খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৫৮

খুলনা এইচএসটিটিআই’র বেহাল অবস্থা, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে কার্যক্রম

একরামুল হোসেন লিপু

এ অঞ্চলের লবণাক্ততার প্রভাব বিবেচনা না করে ভবনের ডিজাইন করা হয়। ভবনটি নির্মিত হয় সমতল এবং নীচু ভূমিতে। সঠিক তদারকির অভাব এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলাতির কারণে প্রতিষ্ঠানটির ভবনগুলি নির্মাণে মারাত্মক ত্রুটি ছিল। সঠিক প্রক্রিয়ায় ভবনগুলি নির্মিত হয়নি। যার কারণে নির্মাণের আড়াই যুগ পর ভবনগুলির বেহাল অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ভবনগুলি। এ সকল অভিযোগ খানজাহান আলী থানার তেলিগাতী কুয়েটে রোডে অবস্থিত খুলনা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (এইচএসটিটিআই)’র কর্তৃপক্ষের।

সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) প্রতিষ্ঠানটিতে সরেজমিনে গিয়ে এবং কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জানা যায়, গত কয়েক বছর ধরে প্রশাসনিক কাম একাডেমিক ভবনের ছাদ থেকে পানি চুইয়ে পড়তে শুরু করেছে। ভবনের তৃতীয় তলার বারান্দায় ফাটল ধরেছে। ধ্বসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভবনের বিভিন্ন স্থানের প্লাস্টার খসে রড বের হয়ে পড়েছে। হোস্টেল ভবনের ছাদ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ছাদ থেকে পানি চুইয়ে পড়তে শুরু করেছে। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় হোস্টেলের চতুর্থ তলায় প্রশিক্ষনার্থী শিক্ষকদের সঠিকভাবে আবাসনের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। গেস্ট হাউজের অবস্থাও নাজুক।

বর্ষা মৌসুমে একটু ভারী বৃষ্টি হলেই পানিতে তলিয়ে যায় প্রশাসনিক কাম একাডেমিক ভবন, হোস্টেল এবং গেস্ট হাউজের নিচতলায়। তখন এক ফুট সমান পানি জমে থাকে। সর্বশেষ কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে নীচ তলার ভবনের সবগুলি কক্ষে পানি ঢুকে প্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্র নষ্ট হয়েছে। পানিতে ভিজে গেছে প্রতিষ্ঠানের মূল্যবান প্রায় দুই হাজার বই। পানি জমে থাকে ইনস্টিটিউটের হোস্টেল, গেস্ট হাউজ, প্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়ার সড়ক এবং খেলার মাঠে। ইনস্টিটিউটের উত্তর পাশে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) জমি অধিগ্রহণ করে উঁচু করে বালি ভরাট করায় প্রতিষ্ঠানের পশ্চিম পাশ দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ড্রেনটি বন্ধ হয়ে গেছে। পার্শ্ববর্তী এলাকার বৃষ্টির পানি উল্লেখিত ড্রেনটি দিয়ে নিষ্কাষিত হতো। বর্তমানে ড্রেনটি দিয়ে সঠিকভাবে পানি নিষ্কাশিত হতে পারছে না। ফলশ্রুতিতে পার্শ্ববর্তী এলাকার বৃষ্টির পানি প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে এসে জমে থাকছে। পানি জমে থাকার কারণে প্রতিষ্ঠানের চারপাশে সাঁতসেঁতে, দুর্গন্ধময়, নোংরা পরিবেশ বিরাজ করছে। পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়েছে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পানি জমে থাকার কারণে প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। দুর্বল হয়ে পড়েছে ভবনগুলির অবকাঠামো। নষ্ট হয়ে গেছে ভবনের টেম্পার। প্রশাসনিক কাম একাডেমিক ভবনের দ্বিতীয় তলার লাইব্রেরির ছাদ নষ্ট হয়ে যাওয়া সম্প্রতি সেটা ঢালাই দেওয়া হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে জনবল সংকট। দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রাম এবং সহকারী প্রোগ্রামের পদ দুটি শূন্য রয়েছে। ফলে শিক্ষকদের আইসিটি প্রশিক্ষণের জন্য অনারিয়াম দিয়ে বাইরে থেকে গেস্ট টিচার এনে ক্লাসগুলো পরিচালনা করা হচ্ছে। এত বড় প্রতিষ্ঠানে দুইজন পরিচ্ছন্ন কর্মীর পদ থাকলেও বাস্তবে রয়েছে মাত্র একজন। ফলশ্রুতিতে হোস্টেল ভবন গেস্ট হাউজে অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় বিরাজ করে। প্রশাসনিক কাম একাডেমিক ভবনও পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে গত ছয় মাস ধরে প্রতিষ্ঠানটি অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। কুয়েট এপ্রোচ সড়ক উন্নয়ন কাজের জন্য সড়কের দু’পাশে ড্রেন নির্মাণের সময় প্রতিষ্ঠানের সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে যায়। এরপর নতুন করে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়নি। সন্ধ্যার পর প্রতিষ্ঠানের সীমানার অভ্যন্তরে বখাটেরা আড্ডা জমায়।

এছাড়া প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কাম একাডেমিক ভবনের দোতালার বারান্দায় ছাদ ঢালাইয়ের নির্মাণ সামগ্রী দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস যাবত ফেলে রেখেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এর ফলে প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। ঠিকাদারকে তাদিদ দেওয়ার পরও সে কাজ শেষ করে মালামাল সরিয়ে নিচ্ছে না।

এ ব্যাপারে কাজের তদারকি কর্মকর্তা খুলনা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ঠিকাদারের স্ত্রী’র অসুস্থতার কারণে উনি কিছুটা সমস্যায় রয়েছেন। দ্রুত কাজ শেষ করে মালামাল সরিয়ে নেওয়ার জন্য ঠিকাদারকে তাগিদ দেওয়া হবে বলে তিনি জানান। তাছাড়া কাজের মেয়াদ এখনও দুই মাস রয়েছে।

জানা যায়, ১৯৯৪ সালে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)’র আর্থিক সহায়তায় এবং ইউএনডিপি’র কারিগরি সহায়তায় তেলিগাতী কুয়েট রোডে খুলনা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (এইচএসটিটিআই)’র তিনতলা বিশিষ্ট সুরম্য একাডেমিক কাম প্রশাসনিক ভবন, প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের আবাসনের জন্য চার তলা বিশিষ্ট হোস্টেল এবং দ্বিতল বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন অতিথি ভবন নির্মিত হয়। একই সাথে দেশের অন্যান্য ৪ টি বিভাগীয় শহরে ও এ জাতীয় উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট নির্মাণ করা হয়।

প্রতিষ্ঠানের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ আলী জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ৫৩২টি কলেজের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। প্রতি বছর প্রতিষ্ঠানটিতে সরকারি বেসরকারি কলেজের রাজস্ব বাজেটের আওতায় ৪৩০ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। এদের মধ্যে প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক ৪০০ জন। বাকি ৩০ জন অধ্যাপক। এছাড়া উন্নয়ন বাজেটের আওতায় ৩২০ সরকারি এবং বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অভিভাবকরা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকে। বর্তমান প্রতিষ্ঠানটিতে ৯ জন প্রশিক্ষক /কর্মকর্তা এবং ৩৬ জন কর্মচারী কর্মরত আছেন।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!