আড়ংঘাটা থানাধীন তেলিগাতী-কুয়েট সড়কের উত্তরপাশে একই বাউন্ডারির ভেতর অবস্থিত খুলনা কারিগরি এবং মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। কেন্দ্র দু’টির অবস্থান মূল সড়ক থেকে প্রায় তিন ফুট নিচে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকলেও সেটা পর্যাপ্ত নয়। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে প্রতিষ্ঠান দু’টি বিশেষ করে মহিলা টিটিসি পানিতে তলিয়ে যায়। অভ্যন্তরীণ সড়কগুলির উপর হাঁটু সমান পানি জমে থাকে। বৃষ্টি থেমে গেলেও সড়কের পানি নিষ্কাশিত হতে বেশ কিছুদিন সময় লেগে যায়। ফলশ্রুতিতে প্রতিষ্ঠান দু’টির সহস্রাধিক প্রশিক্ষনার্থী, প্রশিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাঁটু সমান পানি এবং কর্দমাক্ত সড়ক দিয়ে চলাচল করতে হয়। ভারী বর্ষণে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় অনেক সময় প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমও বন্ধ রাখতে হয়। ব্যাহত হয় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম।
মহিলা টিটিসি’র ফুড এন্ড বেভারেজ ট্রেডের প্রশিক্ষণার্থী তামান্না আক্তার সাদিয়া খুলনা গেজেটকে বলেন, বৃষ্টির হলে হাঁটু সমান পানি ডিঙ্গিয়ে আমাদেরকে প্রশিক্ষণ নিতে হচ্ছে । বৃষ্টি শেষ হয়েছে বেশ কয়েকদিন আগে অথচ সড়কের উপর পানি এখনও জমে আছে। কর্দমাক্ত সড়ক দিয়ে প্রতিদিন আমাদের আসা যাওয়া করতে হচ্ছে। সড়কটি উঁচু করার জন্য আমরা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
একই ট্রেডের প্রশিক্ষণার্থী মেহেরুন্নেসা মিতা বলেন, প্রশিক্ষণের ব্যাপারে আমাদের কোন সমস্যা কিংবা অভিযোগ নেই। সুন্দর পরিবেশে আমরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। কিন্তু বিশুদ্ধ খাবার পানি এবং সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
কম্পিউটার ট্রেডের বৃষ্টি আক্তার বলেন, বৃষ্টি হলে প্রশিক্ষণ নিতে আসতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলি সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে। কর্তৃপক্ষের উচিত এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স ট্রেডের মেহেদী হাসান নাজমুল বলেন, সড়কে পানি জমে থাকা এবং কর্দমাক্ততার কারণে প্রশিক্ষণ নিতে আসা সবার দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ৫৩ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হচ্ছে অথচ সড়কগুলির বেহাল অবস্থা থেকেই যাচ্ছে। সড়কের কোন উন্নয়ন হলো না।
প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রশিক্ষনার্থীসহ সবার দুর্ভোগ পোহাতে হয়। মূল সড়ক থেকে প্রতিষ্ঠানটি নীঁচু হওয়ায় ভারী বর্ষণে পানির চাপ বাড়লে মহিলা টিটিসি’র নিজস্ব উদ্যোগে নির্মিত ড্রেন দিয়ে সঠিকভাবে পানি নিষ্কাশিত হতে পারে না। একসময় আমাদের প্রতিষ্ঠানটি তলিয়ে যায়, সড়কের উপর হাঁটু পানি জমে থাকে।
খুলনা টিটিসি’র প্লাম্বিং ট্রেডের শিক্ষার্থী রাব্বী, কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স ট্রেডের, গাজী ইমরান, একই ট্রেডের তাহমিদ হোসেনের মতো প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর অভিযোগ সড়কে পানি জমে থাকার আসা- যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সবার একই অভিযোগ প্রতিষ্ঠানটি আধুনিকায়ন হচ্ছে সড়কের বেহাল অবস্থা রেখে।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) সরজমিনে প্রতিষ্ঠান দু’টিতে প্রবেশের প্রধান ফটক অতিক্রমকালে দেখা যায় সোজা সড়কটিতে এখনও পানি জমে আছে আর বাম দিকের সড়টির উপর জমে থাকা পানি কিছুটা কমলেও সড়কটি সম্পূর্ণ কর্দমাক্ত চলাচলের অনুপযোগী। আভ্যন্তরীণ বাকি সড়কগুলোতেও পানি জমে আছে। নতুন প্রশাসনিক কাম একাডেমিক ভবন এবং ওয়ার্কশপগুলো ৫ ফুট উঁচু করার ফলে বৃষ্টি হলে সড়কগুলি আরো বেশি নিমজ্জিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
জনশক্তির কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালক (প্রশিক্ষণ পরিচালক) প্রকৌশলী মোঃ সালাহ উদ্দিন খুলনা গেজেটকে বলেন, কর্মসংস্থান বিনিয়োগ কর্মসূচির জন্য Skill For employment Investment Program(SEIP) প্রকল্পের এডিবি’র আর্থিক সহায়তা এবং কোরিয়ান কোম্পানি (কাইকোর) কারিগরি সহায়তায় খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের আধুনিকায়নের কাজটি সম্পন্ন হচ্ছে। SEIP প্রকল্পের কার্যক্রম ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে তাতে সমস্যা নেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সিসিএফ প্রকল্পের মাধ্যমে খুলনা টিটিসি’র সড়ক উন্নয়ন, গেস্ট হাউজ নির্মাণ, আবাসিক ভবনগুলো পুনঃনির্মাণসহ বাকি কাজগুলো দ্রুতই সম্পন্ন করার চেষ্টা করা হবে।
খলনা মহিলা টিটিসি’র ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ একেএম মনিরুল ইসলাম বলেন , প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ভারী বর্ষণে মহিলা টিটিসি পানিতে তলিয়ে যায়। সড়কগুলিতে হাটু সমান পানি জমে থাকে। প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষক, প্রশিক্ষনার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলাচলে দুর্ভোগ হয়। পানি জমে থাকায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ব্যাহত হয়। পানি জমে থাকা ভাঙ্গাচোরা কর্দমাক্ত সড়ক দিয়ে যাতায়াতের ফলে প্রতিষ্ঠানের গাড়িগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে কোটি টাকা মূল্যের প্রশিক্ষণ কারটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মহিলা টিটিসি’র সামনে পুরুষ টিটিসি’র নবনির্মিত ভবনগুলো ৫ ফুট উঁচু করায় ভারী বর্ষণে আমাদের আরো বেশি পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া তিনি আরও বলেন, পুরুষ এবং মহিলা টিটিসি’র প্রবেশপথ একটাই। মহিলা টিটিসি’র জন্য একটা স্বতন্ত্র গেট জরুরী।
খুলনা টিটিসি’র অধ্যক্ষ মোঃ জিয়াউর রহমান বলেন, SEIP প্রকল্প শেষ হলেও অ্যাডভান্সড সিসিএফ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সড়ক উন্নয়নসহ বাকি কাজগুলো সম্পন্ন করা হবে।
জানা যায়,২০২২ সালের ১৫ মে প্রতিষ্ঠান দু’টির একটি খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পুরাতন, জরাজীর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ প্রশাসনিক এবং প্রশিক্ষণের ওয়ার্কশপগুলো ভেঙ্গে নতুন করে প্রতিষ্ঠানটির আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের ব্যয় ৫৩ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে প্রকল্পের ৯৭ শতাংশ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়া যাতায়াতের দুর্ভোগের সড়কগুলির উন্নয়ন কাজ বাদ রেখে প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে।
খুলনা টিটিসি’র আধুনিকায়ন উন্নয়ন প্রকল্পের পিএম প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন খুলনা গেজেটকে বলেন, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির আধুনিকায়ন উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু অর্থের সংকুলান না হওয়ায় এই প্রকল্পের সঙ্গে সড়কের উন্নয়ন কাজ করা সম্ভব হয়নি।