খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ মাঘ, ১৪৩১ | ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  বাংলাদেশের মতো তরুণ নেতৃত্বকে সামনে রেখে এগিয়ে যেতে হবে, আর্থিক ও শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর আহবান: ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে ড. ইউনূস
  সুইজারল্যান্ডে জাতিসংঘ মহাসচিবের সাথে ড. ইউনূসের সাক্ষাৎ

সরকার নিরপেক্ষ থাকতে না পারলে নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে, বিবিসিকে ফখরুল

বিবিসি বাংলা

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে না পারলে নির্বাচন করতে পারবেন না বলে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার বিবিসি বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন তিনি।

জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা নতুন রাজনৈতিক গঠন করে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চায় বলে জানা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারে নিজেদের প্রতিনিধি রেখে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টি মেনে নেবে না বলেও মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব।

সাক্ষাৎকারে আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে নিজেদের ভাবনা, আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ গ্রহণ, সংস্কার প্রস্তাবে দলের প্রতিক্রিয়াসহ আরও অনেক বিষয়ে দলের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন মি. আলমগীর।

বিবিসি বাংলা: মি. আলমগীর আপনাকে অনেক ধন্যবাদ বিবিসি বাংলার সাক্ষাৎকারে যোগ দেওয়ার জন্য। কেমন আছেন আপনি?

বিএনপি মহাসচিব: ভালো, ভালো। অনেক ভালো।

বিবিসি বাংলা: প্রথমে একটু নির্বাচন দিয়ে শুরু করতে চাই। সম্প্রতি আপনি একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, এই বছরের (২০২৫) জুলাই-অগাস্টের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব। এটা কি একটা সম্ভাবনার কথা বলছেন, নাকি আপনারা চান যে, জুলাই-অগাস্টে নির্বাচন হোক?

বিএনপি মহাসচিব: আমরা তো চাই আর্লি ইলেকশন। আগেও বলেছি আমরা। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সংস্কার, যেটা ন্যূনতম সংস্কার, সেগুলো করে যত দ্রুত সম্ভব জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা। এটা আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি এবং আমরা বিশ্বাস করি যে, আমাদের যে অভিজ্ঞতা দেখেছি আমরা অতীতের কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টগুলোতে, তাতে করে এটা অসম্ভব কিছু না। এটা পসিবল যদি গভর্নমেন্ট চায় যে, ইলেকশন তারা করবে জুন-জুলাইয়ের মধ্যে বা অগাস্টের মধ্যে, তারা করতে পারে।

বিবিসি বাংলা: আপনারা কোনো সুনির্দিষ্ট কি বলবেন যে, আপনারা এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন চান?

বিএনপি মহাসচিব: আমরা সুনির্দিষ্ট সময় ওইভাবে বলতে চাই না এজন্য যে, তাতে তো লাভ হবে না। কারণ গভর্নমেন্টকেও চাইতে হবে। আলাদা পলিটিক্যাল পার্টিদেরকেও চাইতে হবে, সবাই মিলে একসাথে চাইতে হবে। তবে আমাদের দিক থেকে আমরা মনে করি, এটা কোনো অসম্ভব কিছু না। এটা খুবই সম্ভব এবং যতদ্রুত হয় ততই দেশের জন্য মঙ্গল।

বিবিসি বাংলা: কিন্তু আপনাদের কোনো ডেডলাইন বা সময়সীমা নেই?

বিএনপি মহাসচিব: ডেডলাইন আমরা দেইনি এখনো।

বিবিসি বাংলা: যদি আপনারা দেখেন যে, নির্বাচনটা আপনারা যে সময়ের মধ্যে আশা করছেন, সেটা হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে আপনাদের পদক্ষেপটা কী হবে?

বিএনপি মহাসচিব: সেক্ষেত্রে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। আমাদের পার্টিতে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো এবং আমাদের সঙ্গে যারা আন্দোলনে ছিলেন-আছেন, তাদের সঙ্গেও আমরা আলোচনা করবো। আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নেব।

বিবিসি বাংলা: অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন যে, তারা কিছু সংস্কার কাজ করতে চান এবং সেই সংস্কার কাজগুলো শেষ হলে তখন তারা একটা নির্বাচনে যাবেন। তো আপনারা কি অপেক্ষা করতে রাজি আছেন সংস্কার কাজ শেষ করা পর্যন্ত?

