দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে ক্লাইমেট দুর্গত অঞ্চল ঘোষণাসহ ১৪ দফা দাবি উপস্থাপন করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংসগঠন গ্রীণ প্ল্যানেট বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) বিকেলে খুলনা প্রেসক্লাবে মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে এসব দাবি উপস্থাপন করেন গ্রীন প্ল্যানেট-বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম তালুকদার। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন খুলনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মামুন রেজা। সঞ্চালনা করেন গ্রীন প্ল্যানেট বাংলাদেশ’র প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর আশরাফুল ইসলাম নূর।
লিখিত বক্তব্যে গ্রীন প্ল্যানেট-বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেছেন, উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকবেলায় সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। স্থানীয় জ্ঞান ও বিজ্ঞান এ দুইয়ের সমন্বয় করে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। স্থানীয় সরকার কাঠামোর প্রতি স্তরে জলবায়ু সংক্রান্ত পদ সৃষ্টি করা জরুরি। উপকুলীয় এলাকায় ন্যাপ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে হবে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে ক্লাইমেট দুর্গত অঞ্চল ঘোষণা করতে হবে। দুর্গত মানুষ ও জনপদের পুনর্বাসনের জন্য স্বল্পমেয়াদী মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদী সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করতে হবে। আন্তর্জাতিক ফান্ড সংগ্রহ করতে হবে।
এতে আরও বলা হয়, COP ঘোষিত লস এন্ড ড্যামেজ ফান্ড, গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ড ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফান্ড পেতে আন্তর্জাতিক গাইডলাইন মেনে প্রকল্প গ্রহণ করা। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ক্লাইমেট বিশেষজ্ঞ প্যানেল ও দেশীয় বিশেষজ্ঞগনের collaboration অপরিহার্য। উপকূলের সবহারানো মানুষের জলবায়ুর ক্ষতিপূরণ পেতে আইনী সহায়তা দিতে হবে; প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে ক্ষতিপূরণ মামলা করতে হবে। খুলনাতে ক্লাইমেট ডাটা সেন্টার ও গবেষণা কেন্দ্র করতে হবে। উপকূলীয় অঞ্চলের প্রতিটি শহরকে গ্রীন সিটি ঘোষণা ও বাস্তবায়ন করা। জলাশয় ভরাট ও বৃক্ষনিধন নিরুৎসাহিত করা। গ্রীন এনার্জি বাবহারে উৎসাহিত করা। সর্বস্তরে বনায়ন সামাজিক আন্দোলন হোক।
তিনি আরও বলেন, গত শতাব্দী জুড়ে আমাদের পূর্ব পুরুষগণ যেখানে একটি কি দুটো সাইক্লোন প্রত্যক্ষ করতেন, সেখানে বর্তমান প্রজন্ম প্রতি বছর প্রত্যক্ষ করছে। আইলা সিডর কিংবা রিমাল’র ফলে উপকূলীয় জনপদ আজ বিপর্যস্ত । সুন্দরবনের ইকোসিস্টেম ও জীববৈচিত্র হুমকির সম্মুখীন। রিমাল এর কারণে ৩৯টি হরিণ মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে । দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা আজ হুমকির সম্মুক্ষীন।
এবার উচ্চ তাপমাত্রার ফলে খুলনা সিটি স্তব্ধ হয়ে যায়, যা অতীতে দেখা যায়নি। গ্রীষ্মে তাপমাত্রা ৪২ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। ‘হিট স্ট্রেসে’ মানুষের মৃত্যুর হয়েছে। উচ্চ তাপমাত্রা গাছপালা ও শষ্য ক্ষেত সহ্য করতে পারছে না। ফলে উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। সাগরের লবণ পানির প্লাবন কৃষি জমিতে প্রবেশ করে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। দিগন্ত জুড়ে সোনালী ধান ক্ষেত আজ অতীত স্মৃতি। কৃষি জমি হ্রাস পাওয়ায় খাদ্য নিরাপত্তা আজ হুমকির মুখে। সুপেয় পানির অভাবে উপকুলীয় অঞ্চলের মানুষ লবণ মিস্তৃত পানি পান করছেন। যার ফলে উচ্চরক্ত চাপ ও হার্ট অ্যাটাক এর ঝুঁকি বাড়ছে। বিপন্ন মানুষ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে এখনি সরকারি-বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠিকে উপকূল সুরক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।