সব নাটক যেন জমা ছিল শেষ ম্যাচের জন্য। রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তান ও জিম্বাবুয়ের মধ্যকার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে নাটকের পর নাটক হলো। একবার পাকিস্তান জিতে তো আরেকবার জিম্বাবুয়ে-এই অবস্থা। শেষ পর্যন্ত টাই হলো ম্যাচ, গড়াল সুপার ওভারে।
সুপার ওভারে পাকিস্তানের হয়ে ব্যাটিংয়ে নামেন খুশদিল শাহ আর ইফতিখার আহমেদ, বোলিংয়ে জিম্বাবুয়ের পেসার মুজারবানি। প্রথম বলেই তুলে মারতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ দেন ইফতিখার। উইকেটে আসেন ফাখর জামান। দ্বিতীয় বলে খুশদিল নিতে পারেন মাত্র ১ রান, তৃতীয় বলে ফাখরও সিঙ্গেলস। চতুর্থ বলটি জোরে হাঁকাতে গিয়ে উইকেটে টেনে আনেন খুশদিল, হন বোল্ড। ২ উইকেটে ২ রানে থামে পাকিস্তানের সুপার ওভার।
৩ রানের লক্ষ্য। জিম্বাবুয়ের হয়ে ব্যাটিংয়ে নামেন ব্রেন্ডন টেলর আর সিকান্দার রাজা, বোলিংয়ে পাকিস্তানের বাঁহাতি পেসার শাহীন শাহ আফ্রিদি। তার প্রথম বলে টেলর নিতে পারেন ১ রান। দ্বিতীয় বলটি মিস করেন রাজা। তবে তৃতীয় বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ম্যাচের ফল বের করে ফেলেন রাজা।
সুপার ওভারের এই শ্বাসরুদ্ধকর জয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়িয়েছে জিম্বাবুয়ে। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ পাকিস্তান জিতেছে ২-১ ব্যবধানে।
এর আগে মূল ম্যাচে আগে ব্যাট করে উইলয়ামসনের অপরাজিত ১১৮ রানে ভর করে জিম্বাবুয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৭৮ রান সংগ্রহ করে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান বাবর আজমের ১২৫ রানের অনবদ্য ইনিংসের পরেও নির্ধারিত ওভার শেষে জিম্বাবুয়ের সমান ২৭৮ রান করতে সমর্থ হয়।
২৭৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান শুরুতেই ধুঁকেছে। দলীয় ৬ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে ফেলে স্বাগতিকরা। বিদায় নেন ইমাম উল হক (৪) ও ফকর জামান (২)। শুরুর হোচট সামাল দেন অধিনায়ক বাবর আজম। এক পাশ আগলে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন। তবে তার যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি হায়দার আলী (১৩), মোহাম্মদ রিজওয়ান (১০), ইফতেখার (১৮)। ৮৮ রানে নেই পাচ উইকেট।
এরপর অবশ্য খুশদিল শাহ ও ওয়াহাব রিয়াজের সঙ্গে দুটি ভালো জুটি গড়ে ওঠে বাবর আজমের। ৩৩ রান করে ফেরেন খুশদিল। তবে ওয়াহাব রিয়াজের সঙ্গে করে দলকে ২৫১ রানে নিয়ে যান বাবর আজম। দারুণ ফিফটি করে মুজারাবানির শিকার হন ওয়াহাব রিয়াজ (৫২)। শেষের দিকে অনেকটাই শঙ্কা পাকিস্তানের। কারণ বাবর আজমের সঙ্গে তখন টেল এন্ডাররা। বেড়ে চলে রান ও বলের ব্যবধান।
একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল হেরেই যাবে পাকিস্তান। কিন্তু শেষ বলে চার হাকিয়ে ম্যাচ টাই করেন মুহাম্মদ মুসা। ৯ উইকেটে ২৭৮ রান। ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। যেখানে শেষ হাসি হাসে জিম্বাবুয়েই। পাকিস্তানের হয়ে ব্যাট হাতে অধিনায়োকোচিত ইনিংস খেলেন বাবর আজম। ১২৫ বলে ১২৫ রান করেন আজম। বল হাতে জিম্বাবুয়ের হয়ে পাঁচ উইকেট তুলে নেন মুজারাবানি।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপযয়ে পড়ে জিম্বাবুয়ে। পাক বোলার মোহাম্মদ হাসানাইনের বোলিং দাপটে ২২ রানেই দলটি হারায় তিন উইকেট। অধিনায়ক চিভাভা রানের খাতা খুলতে পারেনি। চারি ৯, আরভিন করেন ১ রান। শুরুর বিপযয় শক্ত হাতে রোধ করেন টেইলর ও শন উইলিয়ামস। এ্ জুটি দলকে টেনে নিয়ে যান ১০৬ রান অবধি। ৫৬ রান করে হাসনাইনের শিকার টেইলর। এরপর মাধেভেরে ও সিকান্দার রাজার সঙ্গে উইলিয়ামসের খণ্ড খণ্ড জুটি দলকে চ্যালেঞ্জিং স্কোর পৌছে দেয়। সিকান্দার রাজা অপরাজিত ৪৫, মাধেভেরে ৩৩ রান করেন।
তবে হার না মানা এক সেঞ্চুরি করে ক্রিজে অপরাজিত থেকেছেন শন উইলিয়ামস। ১১৮ রানে নট আউট। ১৩৫ বলের ইনিংসে ১৩টি চার ও একটি ছক্কা হাঁকান তিনি। ৬ উইকেটে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৭৮ রান। বল হাতে পাকিস্তানের হয়ে ঝলক দেখান মোহাম্মদ হাসনাইন। ১০ ওভারে তিন মেডেনে মাত্র ২৬ রানে তুলে নেন ৫টি উইকেট।
খুলনা গেজেট/এএমআর