মঙ্গলবার । ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ । ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২

এনআইডি’র ভু‌লে ভাতা ব‌ঞ্চিত সত্তোরোর্ধ্ব কলিম ঢালী

ত‌রিকুল ইসলাম, খুলনা

বয়সের ভারে নুয়ে পড়ে‌ছেন ক‌লিম ঢালী। তার বড় ছে‌লের বয়স ৫০ বছর এবং ৩ বছ‌রের বড় আপন ভাইয়ের বয়স ৮০ বছর। অথচ জাতীয় প‌রিচয়পত্র অনুযা‌য়ি ক‌লিম ঢালী এখনও যুবক, তার বয়স ৪১ বছর। বৃদ্ধ বয়‌সে খে‌য়ে না খে‌য়ে দিনাতিপাত কর‌লেও বয়স জ‌টিলতায় পা‌চ্ছেন না বয়স্কভাতা। এনআইডি কার্ড সং‌শোধ‌নের আবেদন করার প‌রে কোন সমাধান পান‌নি তি‌নি।

জানা যায়, খুলনা জেলার কয়রা উপ‌জেলার মহারাজপুর ইউ‌নিয়‌নের জয়পুর গ্রা‌মের মৃত আত্তাপ ঢালীর তিন ছে‌লের ম‌ধ্যে ছোট ক‌লিম ঢালী। ‌তার জাতীয় প‌রিচয়পত্র নম্বর ৪৭১৫৩৭২৬৫৪৫৮৩। জাতীয় প‌রিচয়পত্রে তার জন্ম তা‌রিখ দেখা‌নো হ‌য়ে‌ছে ২ মে, ১৯৮৪। অথচ তার বড় ছে‌লের জন্ম ১৯৭৫ সালে। সে হি‌সে‌বে বড় ছে‌লের চে‌য়ে তার বয়স ৯ বছর কম। ক‌লিম ঢালীর বড় ভাই‌ ক‌য়েকবছর পূ‌র্বে মৃত্যুবরণ ক‌রে‌ছেন। মেঝ ভাই‌য়ের বয়স ৮০ বছর। ক‌লিম ঢালীর প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার প‌রে দ্বিতীয় বি‌য়ে ক‌রেন তি‌নি। প্রথম স্ত্রীর পাঁচ ছে‌লে আর দ্বিতীয় স্ত্রীর তিন মে‌য়ে। সন্তা‌নেরাও তেমন স্বচ্ছল নয়। সক‌লেই বি‌য়ের প‌রে পৃথক। বৃদ্ধ‌ বয়‌সে ২য় স্ত্রী‌কে নি‌য়ে ‌খে‌য়ে না খে‌য়ে ক‌ষ্টে জীবন-যাপন কর‌লেও খোঁজ রা‌খেন না কেউ। স্বামী-স্ত্রী দু’জ‌নে অ‌ন্যের বা‌ড়ি দিনমজু‌রের কাজ ক‌রে সংসার চালা‌চ্ছেন। ভি‌টে বা‌ড়ি ছাড়া তেমন কোন জ‌মি নেই তাদের। সারাজীবন কে‌টে‌ছে দিনমজুরীর কাজ ক‌রে। ছোট থাক‌তে পিতা মারা যায়। তার মা প‌রের বা‌ড়ি কাজ ক‌রে তা‌দের‌কে লালন পালন ক‌রে‌ন। সমাজ‌সেবা অ‌ধিদপ্ত‌রের বয়স্ক ভাতা পে‌তে আ‌বেদনও কর‌তে পার‌ছেন না।

ক‌লিম ঢালী জানান, ‌বেশ ক‌য়েক বছর পূ‌র্বে এলাকার এক শিক্ষক এনআইডি’র তথ্য সংগ্রহে তা‌দের বা‌ড়িতে যান। তখন তি‌নি দিনমজুরীর কা‌জে বাই‌রে ছি‌লেন। কিভা‌বে কি তথ্য লি‌খে নেন, সেটা তি‌নি জা‌নেন না। পরবর্তী‌তে আই‌ডি কার্ড পাওয়ার প‌রে এলাকার গণ্যমাণ্য ব্যক্তি, জনপ্রতি‌নি‌ধি, উপ‌জেলা নির্বাচন অ‌ফি‌সে যে‌য়েও বয়স সং‌শোধন কর‌তে পা‌রেননি। এ নি‌য়ে ক‌য়েক‌টি মি‌ডিয়ায় প্রতি‌বেদনও প্রকাশ পায়। একপর্যা‌য়ে গত বছর স্থানীয় এক ব্যক্তির সহ‌যো‌গিতায় যথাযথ নিয়ম অনুযা‌য়ি আবেদন ক‌রেন। তবুও সং‌শোধন হয়‌নি। নির্বাচন অ‌ফি‌সে গে‌লে তারা ব‌লেন, এটা ‘গ’ ক্যাটাগ‌রির কাজ, উপ‌জেলা অ‌ফি‌সের কিছু করার নেই।

কান্নাজ‌ড়িত ক‌ন্ঠে তি‌নি ব‌লেন, এখন আর দিনমজুরীর কা‌জ কর‌তে পা‌রি না, সারা শরীরে ব্যথা। ওষুধ কিন‌তে পা‌রি না। স্ত্রীর একা আয়ে সংসার ঠিকমত চ‌লে না। খে‌য়ে না খে‌য়ে দিনাতিপাত কর‌তে হ‌চ্ছে।

কয়রার সহকারী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহতারম বিল্লাহ ব‌লেন, বিষয়‌টি দুঃখজনক। আমি নতুন এসে‌ছি। আবেদনটি আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস খুলনাতে প্রক্রিয়াধীন র‌য়ে‌ছে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন