এজাক্স জোট মিলের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কাওসার জামান বাবলা বলেছেন, নতুন করে শ্রমজীবী হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছি। দীর্ঘ প্রায় এক দশক ধরে সরকার, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন দপ্তরের দৌড়ঝাঁপ করেছি। হাজার হাজার মানুষের কর্মক্ষেত্র ও শতভাগ রপ্তানিমুখী বেসরকারি পাটকল এজাক্স জুট মিলটি রক্ষার জন্য। কিন্তু অবৈধ দখলদার, ক্ষমতার দাপট ও দাম্ভিকতা, অনিয়ম, দুর্নীতিতেই সবকিছু ধ্বংস হয়েছে। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে আজ আমি নিঃস্ব হতে চলেছি। জীবন নাশের একাধিক চেষ্টার পরও মহান আল্লাহর অপর করুনায় এখনও বেঁচে আছি।
সাংবাদিক সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে কাওসার জামান বাবলা বলেন, কেসিসি’র আওতাধীন মীরেরডাঙ্গায় ৮১ একর জায়গার উপর মিলটি অবস্থিত। যন্ত্রপাতিসসহ অন্যান্য অবকাঠামোর মূল্য ৭৫ কোটি টাকা। বিভিন্ন সংকটের কারণে ২০১৪ সালের জুলাই মাসে মিলটির উৎপাদন অব্যাহত রাখা সম্ভব না হওয়ায় কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। মিলটি বন্ধ থাকায় আমিসহ উদ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুপস্থিতির কারণে এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী সাজ্জাদুর রহমান লিংকন তার দলবল সহ ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসে মিলটি দখল করে নেন। সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান ও তার ভাই শাহাবুদ্দিনের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় বিদেশে পণ্য রপ্তানি বাধাগ্রস্থসহ মিলটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য করে। এতে হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েন। এমনকি শেষ সময়ে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা পাটপন্য রপ্তানিতে বাঁধা দেয়। এতে ওই সময় প্রায় অর্ধ কোটি টাকা লোকশানে পড়তে হয়। দখলদাররা আমার মিলের মূল্যবান মেশিনারিজ, ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম, মেইন ওয়ার্কশপের যন্ত্রপাতি, স্টোর রুমে মালামাল লুট করেই ক্ষান্ত হয়নি। তারা স্কুল ঘরের টিন বাউন্ডারি ওয়ালের ইট খুলে নিয়েছে। মিলের আভ্যন্তরীণ রাস্তা নষ্ট করে ফেলেছে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, সাজ্জাদুর রহমান লিংকন খানজাহান আলী ও দিঘলিয়া এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক। এমন কোন অপকর্ম নেই, তার সঙ্গে লিংকন জড়িত নয়। তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা থাকলেও তিনি সকল আইনের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এই লিংকন মিলের ৫০ একর খালি জায়গায় বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক সার মজুদ করে স্যারের ব্যবসা করে আসছে।
মিলের ফাঁকা জায়গা দখল করে সে অবৈধভাবে ২০১৫ সাল থেকে প্রতি মাসে ভাড়া ও সারের ব্যবসা করে ৩০ লাখ টাকা উপার্জন করেছে। এভাবে মিলের জায়গা দখল ও অবৈধ ব্যবসার ব্যাপারে ২০১৮ সালের ২০ আগস্ট তারিখে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সংবাদ প্রকাশিত হয়। একাধিক জাতীয় দৈনিকেও এ ঘটনার সংবাদ প্রকাশ হয়। বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক সার মজুদের ফলে মিল ও আশেপাশের এলাকায় পরিবেশ প্রতিনিয়ত দূষিত হয়ে বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়েছে। মিল এলাকায় বসবাসরত মিলের প্রায় তিনশত শ্রমিক কর্মচারী তাহাদের পরিবার-পরিজন ও শিশু সন্তান রাসায়নিক সারের মজুদের দূষণের শিকার হয়ে বিভিন্ন সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন।
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, সাজ্জাদুর রহমান লিংকনের অবৈধ দখল হইতে মিলটি পুনরুদ্ধার ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি ও মজুদকৃত রাসায়নিক সার অপসারণের ব্যাপারে আমি ২০১৯ সালের ১২ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন নিরাপত্তা সচিব, ২৩ মে খুলনা জেলা প্রশাসক ও ১ জুন পুলিশ কমিশনার বরাবর লিখিত আবেদন করি। কিন্তু লিংকন তার সন্ত্রাসী বাহিনী এতই শক্তিশালী যে, আমার আবেদন প্রশাসন কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বীকার একজন ব্যবসায়ী। বিগত সময়ে ক্ষমতাসীনদের আক্রোশের শিকার হয়েছি। কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সর্বশান্ত হতে চলেছি। আমি রংপুর সিটি কর্পোরেশনে ২০১২ ও ২০১৭ তাহলে দু’বার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি,র ধানের শীষ প্রতীকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। এটি আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব পালন করছেন। আমি ন্যায় বিচার বঞ্চিত ও জুলুমের শিকার। আমার মিলের হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন রয়েছেন। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে মিলটি সরজমি তদন্ত, দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে আমি যাতে মিলটি পুনরায় নতুনভাবে চালু করে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান ও দেশের অর্থনীতির অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখতে পারি তার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করছি।
খুলনা গেজেট/এএজে