বিএনপি মহাসচিব: আমরা আমাদের কথাগুলো স্পষ্ট করে বলে আসছি। বলেছি যে, উনি যতগুলো সংস্কারের মধ্যে হাত দিয়েছেন, অতগুলো সংস্কার করতে গেলে আপনার দশ বছরের মধ্যেও শেষ হবে না। আর সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া। দু’বছর আগে রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা দিয়েছি আমরা। তার মধ্যে এই বিষয়গুলি তো রয়েছে।

সংবিধান সংস্কারের বিষয় রয়েছে, জুডিশিয়াল কমিশনের কথা আমরা বলেছি, আমরা ইলেকশন কমিশনের কথা বলেছি, আমরা ব্যুরোক্রেসি সংস্কারের কথা বলেছি ৩১ দফায়, আমরা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের কথা বলেছি -এগুলো আমাদের সমস্ত বলা আছে। এখন সেক্ষেত্রে তারা যেটা করেছেন, সেটা কী রিপোর্ট নিয়ে আসছে আমরা জানি না।

যদি রিপোর্টগুলোয় দেখা যায় যে, আমাদের সঙ্গে মিলে গেছে, তাহলে তো কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু যেগুলো মিলবে না, সেগুলো তো একটা ন্যূনতম কনসেনসাস হতে হবে। তারপরে সেটা হতে হবে।

আরেকটা বিষয় হচ্ছে, আপনি সংস্কার দিলেন, কিন্তু সেটাকে আপনার অ্যাপ্রুভ করবে কে? তার জন্য তো আইনগত যাদের অধিকার আছে, তারাই করতে পারবে। দ্যাট ইজ পার্লামেন্ট।

পার্লামেন্ট ছাড়া কিন্তু কোনো সাংবিধানিক সংস্কার কঠিন হবে। এমনকি অন্যান্য বিষয় কতগুলা আছে, যেগুলা আপনার সংবিধানে কিছু কিছু পরিবর্তন আনার দরকার আছে। কিন্তু সেগুলা পার্লামেন্ট ছাড়া সম্ভব না। সেজন্যই আমরা মনে করি, দ্য সুনার দ্য ইলেকশন ইজ বেটার।

বিবিসি বাংলা: আপনি কি মনে করেন যে, নির্বাচিত সরকার আসার আগ পর্যন্ত এ ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়ে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের যাওয়া উচিৎ হবে না বা তারা যেতে পারে না?

বিএনপি মহাসচিব: যাওয়া উচিৎ হবে না আমরা বলছি না। কিন্তু যেতে তারা পারবেন না এজন্যে যে, সব দলের কনসেনসাস না হলে কোনোটাই যাওয়া তাদের ঠিক হবে না।

বিবিসি বাংলা: এই সরকারের মেয়াদ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে এবং নির্বাচন পর্যন্ত তো এই সরকারের মেয়াদ থাকবে, এটাই সবার ধারণা।

বিএনপি মহাসচিব: যদি সরকার পূর্ণ নিরপেক্ষতা পালন করে, তাহলেই তারা নির্বাচন কনডাক্ট করা পর্যন্ত থাকবেন। তা না হলে তো নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে।

বিবিসি বাংলা: আপনার কি ধারণা যে, এই সরকারের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসতে পারে?

বিএনপি মহাসচিব: নিরপেক্ষতার প্রশ্ন আসতে পারে। কেননা, এখানে আমরা জিনিসটা লক্ষ্য করছি যে, আপনার ছাত্ররা তারা একটা রাজনৈতিক দল তৈরি করার কথা চিন্তা করছেন। সেখানে যদি ছাত্রদের প্রতিনিধি এই সরকারে থাকে, তাহলে তো নিরপেক্ষ থাকতে পারবে না। ওইটা হচ্ছে, সম্ভাব্য কথা। কিন্তু যদি তারা মনে করে যে, (সরকারে) থেকেই তারা নির্বাচন করবেন, তাহলে তো রাজনৈতিক দলগুলো মেনে নেবে না।

বিবিসি বাংলা: আপনার কি মনে হয়, সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে এখন কোনো প্রশ্ন তৈরি হয়েছে?

