বাদাম প্রায় সবাই পছন্দ করেন। রোদ-বৃষ্টি কিংবা যেকোনো আড্ডায় বাদাম ছাড়া চলেই না আমাদের। আবার লোকাল বাস-ট্রেনের জার্নিতে তো বাদাম আমাদের প্রথম সঙ্গী। কেউ কেউ আবার পার্কে, নদীর পাড়ে কিংবা একাকি পথ চলায়ও বাদাম চিবাতে থাকেন। অনেক সময় মুড়ির সঙ্গে মাখিয়েও খাওয়া হয় বাদাম।
বর্তমান সময়ে স্বাস্থ্যসচেতনরা শরীর ভালো রাখতেও বাদাম খেয়ে থাকেন। আর বাদামের মতো এমন উপকারী খাবার নিয়েও অনেকের মনে ভুল ধারণা রয়েছে। অনেকেই বলে থাকেন, নিয়মিত বাদাম খাওয়ার ফলে নাকি উপকার মিলে না। কেউ কেউ বলেন, বাদাম খাওয়ার ফলে এক ধাক্কায় অনেকটাই ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু আসলেই কী তাই?
সম্প্রতি বাদাম খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন কলকাতা শহরের বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ কোয়েল পাল চৌধুরী। এবার তাহলে বাদাম খাওয়া নিয়ে তার পরামর্শ জেনে নেয়া যাক।
পুষ্টিগুণে সেরা বাদাম: বাদামকে বলা হয় পুষ্টির খনি। এতে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন ও ফ্যাট রয়েছে। পাশাপাশি আয়রন, ভিটামিন বি৬, মাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ খনিজ থাকে। এ কারণে বাদাম খাওয়ার ফলে শরীরে পুষ্টির ঘাটতি মিটে যায়। এছাড়াও বাদামে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। যা হার্ট ও ব্রেনের জন্য উপকারী।
বাদাম কি আসলেই ওজন বাড়ায়: এ ব্যাপারে পুষ্টিবিদ কোয়েল বলেন, বাদাম অত্যন্ত উপকারী উপাদান। যা নিয়মিত খাওয়ার ফলে শরীরের অনেক উপকার হয়ে থাকে। তবে মনে রাখতে হবে, বাদামে কিছুটা ফ্যাট রয়েছে। বিশেষ করে চিনা ও কাজু বাদামে এর পরিমাণ বেশি। এ জন্য এই জাতীয় বাদাম অতিরিক্ত খাওয়া হলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার কেউ নিয়ম মেনে পরিমিত পরিমাণে বাদাম খান, তাহলে শরীরের জন্য ভালো।
কী পরিমাণ খেতে হবে: যেকোনো ধরনের বাদাম মুঠো মুঠো খাওয়া ঠিক নয় বলে জানিয়েছেন পুষ্টিবিদ কোয়েল। তিনি বলেন, প্রতিদিন অল্প পরিমাণ করে বাদাম খাওয়া ভালো। সর্বোচ্চ ৫০ গ্রাম পরিমাণ খাওয়া যেতে পারে। কোনো নির্দিষ্ট এক ধরনের বাদাম খাওয়ার পরিবর্তে কয়েক ধরনের বাদাম মিশিয়ে খেতে পারেন। যেমন চিনাবাদম, কাজুবাদাম, আমন্ড, ওয়ালনাট ইত্যাদি মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে না। বরং আরও বেশি উপকার মিলে।
লবণযুক্ত বাদাম নয়: লবণযুক্ত বাদাম কিংবা খাওয়ার সময় লবণ মিশিয়ে খাওয়া ঠিক নয়। যদিও এভাবেই বিক্রি করা হয় বাদাম। এভাবে নিয়মিত বাদাম খেলে শরীরের অনেক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। কেননা, লবণে সোডিয়াম রয়েছে। ফলে শরীরে পানি ধরে রাখে। এ থেকে অল্প সময়ের মধ্যে প্রেশার বেড়ে যায়। আবার কিডনির ভয়াবহ ক্ষতিও হয়। এ জন্য চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব লবণসমৃদ্ধ বাদাম এড়িয়ে চলার। একইসঙ্গে তেলে ভাজা বাদামও এড়িয়ে চলুন। বরং বালিতে ভাজা বাদাম খাওয়ার অভ্যাস করুন। তাতেই মিলবে উপকার।
গ্যাস-অ্যাসিডিটিতে সতর্কতা: বেশি পরিমাণে বাদাম খাওয়া হলে গ্যাস-অ্যাসিডিটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে যাদের আইবিএস, আইবিডি কিংবা অন্যান্য গ্যাসট্রাইটিস রয়েছে, তাদের সতর্ক থাকতে হবে। তা না হলে পেটের সমস্যা হতে পারে। এ জন্য বাদাম খাওয়ার আগে অবশ্যই বুঝেশুনে খেতে হবে।
খুলনা গেজেট/এনএম