খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

হজের খুতবায় বিশ্ব উম্মাহর শান্তি ও ফিলিস্তিনের জন্য দোয়া কামনা

গেজেট ডেস্ক

হজের খুতবায় বিশ্ব উম্মাহর শান্তি কামনা করেছেন  মসজিদুল হারামের ইমাম ও খতিব শায়েখ মাহের আল মুয়াইকিলি। আরাফার ময়দানে অবস্থিত মসজিদে নামিরা থেকে এ বছর হজের খুতবা দেন তিনি।

হজের খুতবায় তিনি ফিলিস্তিনের মুসলমানদের জন্য রহমত কামনা করে দোয়া করেন। খুতবায় ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে তুলে ধরে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনের মুসলমানেরা যুদ্ধের কবলে। তারা বিপর্যস্ত। তাদের খাওয়ার পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, খাবার নেই, পৃথিবীর সবধরনের আরাম ও সুখ থেকে তারা বঞ্চিত। তাদের জন্য দোয়া করুন। বিশ্ব মুসলিমের কাছে এটা তাদের পাওনা।

তিনি বলেন, যারা ফিলিস্তিনিদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন, সহযোগিতার চেষ্টা, অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সহযোগিতা করছেন, করছেন তারাও দোয়ার হকদার। এছাড়াও যারা হজযাত্রীদের সেবা করছেন তারাও দোয়ার হকদার।

খুতবায় হাজীদের উদ্দেশে ড. মাহের বলেন, ফিলিস্তিনের আমাদের ভাইদের জন্য প্রার্থনা করুন যারা তাদের শত্রুদের দ্বারা ক্ষতি ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, রক্তপাত করছে, ধ্বংস ঘটাচ্ছে এবং তাদের প্রয়োজনে প্রবেশ করা থেকে তাদের বাধা দিচ্ছে।

বাংলাদেশ সময় সোয়া ৩টার দিকে হজের খুতবা শুরু হয়। খুতবায় তিনি বলেন, হে মানুষ, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা:-এর আনুগত্য করো। কোরআনে বলা হয়েছে যে- ফেতনা-ফাসাদ থেকে দূরে থাকো। আর যে অন্যায় করবে আল্লাহ তাকে শাস্তি দেবেন।

তিনি বলেন, ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য এবং বিধান শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য। আর যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করবে সে এমন জায়গা থেকে রিজিক পাবে যেখান থেকে সে কল্পনাও করতে পারবে না।

তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা সবকিছুর মালিক। তিনি আমাদের জন্য রহমত হিসেবে কোরআন অবতীর্ণ করেছেন। কোরআন এমন একটি গ্রন্থ যার প্রতিটি আয়াত প্রজ্ঞায় পরিপূর্ণ। এই কোরআন মানুষকে সরল পথ দেখায়।

খুতবায় তিনি বলেন, তাকওয়া মানুষকে সফলতা ও মুক্তি দেয়, তাকওয়া অবলম্বনকারীরা কিয়ামতের দিন দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্ত থাকবে। সে তাকওয়া অবলম্বন করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে এমন জায়গা থেকে রিজিক দেবেন যেখান থেকে সে কল্পনাও করতে পারবে না। যে তাকওয়া অবলম্বন করবে আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে তাকে প্রতিদান দেবেন।

তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা হজরত মোহাম্মদ সা:-কে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছেন। যারা নবীজি সা:-কে সম্মান করবে, ঈমান আনবে এবং আল্লাহ হেদায়েত স্বরূপ যে কোরআন নাজিল করেছেন তার বিধান মেনে চলবে তারাই সফল।

হ‌জের খুতবায় ড. মাহের আল মুয়াইকিলি মানবজীবনে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ, সামাজিক জীবনে করণীয় উল্লেখ করেন। তিনি সুভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার আহ্বান জানান। গীবত ও খারাপ কথা থেকে বিরত থাকায় ইসলামের নির্দেশকে মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন,  আপনারা সম্মানিত। আপনারা যেন নিরাপত্তার সঙ্গে হজ পালন করতে পারেন, সেজন্য কিছু নিয়মকানুনের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। আপনারা সৌভাগ্যবান যে, এমন একটি স্থানে অবস্থান করেছেন যেখানে অর্থাৎ এই ই আরাফাতের ময়দানেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। হজরত বেলাল (রা.)-কে আজানের নির্দেশ দিয়েছিলেন।