বিএনপি মহাসচিব: এখন কোনো প্রশ্ন নেই। আমাদের কাছে কোনো প্রশ্ন নেই।

বিবিসি বাংলা: পাঁচই অগাস্টের পর যখন অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের কথা হচ্ছিল, সে আলোচনায় আপনারাও ছিলেন। সেই আলোচনার ভিত্তিতে পরে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। যথন এই অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের মেয়াদকাল কী হবে, সেটা নিয়ে আপনাদের সাথে কোনো কথা হয়নি?

বিএনপি মহাসচিব: না। তখন তো ইলেকশন দ্রুত করার কথাই হয়েছে। দ্রুত ইলেকশন করার কথাই হয়েছে।

বিবিসি বাংলা: দ্রুত বলতে কত সময়? কোনো ধারণা, সময়সীমা- এ ধরনের কিছু নিয়ে কথা হয়নি?

বিএনপি মহাসচিব: না, সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। তখন তো সেই সুযোগ ছিল না।

বিবিসি বাংলা: তো অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের পর আপনি নিজেই বলেছিলেন যে, এই সরকারকে আপনারা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।

বিএনপি মহাসচিব: করছি।

বিবিসি বাংলা: এটা এখনও অব্যাহত আছে?

বিএনপি মহাসচিব: অব্যাহত আছে। উনারা যখনই ডাকেন, তখনই আমরা যাই, কথা বলি। না ডাকলে তো যাওয়া যায় না, তারপরও আগ বাড়িয়েও কথা বলি। আমরা যেগুলো মনে করি যে, এগুলো করা উচিৎ, সেগুলো তাদেরকে আমরা জানাই। অ্যান্ড উই আর কোঅপারেটিভ। এখন পর্যন্ত সরকারের বিরুদ্ধে কিন্তু কোনো আন্দোলনও করিনি, কথাও বলি না কোথাও। তবে দু-একটা ভুল-ত্রুটি তো দেখিয়ে দিতেই হয়।

বিবিসি বাংলা: শুরু থেকে আপনাদের সাথে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের যে সম্পর্কটা ছিল, এখনও কি তাই আছে? নাকি এখানে কোনো দূরত্ব তৈরি হয়েছে?

বিএনপি মহাসচিব: আমরা মনে করি যে, তাই আছে।

বিবিসি বাংলা: সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে প্রায়ই সময় একটা বিষয় বলা হয় যে, তারা যে সংস্কার কাজগুলো করছেন বা করতে চাচ্ছেন, তার একটা উদ্দেশ্য হচ্ছে- যে ধরনের একনায়কতান্ত্রিক বা স্বৈরাচারী সরকার তৈরি হয়েছিল, সে ধরনের একনায়কতান্ত্রিক ব্যবস্থা যাতে বাংলাদেশে আর তৈরি না হয়। আপনার কি মনে হয়, এর দ্বারা আপনাদের দিকে ইঙ্গিত করা হয়?

বিএনপি মহাসচিব: কোনোমতেই না। কারণ আমরা কখনই স্বৈরতান্ত্রিক ছিলাম না। আমরা সবসময় গণতন্ত্রের পক্ষে ছিলাম। এখানে মাল্টিপার্টি ডেমোক্রেসি আমরাই নিয়ে আসছি। একদলীয় শাসনব্যবস্থা শেখ মুজিবের, সেখান থেকে ট্রানজিশন টু মাল্টিপার্টি সিস্টেম তো জিয়াউর রহমান সাহেব করেছেন। গণমাধ্যমকে মুক্ত করা, আমরাই করেছি। আপনার পার্লামেন্টারি ডেমোক্রেসি তো আমরাই নিয়ে আসছি। কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট সিস্টেম আমরাই চালু করেছি। আপনি প্রত্যেকটাই দেখেন। সুতরাই প্রশ্নই উঠতে পারে না। আমাদেরকে কেউ স্বৈরাচারী আঙুল তুলবে এ কথা আমরা কখনই মেনে নিতে পারবো না।

বিবিসি বাংলা: বা ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের সুযোগ তৈরি না হয়।

