অমাবস্যার কুন্তল কালো অন্ধকার ও হেমন্তের হীম বায়ুর মাঝে ঘন কুয়াশার সাদা চাদরকে ভেদ করে জ্যোতির্ময়ী আলোর আগমন। আজ বৃহস্পতিবার। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শ্যামা পূজা ও আলোর উৎসব দীপাবলি।
খুবির ৩৩ বছরের ইতিহাসে প্রথম শ্যামা পূজা উদযাপিত হবে বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতনী সাধারণ শিক্ষার্থীরাই এ পূজার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে আজ ৩১ অক্টোবর, (বৃহস্পতিবার) বিকাল ৪:০০ টায় প্রতিমা আনয়নের মধ্যে দিয়ে।এর পর সন্ধ্যা ৬ টায় আলোর উৎসব দীপাবলি। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন জায়গায় প্রদীপ প্রজ্বলন।রাত ৮:০০ টায় পূজার ঘটস্থাপন এবং রাত ৯:০০ টায় পূজারম্ভ। এছাড়াও থাকছে ০১ নভেম্বর (শুক্রবার) বিকাল ৫:০০ টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও রাত ৯:০০ টায় খিচুড়ি প্রসাদ বিতরণ।
সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব শ্যামা পূজা। প্রতিবছর কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে এ পূজার আয়োজন করা হয়।অমাবস্যার অন্ধকার ঠেলে মন্দির থেকে ভক্তের গৃহ কোণে আজ জ্বলে উঠবে সহস্র প্রদীপ। আলোয় আলোকিত হবে চারদিক। তাইতো এ পূজার আরেক নাম দীপাবলি বা দেওয়ালি। মূলত এই দিন সন্ধ্যায় পূর্বপুরুষ ও মৃত নিকটজন মঙ্গল কামনায় এবং অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যেতে প্রদীপ জ্বালানো হয়।
সনাতনী বিশ্বাস ও পুরাণ মতে দেবী শ্যামা দূর্গার একটি শক্তি এবং ১০ মহাবিদ্যার প্রথম মহাবিদ্যা।মার্কন্ডেয় পুরাণ অনুসারে, শ্রী শ্রী চন্ডীতে বলা আছে যে শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামে দুই দৈত্যের অত্যাচারে ভীত দেবতাগণ নিজেদের রক্ষা করতে ও সৃষ্টিকে বাঁচাতে আদ্যাশক্তির আরাধনা শুরু করেন। তখন আদ্যাশক্তির দেহকোষ থেকে আবির্ভূতা হন দেবী অম্বিকা। তিনি ঘোর কৃষ্ণবর্ণ হওয়ায় তার অপর নাম কালী। কালী পূজা বা শ্যামা পূজা হচ্ছে শক্তির পূজা। দেবী কালীর আরো অনেক রূপের মধ্যে রয়েছে দক্ষিণাকালী, সিদ্ধাকালী, ভদ্রা কালী, শ্মশান কালী, রক্ষা কালী ও মহাকালী। সনাতন বিশ্বাস অনুযায়ী শ্যামা হচ্ছেন অশুভ শক্তির বিনাশকারী দেবী।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম কালী পূজা ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্য, জাকজমকপূর্ণতা ও আড়ম্বরতা সাথে পালন হবে বলে আশা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য ডিসিপ্লিনের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সৌরভ রায় বলেন,”আমার জানামতে এবারই প্রথম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শ্যামা পূজার আয়োজন করা হয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মন্দিরে দেবীর মৃন্মময়ী প্রতিমা নির্মাণ করে পূজা করা হবে। মধ্যরাতে পূজার পাশাপাশি থাকবে অঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ, আরতি, ধর্মীয় সংগীত, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোকসজ্জাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি।”
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় মন্দির কমিটির সভাপতি ও পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনের প্রধান প্রফেসর ড. উত্তম কুমার মজুমদার খুলনা গেজেটকে বলেন, “খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতনী শিক্ষার্থীদের নিজ উদ্যোগে কেন্দ্রীয় মন্দিরে এই বছর প্রথম শ্যামা পূজার আয়োজন করে হয়েছে। ধর্মীয় উৎসব হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সকল ধরনের নিরাপত্তা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করবে। এ পূজা আয়োজনের মাধ্যমে আমরা এই বার্তা দিতে চাই যে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস একটি ধর্মীয় সম্প্রীতির ক্যাম্পাস।”
খুলনা গেজেট/এনএম