খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ কার্তিক, ১৪৩১ | ২৫ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ১১২৯
  সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিন্ধান্ত
  তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে তিন রিভিউ আবেদনের শুনানি ১৭ নভেম্বর

আবেগঘন স্ট্যাটাস ছাত্রলীগের হাতে নির্যাতিত কুয়েট ছাত্রের

একরামুল হোসেন লিপু

২০২২ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটুক্তির মিথ্যা অভিযোগ ও শিবির সন্দেহে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)’র ইলেকট্রনিক্স এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র জাহিদুর রহমান। ঘটনার দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ১০ থেকে ১৫ জন সন্ত্রাসী জাহিদুর রহমানকে ড. এম এ রশিদ হলের ১১৫ নম্বর কক্ষে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করে। শুধু তাই নয় নির্যাতনের পর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা তাকে শেখ হাসিনা সরকারের তৎকালীন আজ্ঞাবহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় কুয়েটে ছাত্রদের মধ্যে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর অপরাধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মিথ্যা মামলা দায়ের করে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং হল প্রভোস্ট ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের হাত থেকে সেদিন তাকে রক্ষা না করে উল্টো মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেয়।

বুধবার (২৩ অক্টোবর) রাতে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের সংবাদ দেখে জাহিদুর রহমান তার ফেসবুক আইডিতে কারাগারে থাকার দিনগুলির কথা স্মরণ করে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন। স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য নীচে হুবহু তুলে ধরা হলো।

জাহিদুর রহমান তার ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লিখেছেনঃ “কারাগারের দিনগুলোর কথা আজ খুব মনে পড়ছে। শুধু শুধু নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের পদের নেশায় ৭/৮ ঘন্টা পাশবিকভাবে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে দিয়ে দিল!
আজকের এই দিনের আনন্দ প্রকাশ করার ভাষা জানা নেই তবুও কিছু কথা!
কারাগারে সারাদিন কান্না কাটি করতাম। প্রথম দিকের দিনগুলো কান্না করতে মাথা ব্যাথায় ঘুমাইতাম। আবার ঘুম থেকে উঠে কান্না করতাম। আর ঘড়ির দিকে তাকাই থাকতাম। প্রথম এক সপ্তাহের ঘুম বাদে দিন এবং রাতের বেশীর ভাগ সময় ঘড়ির কাঁটার প্রতিটা সেকেন্ড যেন চোখের সামনে দিয়ে যেত!

যেদিন বাসায় ফোন করতাম ঐদিন সবচেয়ে বেশী কান্না করতাম। একদিন কারাগারের সাক্ষাৎ রুমে ভাই এসে বলল বাসায় ফোন দিলে যদি কান্না কাটি না করতে পারছ তাহলে ফোন দিছ। মা’কে বাঁচতে দে। তোর চেয়ে বেশী চিন্তায় আছি মা’কে নিয়ে। কারও সাথে কথা বলে না, খায় না, বাঁচে না মরে যায় সবাই চিন্তিত। তোর তো যা হইছে, এখন মাকে বাঁচতে দে।
তারপর থেকে একটা অদৃশ্য আতংকের মাঝে দিনগুলো পার হতো। কখন না যেন মা মারা যায়! শেষ বার মা’কে আর দেখার সুযোগও হয়ত হবেনা!
হাজিরার তারিখে বাবা খুলনা আসল কোর্টে দেখা করতে। আমার সামনে হাঁসি খুশী সাহস জোগাচ্ছে। কিন্তু আঁড়ালে গিয়ে কান্না করতেছে।আমাকে বুঝতে দিচ্ছে না!
কারাগারের প্রিজন সেলে বড় ভাই Naeeim Islam এর যে অসহায়ত্ব কান্নার আহাজারি দেখলাম তা কোন ছোট ভাই যেন আর না দেখে!
ছোট বোন বেশীরভাগ সময় নাকি জায়নামাজ নিয়ে পড়ে থাকত। আর কান্না করত!

যেদিন প্রিজন সেল থেকে এরেস্ট করে নিয়ে যায় সেদিন ছোট মামা Raju Khan অনেক কষ্টে কান্না লুকাচ্ছে আর সাহস দিচ্ছে আমাকে।আমার যে ছোট মামা তাঁকে কখনও কাঁদতে দেখিনি। আমার জামিন না মঞ্জুর হওয়ার পর হাউমাউ করে কারাগারের সাক্ষাৎ রুমের কান্নায় আমার সাথে কোন কথায় আর সেদিন বলতে পারেনি।
মামার কান্না দেখে সেদিন কারাগারে এত বেশী কান্না করছি, বাকী কয়েদি ও হাজতীরা অবাক হইছে!

আমার বড় ভাই, খালাতো ভাই Afsan Ullah Rishad ও চাচা Md Ziadul Islam অপরিচিত খুলনায় কত জনের কাছে যে দৌঁড়াদৌঁড়ি করছে বৃষ্টির মধ্যে ভিজে ভিজে। যেন আমার নামে মামলাটা না করে।
অপরিচিত এই খুলনা শহরে আল্লাহ সাহায্যের জন্য একটা পরিবারও মিলিয়ে দিলেন। এই পরিবার আমার জন্য কত চেষ্টা করে যাচ্ছে গত ২ বছরে।

জেল থেকে জামিনে বের হওয়ার পর শুনি আমার নানা সারাদিন মসজিদে পড়ে থাকত আর কান্না কাটি করত। এলাকার মানুষরা নাকি বলত নাতির জন্য কান্না করতে করতে নানা মারাই যাবে।

জামিনে বের হওয়ার পর বাসায় যে কয়দিন ছিলাম কি ছলছল চোখে তাকিয়ে আমার গায়ে হাত বুলাতে থাকত।আর আমার সাথেই থাকত যেন নানার বিশ্বাসই হচ্ছে না আমি জীবিত আছি এবং জেলের বাহিরে। কিছুক্ষণ পরপরই ওরে ভাইরে বলে চোখে পানি ছলছল কান্না করত আর শোক প্রকাশ করত!
আরও কত অজানা আতংকের দীর্ঘশ্বাস এর রজনী ও গল্প আছে আমার আত্মীয় স্বজনেরও পরিচিত, অপরিচিত মানুষ জনের সাথে।

এমনও হইছে কোথাও দেখা হইছে প্রথমবার কারও সাথে শুধু শুনছে আমি কুয়েটের জাহিদুর, জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিত আর শোক প্রকাশ করত!
এমন কতো গল্প এই ২ বছরে জীবনে যোগ হলো। হাজারো শহীদদের প্রাণের বিনিময়ে নতুন স্বাধীন বাংলাদেশে আল্লাহ আজ এই সন্ত্রাসীদের সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে লাঞ্চনা ও বেইজ্জতির জীবন দিয়েছে। আল্লাহ আপনাদের কে জান্নাতের সবুজ পাখিদের অন্তর্ভুক্ত করুক।
আজ সবাইকে বলতে ইচ্ছে করছে আপনাদের চোখের পানির মূল্য আল্লাহ দিয়েছে।
এই হাজারো মজলুম ও তার আপনজনদের চোখের পানি ও আহাজারি আল্লাহ আজ কবুল করেছে!
আলহামদুলিল্লাহ”।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!