পাটকল চালুসহ ১৪ দফা দাবিতে খুলনার ইস্টার্ণগেটে আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় আটক হওয়া শ্রমিক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের ১২ নেতা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে খুলনা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তরিকুল ইসলাম তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিনপ্রাপ্তরা হলেন, বাসদ খুলনার সমন্বয়ক জনার্দন দত্ত, যশোরের জেজেআই জুট মিলের সাবেক সিবিএ সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন খান, গণসংহতি আন্দোলনের ফুলতলা উপজেলা শাখার আহ্বায়ক অলিয়ার রহমান, সিপিবির কেন্দ্রীয় সদস্য ও পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের সদস্যসচিব এস এ রশিদ, মহানগর সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, শ্রমিক রবিউল ইসলাম, শেখ রবিউল ইসলাম ওরফে রবি, শামসের আলম, ছাত্র ফেডারেশনের খুলনা মহানগরের আহ্বায়ক আল আমিন শেখ, শ্রমিক নওশের আলী, ফারুক হোসেন, জাহাঙ্গীর সরদার, শহিদুল ইসলাম ও আবুল হোসেন।
সিপিবির নগর সাধারণ সম্পাদক এবং আসামি পক্ষের আইনজীবী বাবুল হাওলাদার বলেন, মামলার ১৪ জনের মধ্যে ১২ জনের জামিনের আদেশ দিয়েছেন আদালত। অন্য দুই জনের একজন পলাতক রয়েছেন আর অন্যজন পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসাধীন আছেন।
পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক কুদরত-ই-খুদা বলেন, ১৪ জনের ১২ জনের জামিন হয়েছে। শ্রমিক নওশের আলী পুলিশ হেফাজতে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। আর মোজাম্মেল হোসেন খান পলাতক রয়েছেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার জামিনে মুক্ত হওয়া নেতাদের ফুলের মালা দিয়ে অভিনন্দন জানানো হয়। এদিন মিছিল সহকারে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে রতন সেন স্মৃতিসৌধে পৌঁছে মুক্তিপ্রাপ্তরা পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। পরবর্তীতে সিপিবি কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সংগঠনের আহ্বায়ক এড, কুদরত-ই-খুদার সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম আহ্বায়ক এড. বাবুল হাওলাদারের সঞ্চালনায় বক্তৃতা করেন ও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মুক্তিযোদ্ধা এড. আ ফ ম মহসিন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) কেন্দ্রীয় সদস্য ও খুলনা জেলা সভাপতি ডাঃ মনোজ দাশ, সাধারণ সম্পাদক এড. এমএম রুহুল আমিন, মহানগর সভাপতি এইচ এম শাহাদাৎ, গণসংহতি আন্দোলন জাতীয় পরিষদ সদস্য ও খুলনা জেলা সমন্বয়ক মুনীর চৌধুরী সোহেল, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) খুলনা জেলা নেতা আব্দুল করিম, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ খুলনা জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য মোস্তফা খালিদ খসরু, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পর্টি (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় সদস্য বিকল্প সদস্য গাজী নওশের আলী, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম মোস্তফা, সিপিবি নারী সেল খুলনা জেলা সমন্বয়ক সুতপা বেদজ্ঞ, শিক্ষকনেতা মুক্তিযোদ্ধা নিতাই পাল, সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা কে এম হুমায়ুন কবির, গণসংহতি আন্দোলন খালিশপুর থানা সদস্য সচিব আলমগীর হোসেন লিটু, শ্রমিক-কৃষক-ছাত্র-জনতা ঐক্য পরিষদ, খুলনা জেলা সমন্বয়ক মোঃ রুহুল আমিন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন খুলনা জেলা সভাপতি এড. নিত্যানন্দ ঢালী, নাগরিক নেতা এড. জাহাঙ্গীর আলম সিদ্দিকী, ফুলতলা উপজেলা সিপিবি নেতা গাজী আফজাল হোসেন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন খুলনা মহানগর আহবায়ক আফজাল হোসেন রাজু, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম খুলনার আহ্বায়ক কোহিনুর আক্তার কণা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন খুলনা জেলা সভাপতি উত্তম রায়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট খুলনা জেলা সভাপতি সনজিত কুমার মন্ডল, ছাত্র ফেডারেশন খুলনা মহানগর সম্পাদক অনিক ইসলাম, ছাত্র নেতা সাগর চ্যাটার্জী, যশোর জেলা অর্থ সম্পাদক জান্নাতুল ফোয়ারা অন্তরা, ছাত্রনেতা জান্নাতুল ফাতেমা অনন্যা, শ্রমিক নেতা মোঃ মেহেদী হাসান বেল্লাল, মোশাররফ হোসেন, শামস্ শারফিন শ্যামন, আলমগীর কবীর, জাহাঙ্গীর সরদার, নূরুল ইসলাম প্রমুখ। এছাড়া কারামুক্ত নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন এস এ রশীদ, জনার্দন দত্ত নাণ্টু, মিজানুর রহমান বাবু।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, আমাদের আন্দোলন জারি থাকবে, যতদিন না পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল রাষ্ট্রের অধীনে চালু না হবে শ্রমিকরা ততদিন পর্যন্ত রাজপথে থাকবে। সাথে সাথে নেতৃবৃন্দ মানবমুক্তির লড়াইয়ে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
প্রসঙ্গত, ১৯ অক্টোবর বেলা ১১টার দিকে বন্ধ ঘোষিত রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল পুনরায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় চালু, শ্রমিকদের সব বকেয়া পাওনা পরিশোধসহ ১৪ দফা দাবিতে আটরা শিল্প এলাকায় খুলনা-যশোর মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি শুরু করে পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ নামের একটি সংগঠন। ওই কর্মসূচিতে যোগ দেন শত শত পাটকল শ্রমিক। কর্মসূচি শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। পরে পুলিশ বেশ কয়েকজন বাম ঘরানার রাজনৈতিক নেতা ও শ্রমিককে সেখান থেকে আটক করে। এ ঘটনায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ২৫০ জনকে আসামি করে মামলা করেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) খানজাহান আলী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান। পর দিন এজাহারভুক্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের কাছে সোপর্দ করা হয়। মামলায় জনগণের জানমালের ক্ষতি, ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ করা হয়।
খুলনা গেজেট / এমএম