স্থানীয় সময় আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১২টা এবং বাংলাদেশ সময় ৩টা ১৪ মিনিটে হজের খুতবা শুরু হয়। খুতবা চলে বিকাল ৩টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত।

খুতবায় শায়েখ মাহের আল মুয়াইকিলি ব‌লেন, শরিয়াহ ক্ষতি প্রতিরোধ বা হ্রাস করার সময় সুবিধা অর্জন এবং সর্বাধিক করার লক্ষ্য রাখে। এটি সুবিধা অর্জনের চেয়ে ক্ষতি প্রতিরোধকে অগ্রাধিকার দেয় শরীয়াহ এমন সব কিছুকে অন্তর্ভুক্ত করে যা একটি সমৃদ্ধ জীবন ও বিকাশকে উৎসাহিত করে এবং এটি অন্যদের ক্ষতি করতে নিষেধ করে।

খুতবায় বলা হয়, ইসলামি আইন পাঁচটি অপরিহার্য বিষয় সংরক্ষণের গুরুত্বের উপর জোর দেয়: ধর্ম, জীবন, বুদ্ধি, সম্পদ এবং সম্মান। তাদের বিরুদ্ধে যে কোনও লঙ্ঘন অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হয়। প্রত্যেক বিশ্বাসীকে অবশ্যই এই পাঁচটি অপরিহার্য জিনিস রক্ষা করার জন্য সচেষ্ট হতে হবে, যা সৃষ্টির মঙ্গল, সামাজিক স্থিতিশীলতা, ব্যাপক নিরাপত্তা এবং মানুষের ধর্মীয় ও পার্থিব স্বার্থ হাসিলের ক্ষমতার দিকে নিয়ে যায়।

তি‌নি ব‌লেন, হজ আল্লাহর ইবাদত ও ভক্তির বহিঃপ্রকাশ, রাজনৈতিক স্লোগান বা দলাদলির জায়গা নয়। হজযাত্রীরা, আপনি আরাফাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছেন, যেখানে আল্লাহ তার ফেরেশতাদের কাছে আপনাকে নিয়ে গর্ব করেন। এটি একটি মহৎ সময় এবং স্থান যেখানে ভাল কাজগুলি বহুগুণ বেড়ে যায়, পাপ ক্ষমা করা হয় এবং পদমর্যাদা উন্নত করা হয়। নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) আরাফাতে দাঁড়িয়ে স্মরণ ও দোয়ায় নিয়োজিত হন।

হজযাত্রীদের নিজেদের, তাদের পিতামাতা এবং তাদের প্রিয়জনদের জন্য প্রার্থনা করা উচিত। যখন কেউ তাদের অনুপস্থিতিতে তাদের ভাইয়ের জন্য প্রার্থনা করে, তখন একজন ফেরেশতা উত্তর দেয়, “আমিন, এবং আপনার জন্যও একই।”

এবছর হজের মূল খুতবার সঙ্গে বাংলাসহ বিশ্বের ৫০টি ভাষায় এর অনুবাদ সরাসরি প্রচারিত হচ্ছে।

এবার এর বাংলায় হজের খুতবার বাংলা অনুবাদ করেছেন সৌদি আরবে অধ্যয়নরত চার বাংলাদেশি ছাত্র। তারা দেশটির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। তারা হলেন মক্কার উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. খলীলুর রহমান, আ ফ ম ওয়াহিদুর রহমান মাক্কী ও মুবিনুর রহমান ফারুক এবং জেদ্দার কিং আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাজমুস সাকিব। গত বছরও খুতবার অনুবাদ করেছিলেন এই চার বাংলাদেশি।

২০১৮ সালে সর্বপ্রথম বিশ্বের পাঁচটি আন্তর্জাতিক ভাষায় হজের খুতবার অনুবাদ প্রচার করা হয়। এরপরের বছর ১০টি ও ২০২২ সালে ১৪টি ভাষায় হজের খুতবার অনুবাদ করা হয়। ২০২৩ সালে তা বাড়িয়ে ২০টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়। এ বছর এক দশকেরও কম সময়ে হজের খুতবা অনুবাদের পরিধি বাড়িয়ে তা ৫০ ভাষা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!