খুলনার আড়ংঘাটা এলাকার যুবলীগ নেতা ও সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ আরিফ হোসেন নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা করেছেন তার পরিবার। মঙ্গলবার রাতে আরিফ হোসেনের বাবা সিআইডির অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আমির হোসেন বাদি হয়ে নগরীর আড়ংঘাটা থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলে আইনশৃংখলা বাহিনীর একটি সূত্র জানিয়েছে।
তবে বুধবার ভোর পর্যন্ত মামলা ও আটকের বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি পুলিশ।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, আরিফের দাদার বাড়ি কালিয়া উপজেলার পিড়োলী গ্রামে। ২৫/৩০ বছর পূর্বে তার বাবা ফুলবাড়ীগেট খানাবাড়ী এলাকায় জমি ক্রয় করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। আরিফের জন্ম এবং বেড়ে ওঠে এই এলাকাতেই। আরিফের অন্য দুই ভাই আসিফ এবং হাসিব চাকুরীর সুবাদে একজন চট্টগ্রাম এবং অন্যজন টেকেরহাটে স্বপরিবারে থাকেন।
আরিফ পিতা-মাতা, স্ত্রী এবং দুই ছেলেকে নিয়ে কুয়েট পকেট গেটের খানাবাড়িতে বসবাস করতেন। ১৩ বছর পূর্বে আরিফ দুই বছরের ব্যবধানে দুই বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রী মুক্তির দুই ছেলে। দ্বিতীয় স্ত্রী শামীমা শারমীন শিউলি নিঃসন্তান।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, নিহত আরিফ হোসেন খানজাহান আলী থানার ৩৩ নং ওয়ার্ড যুবলীগের আহবায়ক ও দিঘলিয়া উপজেলার যোগীপোল ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য ছিলেন। সর্বশেষ নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি হেরে যান। এলাকায় আরিফের বেশ প্রভাব ছিলো। দাপটের সাথে চলাফেরা করতেন। সার্বক্ষণিক পাহারাদার হিসেবে একজন সহযোগী নিয়ে চলাফেরা করতেন। ঘটনার সময় ওই সহযোগী তার সাথে থাকলেও তাকে রক্ষা করতে পারেননি।
স্থানীয়রা জানান, আরিফ কুয়েটে এক সময় ঠিকাদারী কাজ করেছেন। সর্বশেষে জমিজমা কেনাবেচার দালালি করতো। এসব করে বিপুল অর্থের মালিক হন আরিফ। সম্প্রতি দুই কোটি টাকা মূল্যের একটি জমির ক্রয় বিক্রয়ের দালালিকে কেন্দ্র করে তার সঙ্গে একটি পক্ষের বিরোধের সৃষ্টি হয়। নিহত আরিফের মা বিলাপ করে বলছিলেন, জমিজমা ক্রয় বিক্রয়ের বিরোধের কারণে আমার ছেলে খুন হয়েছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন , আরিফ এলাকায় জমি ব্যবসার দালাল হিসেবে কাজ করতেন। এছাড়া একপক্ষের হয়ে অন্য পক্ষ থেকে জমির দলিল বুঝিয়ে দিতে পেশিশক্তি নিয়োগ করতেন। এসব নিয়ে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে। হত্যাকান্ডের পেছনে এই দুটি কারণ কাজ করতে পারে। এছাড়া স্থানীয় রাজনৈতিক বিরোধের বিষয়টি নিয়েও তদন্ত চলছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরিফের এক স্বজন বলেন, এখানে এলাকার স্থানীয় রাজনীতির গ্রুপিংয়ের কোন বিষয় নয়। এলাকার লোকজন তাকে খুব ভালোবাসতো। এখানে দুই কোটি টাকা মুখ্য বিষয়। হত্যার পিছনে দুই কোটি টাকার একটি ব্যাপার থাকতে পারে। এখানে টাকা-পয়সার একটা স্বার্থ আছে। যেহেতু দুই কোটি টাকা নিয়ে একটি ঝামেলা। এখানে কিলিং মিশন হয়েছে। এলাকার মানুষ তাকে মারলে বড়জোড় কোঁপাতে পারে। এভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করতে পারে না।
উল্লেখ্য, সোমবার (২৪ জুন) রাত আনুমানিক ১১ টার দিকে কুয়েট পকেট গেট সংলগ্ন নিজ বাড়ির সামনে বসে যুবলীগ নেতা আরিফ হোসেন মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। এ সময় ফুলবাড়িগেটের দিক থেকে মোটরসাইকেলে তিনজন দুর্বৃত্ত প্রথমে তার বাম পাশে বগলের নিচে একটি গুলি করে। এ সময় আরিফ পড়ে গেলে দুর্বৃত্তরা তাকে পা দিয়ে ধরে মাথায় আরও দুইটি গুলি করে। মৃত্যু নিশ্চিত করে কুয়েট সড়ক দিয়ে খুলনা- মোংলা হাইওয়ে বাইপাস সড়কের দিকে চলে যায়। দুর্বৃত্তের সবার মাথায় হেলমেট ছিলো। নিহত আরিফের ১১ বছরের ছেলে আরিয়ান বাড়ির সামনে থেকে তার বাবাকে পা দিয়ে ধরে গুলি করার ঘটনা প্রত্যক্ষ করে চিৎকার করতে থাকে। রাতে এ ঘটনার পর থেকেই ঘটনাস্থলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, র্যাব, পিবিআই, সিআইডিসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা তৎপরতা শুরু করে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৭ পয়েন্ট ৫৫ মডেলের পিস্তলের গুলির খোসা উদ্ধার করে।
খুলনা গেজেট/লিপু/হিমালয়