খুলনা শহরে নৈরাজ্য, চাঁদাবাজি ও লুটপাটের বিষয়ে বিএনপি নেতাদের নাম শোনা যাচ্ছে এমন অভিযোগ করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা বলেছেন, আপনারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেন, সতর্ক হয়ে যান। না হলে আপনাদের অবস্থাও আওয়ামী লীগের মতো হবে। এ সময় শিক্ষার্থীরা খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মোজাম্মেল হকের পদত্যাগ দাবি করেন।
এর প্রেক্ষিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের কর্মকাণ্ডের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান কেএমপি কমিশনার মোজাম্মেল হক।
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে কেএমপি সদর দপ্তরে খুলনার রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
এই সময় শিক্ষার্থীদের নানামুখী প্রশ্নের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, আমাদের কেন এগুলো করতে হয়েছিল, এই আইনের অধীনে থাকলে তোমরা বুঝতে। এই নিয়ে আমি তোমাদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাই।
কেএমপি সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত সভায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। সভার ট্রেজারি বেঞ্চে পুলিশ কমিশনারের একপাশে খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা, অন্যপাশের সদস্য সচিব শফিকুল ইসলাম তুহিনসহ বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা বসা ছিলেন।
সভা কক্ষে ঢুকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন ছাত্ররা। তারা বলেন, আপনারা এতদিন একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করেছেন৷ এখন আরেকটা রাজনৈতিক দলের সাথে বসে আমাদের সাথে সভা করার জন্য ডেকেছেন। আপনাদের চাটুকারিতা কমে নাই। আমরা আপনাদের মতো চাটুকার পুলিশ কর্মকর্তাদের বদলী চাই। আপনারা নিজ বিভাগের মধ্যে সংস্কার করেন। চাটুকারীতা বাদ দেন।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আল মুজাহিদ আকাশ পুলিশ কমিশনারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে কেন আপনারা আমাদের উপর গুলি চালালেন। ছাত্র-জনতার উপরে গুলি চালানোর আপনারা কে? কার নির্দেশে আপনারা আমাদের উপর গুলি চালালেন?
সমন্বয়ক সাজ্জাদুল ইসলাম আজাদ বলেন, প্রয়োজনে ২০ বছর এই জাতীয় সরকার থাকবে। তবে বিএনপি বা আওয়ামী লীগের মত দলকে আমরা ক্ষমতায় চাই না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়ার সাথে সাথে তারা লুটপাট শুরু করে দিয়েছে। আমরা এই দেশটা সাজাতে চাই, নষ্ট করতে চাই না।
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, সারা শহরে যা হচ্ছে এর সঙ্গে আপনাদের নাম আসছে। আওয়ামী লীগের পরিণতি দেখে আপনারা শিক্ষা নিচ্ছেন না কেন ? আপনারা যদি ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নেন তাহলে ভবিষ্যতে আপনাদের জন্যই ক্ষতির কারণ হবে।
ছাত্রদের দাবীর প্রেক্ষিতে বিএনপির শফিকুল আলম মনা বলেন, সাম্প্রতিক যেসব সহিংসতা ঘটেছে, এতে যদি বিএনপি’র কোন কর্মী জড়িত থাকে, তবে তাদের বিচার করা হবে।
এক পর্যায়ে সভা শেষ না হওয়ার আগেই বিদায় নিতে চান পুলিশ কমিশনার। তিনি শিক্ষার্থীদের কাছে অনুরোধ করে বলেন, রাত ৯ টায় যশোর ক্যান্টনমেন্টে জিওসির সাথে আমার বৈঠক করতে হবে। আগামীকাল এই সভাটিতে আবারও আমরা বসবো। এসময়ে ছাত্ররা তার কথায় সম্মতি জানান।
খুলনা গেজেট/হিমালয়