বিএনপি মহাসচিব: প্রশ্নই আসে না। দলটিই তো আমাদের ওইরকম না। আমাদের দলটিই তো গণতান্ত্রিক দল। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। ইউ হ্যাভ অলওয়েজ ট্রাইড টু প্রাকটিস ডেমোক্রেসি। আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি। ১৫ বছর আমরা লড়াই করলাম এই গণতন্ত্রের জন্য, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য। খালেদা জিয়া প্রায় ছয়টা বছর তিনি কারা অন্তরীণ ছিলেন এই মামলার জন্যে, এই গণতন্ত্রের জন্যে। এবং আমাদের তারেক রহমান সাহেব এখনও বিদেশে আছেন। আমাদের প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। আমাদের প্রায় সাতশত মানুষ গুম হয়ে গেছে। আমাদের হাজার হাজার লোক খুন হয়েছে- গণতন্ত্রের জন্যে। এদেশের মানুষ স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছিল গণতন্ত্রের জন্যে। সুতরাই আমাদের দলে সেই প্রশ্নই উঠতে পারে না। ডেমোক্রেসির চ্যাম্পিয়ন বলতে পারেন আমাদেরকে আপনি।

বিবিসি বাংলা: আপনি সংস্কার কমিশনের কথা বলছিলেন। যে সংস্কার কমিশনগুলো গঠন হয়েছে, তার মধ্যে কয়েকটি এরই মধ্যে প্রতিবেদন দিয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সংবিধান সংস্কার কমিশন, আপনি এটার কথা বলছিলেন। সেই প্রস্তাবে কয়েকটি বিষয় এসেছে, তার মধ্যে একটি বড় বিষয় যদি বলি যে, মূলনীতি পরিবর্তনের একটি প্রস্তাব আছে। সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র বাদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, বহুত্ববাদ আনার কথা বলা হয়েছে। এটা নিয়ে আপনার মতামত কী?

বিএনপি মহাসচিব: আমরা এ বিষয়ে এখনই কথা বলবো না। আমাদের পার্টিতে একটা কমিটি তৈরি করা হয়েছে। সেই কমিটি অ্যানালিসিস করছে। এটা করার পরে আমাদের বক্তব্যটা আমরা পাবলিকলিই নিয়ে আসবো।

বিবিসি বাংলা: সেটা কবে?

বিএনপি মহাসচিব: দ্রুত, খুব দ্রুত। আর এটা তো খসড়া।

বিবিসি বাংলা: দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের একটা প্রস্তাব এসেছে।

বিএনপি মহাসচিব: এই প্রস্তাব তো দিয়েছি আমরাও।

বিবিসি বাংলা: প্রস্তাবে যেভাবে দ্বিকক্ষের কথা হলা হয়েছে যে, নিম্নকক্ষ থাকবে নির্বাচনের ভিত্তিতে যেটি হয় এবং উচ্চকক্ষ আনুপাতিক ভোটের হিসেবে। আপনারা এটার সাথে একমত?

বিএনপি মহাসচিব: না, আমরা সেখানে একমত না। আমাদের ভিন্ন প্রস্তাব আছে, সেটা আমরা আলোচনার মাধ্যমে দেখবো।

বিবিসি বাংলা: আমরা এর মধ্যে দেখেছি যে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের বেশকিছু দাবি বিভিন্ন সময় তুলেছিল, যেগুলো আপনারা বিরোধিতা করেছেন বা বাধার মুখে হয়নি। যদি কয়েকটি উদাহরণ দিই, যেমন- রাষ্ট্রপতি অপসারণের কথা, জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দেওয়ার কথা এবং সম্প্রতি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের একটা ইস্যু এসেছে, যেটা আপনারা বিরোধিতা করেছেন। এ বিষয়গুলোতে আপনাদের আপত্তির কারণ কী?

বিএনপি মহাসচিব: (হাসি) আপত্তির কারণ খুব সঙ্গত কারণ। আমরা তো একটা সংবিধানের অধীনে আছি। রাষ্ট্রের যে সংবিধান, সেই সংবিধানের অধীনে আমরা আছি। এই সরকারও শপথ নিয়েছে সেই সংবিধানের অধীনে। সেখানে রাষ্ট্রপতিকে যে অপসারণ করবে, সেটা কে করবে? এটা এক। দুই নম্বর হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি আনবেন কাকে? তিন নম্বর হচ্ছে, এটার লেজিটেমেসি কার হাতে থাকবে? পার্লামেন্ট নাই। সুতরাং ওই প্রশ্নটাকে আমরা মনে করি যে, অবাস্তব প্রশ্ন। আর যেখানে ওটা কোনো ক্রাইসিস ছিল না। ওই ধরনের কোনো ক্রাইসিস তৈরি হয়নি। সেটা আমরা মনে করেছি, এটা ক্রাইসিস তৈরি করা নতুন করে। আমাদের সামনে এখন একটাই মূল সমস্যা, সেটা হচ্ছে যে, আপনি নির্বাচন অতিদ্রুত করে ফেলা, একটা নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দেওয়া। এটা তো আপনার এসেন্স অব ডেমোক্রেসি।

