খুলনা, বাংলাদেশ | ২৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৪ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ২৪১
  কবি হেলাল হাফিজ আর নেই

রেকর্ড রান করেও হার, হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্ক

বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩–০ ব্যবধানে সিরিজ জিততে হলে সেন্ট কিটসে রান তাড়ার রেকর্ড গড়তে হবে, তা জেনেই নেমেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অভিষিক্ত আমির জাঙ্গুর অপরাজিত সেঞ্চুরি, কিসি কার্টির ৯৫ আর গুড়াকেশ মোতির ঝোড়ো ৪৪ রানে রেকর্ড গড়েই জিতল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের দেওয়া ৩২২ রানের লক্ষ্য স্বাগতিকেরা টপকে গেল ৪ উইকেট ও ২৫ বল হাতে রেখে!

এ জয়ে ১০ বছর পর বাংলাদেশকে ওয়ানডে সিরিজে ধবলধোলাই করল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সর্বশেষ ২০১৪ সালে মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বাধীন দল ক্যারিবীয়দের কাছে ৩–০ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ হেরেছিল। সেই সিরিজও হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজে।

সব মিলিয়ে বাংলাদেশ কোনো ওয়ানডে সিরিজে ধবলধোলাই হলো ৩ বছর ৯ মাস পর। এর আগে ২০২১ সালের মার্চে নিউজিল্যান্ড সফরে ৩–০ ব্যবধানে হেরেছিল তামিম ইকবালের নেতৃত্বাধীন দল।

আগে ব্যাট করতে নেমে চার ফিফটির সঙ্গে ৬ষ্ঠ উইকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং জাকের আলী অনিকের রেকর্ড পার্টনারশিপ বাংলাদেশকে এনে দেয় ৩২১ রানের বড় এক সংগ্রহ। বছরে প্রথমবার ৩০০ পেরুনো পুঁজি পেয়ে যায় টাইগাররা। সেই বড় পুঁজির মানসিক শক্তিতেই কি না শুরুর বোলিংটাও হলো দুর্দান্ত।

ইনিংসের ২য় ওভারেই উইন্ডিজ শিবিরে ধাক্কা দেয় বাংলাদেশ। নাসুম আহমেদের সেই ওভারে ১৪ রান এলেও শেষ বলে রানআউট হয়ে যান ব্রেন্ডন কিং। নিজের পরের ওভারেই ফের উইকেটের দেখা পান নাসুম। এবারে বোল্ড করেন অ্যাথানেজকে। স্টাম্প থেকে সরে এসে সুইপ করতে চেয়েছিলেন। তার ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে ফুল লেংথের বল সরাসরি স্টাম্পে।

অধিনায়ক শেই হোপ টিকতে পারেননি বেশি সময়। হাসান মাহমুদের করা অফ স্টাম্পের বাইরে বলে হিট করতে সময়ের গড়বড় করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক। ফলাফল- প্রথম স্লিপে ক্যাচ দিলেন সৌম্য সরকারকে। ৩১ রানেই নেই উইন্ডিজদের ৩ উইকেট।

শেরফাইন রাদারফোর্ড এই সিরিজে স্বাগতিকদের ত্রাতা হয়ে উঠেছেন। এই ম্যাচে তাকে খুব একটা বাড়তে দেননি তাসকিন। । ইনিংসের ১৫তম ওভার করতে আসা তাসকিন শর্ট ডেলিভারি করেছিলেন। ছক্কা মারার আশায় পুল করতে গেলেন রাদারফোর্ড। কিন্তু ধরা পড়লেন তানজিদ হাসান তামিমের হাতে। ক্রিজে আসেন নবাগত আমির জাঙ্গু।

এখান থেকেই মূলত উইন্ডিজের ভরসা জাগানো জুটির শুরু। কেসি কার্টি কদিন আগেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে ছিলেন দুর্দান্ত। বাংলাদেশের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে তুলে নিলেন ফিফটি। সুযোগ বুঝে চড়াও হয়েছেন। অভিষিক্ত আমির জাঙ্গুকে কিছুটা ভরসাই জোগালেন যেন। ইংল্যান্ড সিরিজে ছিল একটি সেঞ্চুরি। আজও ছুটছিলেন সেই পথে।

