাবিশ্বে কেবল কয়েকটি বড় আকারের তারাগুচ্ছই অবশিষ্ট রয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
এখনও পর্যন্ত মিল্কিওয়েতে কেবল দুটি ও এলএমসিতে একটি পরিচিত সুপার স্টার বা বড় তারা রয়েছে, যার সবগুলোই কোটি কোটি বছর পুরনো।
জেডব্লিউএসটি টেলিস্কোপের কল্যাণে এখন এলএমসি’তে দ্বিতীয় ও তরুণ বড় আকারের তারাগুচ্ছ খুঁজে পেয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। এ তারাগুচ্ছের বয়স এক লাখ বছর, আর এ বিষয়টিই বাস্তব সময়ে এর জন্ম দেখার সুযোগ করে দিয়েছে বিজ্ঞানীদের।
তারা বলছেন, এক লাখ ৬০ হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এলএমসি, যা আমাদের ছায়াপথের বাইরে বিভিন্ন তারা কীভাবে গঠিত হয়েছে তা নিয়ে গবেষণার জন্য দুর্দান্ত এক জায়গা।
‘মিড-ইনফ্রারেড ইনস্ট্রুমেন্ট’ বা এমআইআরআই-এর ‘এন৭৯’ অঞ্চলে ৯৭টি তরুণ তারা পর্যবেক্ষণ করেছে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ, যার মধ্যে রয়েছে ‘এইচ৭২.৯৭-৬৯.৩৯’ নামের নতুন আবিষ্কৃত এক বড় তারাগুচ্ছ।
মিল্কিওয়ের চেয়ে কম ভারী উপাদান রয়েছে এলএমসিতে। ফলে এর অবস্থা কোটি কোটি বছর আগে মহাবিশ্বে যখন প্রথমবারের মতো বিভিন্ন তারা গঠিত হয়েছিল তার মতোই।
জেডব্লিউএসটি-এর ছবিতে দেখা গেছে, সবচেয়ে বড় ও উজ্জ্বল তরুণ তারাগুলো রয়েছে ‘এইচ৭২.৯৭-৬৯.৩৯’-এর তারাগুচ্ছে, যেখানে ছোট আকারের বিভিন্ন তারা এ অঞ্চলের আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
একসময় যাকে একটি একক দানবাকার তারা বলে বিজ্ঞানীরা ধারণা করতেন তা পরিণত হয়েছে পাঁচটি তরুণ তারার একটি দলে। যার মধ্যে একটি তারা সূর্যের চেয়েও পাঁচ লাখ গুণ বেশি উজ্জ্বল। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের ছবিতে আরও দেখা গেছে, যে এই শক্তিশালী তারাগুচ্ছটিকে ঘিরে রয়েছে দেড় হাজারেরও বেশি তরুণ তারা।
এ গবেষণার প্রধান গবেষক ইশা নায়েক বলেছেন, “এলএমসিতে তরুণ তারা নিয়ে গবেষণা করে আমরা দেখেছি কীভাবে সূর্যের মতো বিভিন্ন তারা অন্যান্য ছায়াপথে গঠিত হয়েছে। প্রথমবারের মতো আমরা এই প্রক্রিয়াটি বিস্ময়করভাবে বিশদ পর্যবেক্ষণ করেছি।”
খুলনা গেজেট/এএজে