এটা গেল এক। আপনার আরেকটি প্রশ্ন হচ্ছে, জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র। এটা নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনাও করা হয়নি আগে, আমরা জানিও না এটা। আর (অভ্যুত্থানের) পাঁচমাস পরে এই ডিক্লারেশনের কোনো যুক্তি আছে কি-না? এটা কি আপনার সরকারি কর্মকর্তাদের চাকুরি ফিরিয়ে দেবার মত ব্যাপারটা? যেটা হয়েছে-হচ্ছে যে, যাদেরকে অপসারণ করা হয়েছিল ওই সরকারের আমলে, এখন আবার তারা ফেরত পাচ্ছে? এটা তা না। এটা একটা অভ্যুত্থান, একটা আন্দোলন। সেই আন্দোলনের ডিক্লারেশন তখনই হওয়া উচিৎ ছিল। এটা ছাত্ররা তারা দিতেই পারে। কিন্তু আমরা ওটার পার্ট তখনই হবো, যখন গোটা জাতির প্রশ্নটা আসবে তার মধ্যে, টোটাল জিনিসটা। কোনো আলোচনা না করেই তো আমরা এটা করতে পারি না। প্রশ্নই উঠতে পারে না।

বিবিসি বাংলা: তো যে বিষয়টা তারা বলছেন যে, এটা একটা অভ্যুত্থান হয়েছে, একটা বিপ্লব হয়েছে এবং তারা সেখানে নেতৃত্বে ছিলেন। তারা এখন সেটি (ঘোষণা) দিতে চান।

বিএনপি মহাসচিব: দিতেই পারেন। ছাত্র হিসেবে তারা দিতেই পারেন। জাতি হিসেবে এবং পার্টি হিসেবে তো আমরা সেটার মধ্যে থাকতে পারি না। আমাদের ন্যারেটিভ আছে। ১৫ বছর আমরা লড়াই করেছি, সংগ্রাম করেছি। আমাদের এসব বিষয়গুলো এখানে থাকবে। এর আগে, সাতই নভেম্বরের বিষয়গুলো সেখানে আসতে হবে, নব্বইয়ের গণআন্দোলন সেখানে থাকতে হবে-এগুলো তো থাকতে হবে। আর একাত্তর হচ্ছে আমাদের অস্তিত্ব, মুক্তিযুদ্ধ। সেই বিষয়গুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে চব্বিশকে একমাত্র গুরুত্ব দেওয়ার কথা আসতে পারে না।

বিবিসি বাংলা: আপনি বলছিলেন যে, একাত্তরের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না।

বিএনপি মহাসচিব: আমি এর আগেও বলেছি। আমার কাছে কেন জানি মনে হয় যে, একটা পক্ষ একাত্তরকে একটু পেছনে রাখতে চায়।

বিবিসি বাংলা: কারা?

বিএনপি মহাসচিব: আছে কিছু হয়তো। তারা চেষ্টা করছেন। এটা আমার মনে হচ্ছে। আমি এক্সাক্টলি আপনাকে ঠিক বলবো না, বলতে পারবো না। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, একাত্তরকে পেছনে ফেলার একটা চিন্তা-ভাবনা কারো কারো মধ্যে থাকতে পারে।

বিবিসি বাংলা: এতে কী সুবিধা হবে, একাত্তরকে যদি পেছনে ফেলা হয়?

বিএনপি মহাসচিব: যাদের সুবিধা হবে, সেটা আপনারা জানেন সবাই। আমি রিপিট করেতে চাই না।

বিবিসি বাংলা: জুলাই অভ্যুত্থানের বিষয়ে বলি। যখন নির্বাচনে কথা আসে, তখন ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে যে, নির্বাচনের জন্য জুলাই অভ্যুত্থান হয়নি। আপনাদের নির্বাচনের দাবির বিপরীতে জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিটের কথাও প্রায়সময় বলা হয়। তো এই বিষয়টিকে আপনারা কীভাবে দেখেন?

