খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ আশ্বিন, ১৪৩১ | ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  দেশে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৭ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৬০
  হেজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ নিহত, নিশ্চিত করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি
  ছাত্র আন্দোলনে ১৫৮১ জন নিহত হয়েছেন : স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ কমিটি

গাবুরায় উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ধ্বস, ভাঙন আতংকে এলাকাবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বিভাগ-১ এর আওতাধীন ১৫ নম্বর পোল্ডারে শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের ৯নং সোরা গ্রামের উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ধ্বস দেখা দিয়েছে। খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে গত শনিবার ৯নং সোরা গ্রামের মালিবাড়ি সংলগ্ন অংশের বেড়িবাঁধে হঠাৎ ধ্বস লাগে। সোমবার (২৪ জুন) সকাল পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। ফলে টানা তিনদিনে প্রায় দুই’শ ফুট এলাকা জুড়ে বাঁধের অংশ বিশেষ খোলপেটুয়া নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পাউবো’র বেড়িবাঁধে অব্যাহত ধ্বসের ঘটনায় গোটা এলাকাজুড়ে ভাঙন আতংকে রয়েছে এলাকাবাসী।

স্থানীয়দের অভিযোগ, টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরায় এক হাজার বিশ কোটি টাকা ব্যয়ে মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে। কিন্তু ইউনিয়নের ৯নং সোরা গ্রামের মালিবাড়ি সংলগ্ন এলাকার বেড়িবাঁধ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ থাকলেও সেখানে অদ্যাবধি মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়নি। বরং ‘জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ’ নামে বার বার জোড়াতালি দেয়ায় প্রায়শই ওই এলাকায় বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিচ্ছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৯নং সোরা গ্রামের দৃষ্টিনন্দনসহ হরিশখালী এলাকায় টেকসই উপকূল রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু না হলে যেভাবে বাঁধে ধ্বস দেখা দিয়েছে তাতে খুব শীঘ্রই বিস্তীর্ণ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, হঠাৎ করে ধ্বস নামায় ৯নং সোরা এলাকার মালিবাড়ি ও গাজিবাড়ী অংশে ১২/১৪ ফুট চওড়া উপকূল রক্ষা বাঁধের মাত্র আড়াই থেকে তিন ফুট অবশিষ্ট রয়েছে। প্রায় দুইশ ফুট এলাকাজুড়ে ধ্বসের সৃষ্টি হওয়া ওই অংশের কোন কোন স্থানে আবার মাত্র দেড় থেকে দুই ফুট পর্যন্ত বাঁধ অবশিষ্ট রয়েছে। ভাঙনের বিস্তৃতি রোধে একদিন আগে পাউবো’র পক্ষ থেকে ডাম্পিংকৃত জিও ব্যাগগুলো ধ্বসে যাওয়া অংশের পানিতে তলিয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে কর্তৃপক্ষ জনবল বাড়িয়ে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা অব্যাহত রেখেছে।

ভাঙন কবলিত এলাকায় বসবাসরত মিলন হোসেন জানান, প্রায় দু’বছর আগে থেকে গাবুরায় এক হাজার বিশ কোটি টাকা ব্যয়ে মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। অথচ ঠিকাদার নিযুক্ত না হওয়ার অজুহাতে তাদের এলাকায় এখন পর্যন্ত মেগা প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়নি। এদিকে খোলপেটুয়া নদীর মধ্যভাগে বিশাল চর জেগে উঠায় স্রোত প্রতিনিয়ত তাদের বসতবাড়ি সংলগ্ন বেড়িবাঁধে আঘাত করছে। এমতাবস্থায় অব্যাহতভাবে তাদের এলাকার বাঁধ ভাঙলেও দীর্ঘমেয়াদি কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় নদী ভাঙনের হুমকির মধ্যে রয়েছে তারা।

স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য ফিরোজ হোসেন বলেন, গত এক বছরে সংলগ্ন এলাকার বাঁধে চার বার ধ্বসের ঘটনা ঘটেছে। দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা না নেয়ায় পর্যায়ক্রমে খোলপেটুয়া নদীর ভাঙন গোটা বাঁধকে প্রায় নদীতে মিশিয়ে দিয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া না হলে যে কোন মুহুর্তে বাঁধ ভেঙে ৯ ও ১০ নং সোরা এবং হরিশখালীসহ গাবুরার ১২/১৪টি গ্রাম নদীর পানিতে প্লাবিত হতে পারে।

গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম জানান, ইউনিয়নের অপরাপর অংশে মেগা প্রকল্পের আওতায় কাজ চলছে। অথচ হরিশখালী ও ৯ নং সোরার মতো ঝুঁকিপূর্ণ অংশে কাজ না হওয়ায় সেই এলাকা বার বার ভাঙছে। অব্যাহত ভাঙনের কারণে দৃষ্টিনন্দনের একমাত্র মিষ্টি পানির পুকুরসহ একাধিক শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীনের ঝুঁকিতে রয়েছে। ভাঙন আতংকে বসবাস করছে ওই এলাকার মানুষ। তিনি দ্রুত গাবুরা ইউনিয়নের ঝুকিপূর্ণ এলাকা গুলো অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে মেগা প্রকল্পের আওতায় এনে কাজ শুরু করার দাবি জানান।

বেড়িবাঁধের সংশ্লিষ্ট অংশের দায়িত্বপ্রাপ্ত পাউবো বিভাগ-১ এর উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, গোটা গাবুরা ইউনিয়নে প্রায় ২৯ কিলোমিটার উপকূল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য মেগা প্রকল্পের আওতায় ৪৮টি প্যাকেজ তৈরি করা হয়েছে। প্রায় অর্ধেক প্যাকেজের কাজ চলমান থাকলেও হরিশখালী ও দৃষ্টিনন্দনের ২৬ নং প্যাকেজের কাজ করার জন্য অদ্যবধি কোন ঠিকাদার পাওয়া যায়নি।

তিনি আরও বলেন, হরিশখালী ও দৃষ্টিনন্দন এলাকার ভাঙনের বিস্তৃতি ঠেকাতে পাঁচ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ কাজের আওতায় অপরাপর প্রকল্প থেকে সংগৃহীত প্রায় সাড়ে সাতশ’ ব্যাগ ইতিমধ্যে ভাঙন কবলিত অংশে ডাম্পিং করা হয়েছে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!