চট্টগ্রাম শহরের কে সি দে সড়কের নন্দনকাননে এলাকায় স্থাপিত হয়েছে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত ১৫ তলা ভবন বিশিষ্ট চট্টগ্রাম বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগার। শুধু চট্টগ্রাম নয় দেশের অন্যান্য বিভাগীয় শহরেও পুরাতন ভবন গুলো অপসারণ করে আধুনিকতার ছোঁয়ায় নির্মিত হয়েছে সরকারি গণগ্রন্থাগার। শুধু নির্মিত হয়নি খুলনা এবং রাজশাহী বিভাগীয় শহরে। বঞ্চিত রয়েছে এ দু’টি বিভাগীয় শহর। সরকারি গণগ্রন্থাগার ভবনের স্থাপত্য নকশা প্রণয়নের কাজ ৭ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি। ফাইলবন্দি অবস্থায় পড়ে আছে অধিদপ্তরে। পুরানো এবং জরাজীর্ণ ভবনে কার্যক্রম চলছে খুলনা বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারের কার্যক্রম।
খুলনা বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থগার সূত্রে জানা যায়, বিভাগীয় গণ গ্রন্থাগার কর্তৃপক্ষ ২০১৬ সালে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত বহুতল ভবন নির্মাণের চাহিদাপত্র প্রেরণ করে। এরপর ২০১৭ সালে সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগার রাজশাহী ও খুলনার নির্মিতব্য ভবনের চাহিদামালা তৈরী করে।
ওই বছরের ৩১ মে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আশীষ কুমার সরকার “বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগার সমূহের উন্নয়ন” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী ও খুলনা বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগার ভবনের স্থাপত্য নকশা প্রণয়নের জন্য স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি বরাবর চাহিদামালা প্রেরণ করেন। এরপর কেটে গেছে ৭ বছর। এখনও আলোর মুখ দেখেনি খুলনাবাসীর প্রত্যাশিত আধুনিক সরকারি গণগ্রন্থাগার নির্মাণ প্রকল্প।
স্থাপত্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, খুলনা বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারের উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের চাহিদা প্রেরণের পর বেশ কয়েকটি প্রকল্পের নকশা অনুমোদিত হয়েছ। অনুমোদিত প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। অনেকগুলো প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় খুলনা প্রকল্পটি বেশিদূর এগোয়নি।
খুলনার প্রকল্পটি অনুমোদন না হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে খুলনা সিটি মেয়র, মন্ত্রী, এমপি কিংবা সরকারি দলের শীর্ষ নেতারা বিষয়টি নিয়ে কোন আগ্রহ দেখান নাই। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব, স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ দায়িত্বশীল কোন ব্যক্তিবর্গের সুপারিশ ছিল না প্রকল্পটির জন্য। ছিল না কোন তদবির। যে কারণে গত ৭ বছর ধরে স্থাপত্য অধিদপ্তরে প্রকল্পটির নকশা প্রণয়নের চাহিদামালা ফাইলবন্দী অবস্থায় পড়ে আছে।
এ ব্যাপারে স্থাপত্য অধিদপ্তর জোন-১’র অতিরিক্ত প্রধান স্থপতি মোঃ আসিফুর রহমান ভূঁইয়া খুলনা গেজেটকে বলেন, ২০১৭ সালে প্রজেক্টটা যখন দেওয়া হয় তখন খুলনার যারা মন্ত্রী, এমপি, মেয়র ছিলেন তখন তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং ডিজি মহোদয়ের সঙ্গে কথা বললে প্রজেক্টটা অনুমোদন হয়ে যেত। খুলনার ওই প্রজেক্ট দেওয়ার পর অনেক প্রজেক্ট অনুমোদন হয়েছে। কাজ শেষ হয়েছে। অনেকগুলোর কাজ চলমান আছে। কিন্তু খুলনার প্রজেক্টটা আর বেশি দূর এগোতে পারেনি। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এই প্রজেক্ট এগিয়ে নেওয়ার জন্য যত সহযোগিতা প্রয়োজন আমি করব ইনশাল্লাহ। এজন্য খুলনার যারা সুশীল সমাজ, সাংবাদিকবৃন্দ আছেন বিষয়টাকে সামনে নিয়ে আসতে হবে। ফোকাস করতে হবে। এরপর আমি ব্যক্তিগতভাবে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং ডিজি মহোদয়ের কাছে প্রজেক্টর অনুমোদনের ব্যাপারে কথা বলতে পারব।
তিনি আরো বলেন, খুলনা শিল্পকলা একাডেমী এবং বিভাগীয় জাদুঘরের ডিজাইন আমি করেছি। এ কারণে খুলনা সরকারি বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারের স্থাপত্য নকশা প্রণয়নের কাজটস করার যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে।
জানা যায়, স্বাধীনতার পূর্বে ১৯৬৮ সালে খুলনা- যশোর মহাসড়কের বয়রা এলাকায় ৩ একর জায়গার উপর দ্বিতল ভবন বিশিষ্ট খুলনা বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগারটি নির্মিত হয়। মাঝখানে কেটে গেছে ৫৬ বছর। বর্তমানে ভবনের অবকাঠামো সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ভবনের সামনের অংশের ডিজাইনের প্লাস্টার খসে পড়তে শুরু করেছে। রডগুলো বের হয়ে গেছে। বৃষ্টি হলে ভবনটির প্রশাসনিক ভবনের সামনে পানি জমে থাকে। ভবনটিতে ওয়ার্কশপ সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, আলোচনা সভা করার মত বড় কোন অডিটোরিয়াম নেই। ঢাকার পরেই সবচেয়ে বড় বইমেলা অনুষ্ঠিত হয় খুলনা বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারে।
এছাড়া সপ্তাহব্যাপী বিভাগীয় বইমেলা, সাংস্কৃতিক মেলা অনুষ্ঠিত হলেও পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার অনেক ঘাটতি রয়েছে। ঘাটতি রয়েছে জনবলের। প্রতিষ্ঠানটিতে ৩২ জন জনবলের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ১২ জন। এত বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য দুইজন পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ থাকলেও বাস্তবে রয়েছে মাত্র একজন। প্রতিষ্ঠানটিতে নেই কোন নিরাপত্তা প্রহরী। প্রতিদিন ৩/৪ ‘শ খুলনার বিভিন্ন সরকারি/ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ স্কুলের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার পাঠক লাইব্রেরীতে পড়াশোনার জন্য আসলেও তারা পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। রয়েছে পাঠ কক্ষের স্বল্পতা।
গ্রন্থাগারের নিচ তলায় প্রশাসনিক ভবন এবং পাঠকক্ষ আর দ্বিতীয় তলায় রয়েছে সংরক্ষিত বাধাইকৃত পত্রিকা এবং বই। গ্রন্থাগারটিতে দেড় লক্ষাধিক বিভিন্ন প্রকারের পুস্তক রয়েছে। এছাড়াও গ্রন্থাগারের ক্রয়কৃত পত্রিকা ও সাময়িকীর মধ্যে রয়েছে ১৮ টি জাতীয় বাংলা ও ৪ টি ইংরেজি পত্রিকা, ৫ টি আঞ্চলিক পত্রিকা। আগত পাঠকরা বই পড়ার পাশাপাশি যেগুলো নিয়মিত পাঠ করে থাকেন।
খুলনা গেজেট/এইচ