বিএনপি মহাসচিব: আমাদের খুব পরিষ্কার করে বলা আছে, ভাই। আমরা আন্দোলন করছি, রাজনৈতিক দল করছি, দেশে একটা ডেমোক্রেটিক সেটআপের জন্য, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠান জন্যে। আর গণতন্ত্রে ঢোকার প্রথম ধাপটিই হচ্ছে, নির্বাচন। যেহেতু তিন তিনটি নির্বাচন আওয়ামী লীগ সরকার নষ্ট করে দিয়েছে, জনগণ ভোট দিতে পারেনি। আমার ভোটের অধিকারটা তো প্রথম অধিকার নাগরিক হিসেবে। আমি এই দেশের মালিক। আমার একমাত্র হাতিয়ার হচ্ছে, আমার ভোটটা। সেটাই তো আমরা দিতে পারিনি। সুতরাং নির্বাচন চায় না বা নির্বাচন প্রধান নয়- এ কথা চিন্তা করাও তো ভুল। নির্বাচনটা আমরা মনে করি প্রধান। কারণ এই নির্বাচনের মাধ্যমেই আমি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যেতে পারবো। আমি গণতান্ত্রিক সংবিধানের পরিবর্তনগুলো আনতে পারবো। গণতান্ত্রিক একটা রাষ্ট্র আবার পুনঃনির্মাণ করতে পারবো। এছাড়া আমার বিকল্প কিছু নেই।

বিবিসি বাংলা: আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে আপনাদের একটা দ্বিমত দেখা গেছে।

বিএনপি মহাসচিব: না, এটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। মিডিয়া এটাকে একুট ভুলভাবে প্রচার করছে।

বিবিসি বাংলা: কোন জায়গাটায় ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে?

বিএনপি মহাসচিব: আমরা কিন্তু পরিষ্কারভাবে বলেছি যে, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারটা পুরোপুরি জনগণের ব্যাপার। জনগণ যদি চায় যে, তারা কোনো দলকে নিষিদ্ধ করবে, তাহলে তারা করতেই পারে। সেটা কীভাবে হবে? সেটা পার্লামেন্টে হতে পারে বা অন্য কোনো মাধ্যমে হতে পারে।

বিবিসি বাংলা: কিন্তু কীভাবে আপনি জানবেন যে, জনগণ চাইছে কি চাইছে না?

বিএনপি মহাসচিব: ভোটের মাধ্যমে সেটা জানা যাবে। ইলেকশনের মাধ্যমেই সেটা জানা যাবে। আমি একটা পলিটিক্যাল পার্টি। আমি তো আরেকটা পলিটিক্যাল পার্টিকে নীতিগতভাবে, জামায়াতে ইসলামীকে যখন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, আমরা প্রতিবাদ করেছি। আমরা নীতিগতভাবে কোনো রাজনৈতিক দলকে, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে রাজনীতি করে, তাদেরকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারটাতে আমরা কখনোই একমত হইনি। এটা আমরা বলেছি যে, জনগণ ডিসাইড করবে যে, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে-কি হবে না। এটা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে অনেক আমি জানি। কিন্তু এই বিতর্কের কোনো কারণ আমি খুঁজে পাই না।

বিবিসি বাংলা: আপনি বলছিলেন ভোটের মাধ্যমে সেটা জানা যাবে। তো আগামী নির্বাচনে কি তাহলে আওয়ামী লীগ…

বিএনপি মহাসচিব: সেটা আওয়ামী লীগ আসতে পারলে আসবে, না আসতে পারলে আসবে না। দ্যাটস নট মাই পয়েন্ট। এক্ষেত্রে আমাদের কোনো কথা নেই। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, কোন দল নির্বাচনে আসবে কি আসবে না, সেটা তো দলগুলো নিজেরাই ঠিক করবে। তখনকার সেটআপ ঠিক করবে, ইলেকশন কমিশন ঠিক করবে। আমরা কথাটা খুব পরিষ্কার করেই বলছি যে, আমরা মনে করি কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার দায়িত্ব আমাদের না। আমরা চাই যে, জনগণের মাধ্যমে সবকিছু নির্ধারিত হবে।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!