খুলনা, বাংলাদেশ | ২৯ কার্তিক, ১৪৩১ | ১৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  চার উপদেষ্টার আশ্বাসে ভোর ৪টায় হাসপাতালে ফিরলেন আহতরা
খুলনায় ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইনে বক্তারা

‘তরুণদের হাত ধরেই দেশ এগিয়ে যাবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক 

‘তরুণদের হাত ধরেই দেশ এগিয়ে যাবে। আজকে যারা তরুণ আগামীকাল তারা দেশ পরিচালনা করবে। তরুণরা অন্যকে জেতানোর জন্য নিজের অর্থ, শ্রম, নিজের মেধা সবকিছু বিসর্জন দিতে পারে। তরুণরা রাষ্ট্রকে জেতানোর জন্য, সমাজকে জেতানোর জন্য শেষমেষ নিজের জীবনটা পর্যন্ত দিয়ে দিতে পারে’।

রবিবার (১০ নভেম্বর) ইউএসএইডের অর্থায়নে ও ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের আয়োজনে খুলনায় অনুষ্ঠিত ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইনে এমন কথাই বললেন বক্তারা।

বক্তারা বলেন, একটি গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। সমাজের অসঙ্গতি ও বৈষম্য মূলত তৈরি হয় কথা বলার সুযোগ না থাকায়। দিনব্যাপী এই আয়োজনে অংশ নেন নাগরিক সমাজ, শিক্ষার্থীসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ।

এদিকে সকালে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হয় ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইন। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের রিজিওনাল ম্যানেজার রুবাইয়াত হাসান। পরে ক্যাম্পেইন নিয়ে সবাইকে অবহিত করেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল ঢাকা অফিসের সিনিয়র অফিসার আশরুপা হক চৌধুরী ও কমিউনিকেশন অফিসার সোহরাব হোসেন। একপর্যায়ে ক্যাম্পেইনটি নিয়ে শো-রিল প্রদর্শিত হয়। এরপর ভিডিও মেসেজ প্রতিযোগিতার জন্য উন্মুক্ত হয় বুথ।

বেলা ১১টায় শুরু হয় পলিসি ডায়ালগ। ‘নাগরিক সেবার মান উন্নয়নে তারুণ্যের প্রত্যাশা ও সুপারিশ’ শীর্ষক এই আলোচনায় অংশ নেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাস কমিউনিকেশন ও জার্নালিজমের বিভাগের ফ্যাকাল্টি সারা মোনামি হোসাইন, নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি খুলনার প্রভাষক মো. মতিউর রহমান এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিনিধি সাইফ নেওয়াজ।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাস কমিউনিকেশন ও জার্নালিজমের বিভাগের ফ্যাকাল্টি সারা মোনামি হোসাইন বলেন, ভালো নাগরিক হতে হলে সচেতন হতে হবে। তরুণদেরকে সব বিষয়ে সচেতন হতে হবে। রাজনীতি, অর্থনীতি, ব্যবসা সবকিছুতেই। কারণ আমি যদি সচেতন না হই এবং আমার যদি গভীর জ্ঞান না থাকে তাহলে কোন পরিস্থিতিতে গভীরভাবে পর্যবক্ষেণ করা যেমন সম্ভব হয় না, তেমনি এটাকে গভীরভাবে আলোচনা করাও সম্ভব হয় না। ঘটনার গভীরে পৌছাতে হবে। সু-নাগরিক হওয়ার জন্য সেই ম্যাচুরিটি থাকা অবশ্যই উচিত। কারণ আজকে যারা তরুণ আগামীকাল তারা দেশ পরিচালনা করবে। তরুণদের স্বার্থের উর্দ্ধে থাকতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা ধরে নেই যে একটা চাকরি করবো, ভালো বেতন হবে। পরিবার পরিচালনা করতে পারবো। সামাজিক মর্যাদা হবে-এতোটুকুই। এখন ছেলে-মেয়েরা ভাবছে, রাজনীতিকে বোঝার চেষ্টা করছে, সেইভাবে কাজ করার চেষ্টা করছে। ভালো কিছু করার চিন্তায় আছে। তাদের জায়গায় থেকে যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করছে। এটা অবশ্যই পজেটিভ। সৎ, মানবিক ও দায়িত্বশীল এই তিনটা গুণ যদি না থাকে তাহলে দেশকে গড়ে তোলা সম্ভব না। তরুণ প্রজন্ম যেন সেই স্থানটা ধরে রাখতে পারে সেই প্রত্যাশা করি। তরুণদের হাত ধরেই দেশ এগিয়ে যাবে। দেশকে গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য অবশ্যই সচেতন ও সু-নাগরিক হওয়াটা জরুরী।

নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি খুলনার প্রভাষক মো. মতিউর রহমান বলেন, তরুণরা যতোটুকু জিততে চায়, তার থেকে বেশি জেতাতে চায়। তরুণরা যতটুকু নিতে চায়, তার থেকে বেশি দিতে চায়। তরুণরা অন্যকে জেতানোর জন্য নিজের অর্থ, শ্রম, নিজের মেধা সবকিছু বিসর্জন দিতে পারে। তরুণরা রাষ্ট্রকে জেতানোর জন্য, সমাজকে জেতানোর জন্য শেষমেষ নিজের জীবনটা পর্যন্ত দিয়ে দিতে পারে। তরুণরা জেতাতে চায়, তাই আমি মনে করে তরুণদের স্লোগান হওয়া উচিত আমিও জেতাতে চাই। সমাজে সেবাগুলো পাওয়ার জন্য যে প্রতিবন্ধকতা আছে, সেটা নির্মূল করার জন্য কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, তরুণরা কিন্তু দেখিয়ে দিয়েছে যখন কোন প্রশাসন থাকবে না, তখন নিজের সমস্ত কথা বাদ দিয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেছে। তরুণরা দায়িত্ব নিয়ে সেবাগুলো মানুষের কাছে পৌছে দিতে পারে। সমস্ত স্বার্থ বিলিয়ে দিয়ে তরুণরাই অসহায় মানুষদের পাশে দাড়িয়েছে। দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতিতে খুলনায় দেখেছি তরুণরাই বিনা লাভের দোকান দিয়েছে। নিজেকে পরিবর্তন করলে দেশ পরিবর্তন হবে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রতিনিধি সাইফ নেওয়াজ বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট রেজিমেন্টের বিরুদ্ধে ক্ষোভগুলো ছোট ছোট জায়গা থেকে শুরু হয়েছিল। আমরা কথা বলতে চেয়েছি, কিন্তু জায়গা খুঁজে পায়নি। বললেও কথাগুলো জায়গামতো পৌছায়নি কিংবা কাজ হয়নি। আমাদের ক্ষোভ বর্তমান রাজনীতিতে। আমাদের তরুণদের নিস্ক্রিয় ভূমিকা এটাই সবচেয়ে বড় কারণ বর্তমান যে প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে তার পেছনে। রাজনীতিতে কিছু নোংরা মানুষ ছিল, এ জন্য রাজনীতিকে আমরা নোংরা মনে করি। তরুণরা অধিকার নিয়ে কথা বলতে চায়, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা প্লাটফর্ম খুঁজে পেতো না। নাগরিক হিসেবে তাদের কথা বলা উচিত। আপনি যখন কথা বলবেন খারাপ মানুষগুলো আপনাকে ভয় পাবে। তরুণদের বিভিন্ন প্লাটফর্মে গিয়ে কথা বলতে হবে। প্রশাসন, পুলিশ, রাজনীতি প্রত্যেকটা সেক্টরে যদি তরুণ প্রজন্ম ও সৎ নাগরিক জায়গা নিতে পারে তাহলেই সম্ভব এই দেশকে পরিবর্তন করা।

বাজারের সবকিছুর দাম বেশি কেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ডিমের বাজার মাত্র ৫টা কোম্পানীর হাতে বন্দী। চাল ও চিনির আড়ত চারটা কোম্পানীর হাতে বন্দী। আমদানী করে আনতে এলসি করাটাও ৪ থেকে ৫টা ব্যাংকের হাতে বন্দী। এগুলো জানতে হবে, কথা বলতে হবে। প্রথম কথা জানতে হবে, দ্বিতীয় কথা ওই জায়গাটাতে যেতে হবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের রিজিওনাল ম্যানেজার রুবাইয়াত হাসান বলেন, প্রত্যেকে প্রত্যেকের প্রয়োজন অনুযায়ী দাবি তুলবো। তখন নীতি-নির্ধারকরা অর্থাৎ রাজনীতিবীদ, সেটা সরকারি দলে হোক আর বিরোধী দলে রাজনীতিবিদ আমাদের দাবিগুলো পূরণে যাতে তারা নিজেরা উদ্যোগী হয়। তারা যা চাচ্ছে সেটা শেষ কথা না, দেশের জনগন যা চাচ্ছে সেটাই শেষ কথা। কিছুদিন আগে সংবাদপত্রে দেখেছি কোন একটি দল জনগনের ভাষা বুঝতে পারছে না, এর থেকে ব্যর্থতার কিছু নেই। একটি রাজনৈতিক দল যদি তার দেশের জনগন ভাষা বুঝতে না পারে সেই রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকা উচিত না। জনগনের ভাষা রাজনীতিবিদদের বুঝতে হবে। সেই বোঝার প্লাটফর্ম হচ্ছে ‘আমিও জিততে চাই’। আজকের এই ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে আমরা খুলনার রাজনীতিবিদদের জানিয়ে দিতে চাই- আমরা কি চাই।

প্রায় এক ঘণ্টার আলোচনা শেষে অতিথিদের ক্রেস্ট প্রদান করেন এমএএফ এর সাধারণ সম্পাদক রেহানা ঈসা। এরপর শুরু হয় ইন্টারেক্টিভ থিয়েটার পারফর্ম্যান্স। পরে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা। শেষে সমাপনী বক্তব্য দেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের রিজিওনাল ম্যানেজার রুবাইয়াত হাসান।

ইউএসএআইডির স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ (এসপিল) প্রকল্পের আওতায় ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে দেশব্যাপী বিভিন্ন জেলা ও ক্যাম্পাসে নাট্য প্রদর্শনী, আলোচনা ও বিতর্ক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নাগরিক প্রত্যাশা তুলে ধরতে বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করছে। www.amiojittechai.com ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি দেশের নাগরিকদের বিভিন্ন দাবি, মতামত ও সমস্যার কথা তুলে ধরতে কাজ করছে।

খুলনা গেজেট/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!