দুজনের জুটি যোগ করেছে ১৩২ রান। শুরুর দিকে কিছুটা ধীরে খেলতে থাকা আমির জাঙ্গুও একপর্যায়ে চড়াও হন বাংলাদেশের বোলারদের ওপর। ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে এসেই পেয়েছেন ফিফটি। সেটাকে অবশ্য পরে টেনেছেন অনেকটা দূর। ৩৪তম ওভারেই ফিরতে পারতেন। রিশাদের সেই ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি লাইনে তার সহজ ক্যাচ নিতে পারেননি পারভেজ ইমন।

পরের বলেই অবশ্য দারুণ এক ক্যাচে কেসি কার্টিকে ফেরান সৌম্য সরকার। বোলার সেই রিশাদই। ৯৫ রানে থামে তার ইনিংস। রস্টন চেজকে বেশি সময় ক্রিজে থাকতে দেননি রিশাদ। এবার নিজের বলে নিজে অসামান্য এক ক্যাচ নিয়ে বাংলাদেশকে ব্রেকথ্রু এনে দেন এই লেগি। গুদাকেশ মোতিকে নিয়ে এরপর শেষটা করেছেন আমির জাঙ্গু।

মোতি নিজেও খেলেছেন নিখুঁত ব্যাটারের মতো। ৩৫ বলেই ৫০ পার করে তাদের জুটি। জাঙ্গু পেয়েছেন দারুণ এক সেঞ্চুরি। ৭৯ বল খেলেই স্পর্শ করেছেন তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার। ৯০ রানের জুটি গড়েছেন গুদাকেশ মোতির সঙ্গে। মোতি অপরাজিত ছিলেন ৪৪ রানে। ক্যারিবিয়ানরা জয় পায় ৪ উইকেটে।

এর আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে ৯ রানে ২ উইকেট হারালেও বাংলাদেশকে টেনে নিয়েছেন দুই ব্যাটার সৌম্য সরকার এবং মেহেদি হাসান মিরাজ। দুজনেই খেলেছেন ব্যাটে বলে তাল মিলিয়ে। তাদের ব্যাটে আসে ১৩৬ রানের কার্যকরী এক জুটি। ফিফটির দেখা পেয়েছিলেন দুজনেই। যদিও কেউই সেঞ্চুরিতে পরিণত করতে পারেননি ইনিংস। সৌম্য থেমেছেন ৭৩ রানে। মিরাজের ব্যাটে এসেছিল ৭৭ রান।

চার ফিফটিতে বাংলাদেশের রেকর্ডগড়া সংগ্রহ

মাঝে ২৬ রানের ব্যবধানে মিরাজ সৌম্যর সঙ্গে ফিরে যান আফিফ হোসেনও। আরও একবার দলের ত্রাতা হয়ে এলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং জাকের আলী অনিক। দুজনের ব্যাটে জুটি আসে ১৫০ রানের। যা ৬ষ্ঠ উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি। জাকের ৫৭ বলে ৬২ এবং রিয়াদ অপরাজিত থাকেন ৬৩ বলে ৮৪ রান করে।

শেষ পর্যন্ত তাদের সেই জুটির সুবাদে বাংলাদেশ পায় ৩২১ রানের বড় পুঁজি।

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩২১/৫

(মাহমুদউল্লাহ ৮৪*, মিরাজ ৭৭, সৌম্য ৭৩, জাকের ৬২*; জোসেফ ২/৪৩, রাদারফোর্ড ১/৩৭, মোতি ১/৬৪)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪৫.৫ ওভারে ৩২৫/৬

(জাঙ্গু ১০৪*, কার্টি ৯৫, মোতি ৪৪*, রাদারফোর্ড ৩০; রিশাদ ২/৬৯, তাসকিন ১/৪৯, হাসান ১/৫২, নাসুম ১/৫৬)।

ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪ উইকেটে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: আমির জাঙ্গু।

ম্যান অব দ্য সিরিজ: শেরফান রাদারফোর্ড।

সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজের ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩–০ ব্যবধানে জয়ী।

খুলনা গেজেট/এইচ




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!