বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেছেন, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। আওয়ামী সরকার নিজেদের বৈধতা দিতে নানান ষড়যন্ত্র করছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সেই ষড়যন্ত্রের পাতানো ফাঁদ। এই ফাঁদে বিএনপি নেতা-কর্মী-সমর্থক শুধু নন দেশের কোনো সচেতন মানুষ পা দেবে না। কোনো সচেতন ভোটার ভোট কেন্দ্রে যাবেন না। প্রত্যন্ত অঞ্চলে জনগনের দ্বারেদ্বারে উপজেলা নির্বাচন বর্জনের আহবান জানিয়ে লিফলেট যেতে হবে বিএনপি নেতাকর্মীদের। এরপরও যদি কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হয় বা তার পক্ষে সরবে বা নিরবে নির্বাচনীয় কার্যক্রমে অংশ নেন তাকে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আগামীর রাষ্ট্রনায়ক জনাব তারেক রহমান বহিষ্কার করবেন। এব্যাপারে দলীয় সিদ্ধান্ত অত্যন্ত কঠোর। তারেক রহমানের গোপন মনিটরিং সেল কিন্তু প্রতিটি উপজেলায় সিসিটিভি’র মতোই কাজ করছে-অতএব সাবধান।
রবিবার (১২ মে) বিকেলে নগরীর কে.ডি ঘোষ রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ে দখলদার আওয়ামী সরকারের প্রতারণামুলক ডামি উপজেলা নির্বাচন বর্জন উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত কর্মীসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। খুলনা জেলা বিএনপি’র আহবায়ক আমীর এজাজ খান কর্মীসভায় সভাপতিত্ব করেন।
প্রধান অতিথির আরও বলেন, আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনা ওয়াজেদ নির্দেশ দিয়েছিলেন এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের কেউ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে না। কিন্তু কেউ তার নির্দেশ মানেনি। বহু মন্ত্রী-এমপি’র পরিবারের সদস্যরা প্রার্থী হয়েছে। আসলে আওয়ামী লীগের মধ্যে দলীয় কমান্ড নেই, নেতৃত্ব নেই। আজ তারাই বিএনপি’র নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, কি হাস্যষ্কর ব্যাপার। উপজেলা নির্বাচনে ভোটার একজন, সে হলো প্রশাসন। প্রশাসন যাকেই বিজয়ী করবে- সেই উপজেলায় নির্বাচিত হবে। তাই বিএনপি নেতাকর্মী-সমর্থক ও দেশপ্রেমিক জনগনকে ভোট কেন্দ্রে যাবার কোনো দরকার নেই। নিজে ভোট কেন্দ্রে যাবেন না, অন্যকে ভোট কেন্দ্রে যেতে নিরুৎসাহিত করুন। দেখুন ভোটার উপস্থিতি দুই থেকে তিন শতাংশে নেমে আসবে।
নির্বাচন কমিশনকে নির্লজ্জ আখ্যায়িত করে বিএনপি নেতা হেলাল বলেন, উপজেলা নির্বাচন প্রত্যন্ত জনগনের কাছে উৎসবের মতোই। সেখানে ভোট দিতে কেউ কেন্দ্রেই যাচ্ছে না- আসলে নির্বাচন কমিশনের উপর জনগনেরও কোনো আস্থা নেই। অথচ নির্বাচন কমিশন বলছেন, ধান লাগাতে যেছেন, ধান কাটতে গেছেন তাই ভোটার উপস্থিতি কম। তাহলে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বটা কি?
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুল বারী হেলাল আরও বলেন, জনগনের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ে টানা ১৭ বছর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামের কারণে যারা বিএনপি করি; তারা ইতিহাসের অংশ হয়েছি। মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশ নিয়েছিলেন তারা ইতিহাসের অংশ, পরবর্তীতের স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছিলাম তারাও ইতিহাসের অংশ। ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যারা লড়ছি, ইতিহাসের একদিন আমাদেরও নাম লেখা হবে। সারাদেশে বিএনপি’র দুই শতাদিক নেতাকর্মীকে শুধু গুলি করে হত্যা করেছে। ২৯ লক্ষ নেতাকর্মী মামলার আসামী হয়েছি, গ্রেফতার হয়েছি, জেল খেটেছি, খাটছি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে ইতিহাসের নায়ক হবো আমরা। কেউ যদি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে খলনায়ক হয়ে যান, বেঈমান, মীরজাফর হয়ে যান- পরবর্তী প্রজন্ম কিন্তু আপনাদের ক্ষমা করবে না। স্বাধীনতা বিরোধী, শান্তি কমিটি বা রাজাকারদের যেমন দেখলেই মানুষ ভ্রুকুচকাই। তেমনি বিএনপি’র সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে, বাংলাদেশের সচেতন মানুষের কাছে বেঈমান হিসেবে চিহ্নিত হবে। বিএনপি নেতাকর্মী-সমর্থকরা শুধু নয় দেশের কোনো সচেতন মানুষ নির্বাচনীয় কার্যক্রমে জড়াবোই না। ভোট কেন্দ্রে তো যাবোই না, আমাদের গৃহপালিত পশু-পাখিগুলোও যেনো ভোট কেন্দ্রে না যায় সেদিকে দৃষ্টি রাখবো।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন খুলনা মহানগর বিএনপি’র আহবায়ক এ্যাড. শফিকুল আলম মনা ও সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন। জেলা বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক শেখ আবু হোসেন বাবুর সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন, জেলা বিএনপি’র যুগ্ম-আহবায়ক খান জুলফিকার আলী জুলু, মোল্লা সাইফুর রহমান মিন্টু, এসএ রহমান বাবুল, মোঃ আব্দুর রকিব মল্লিক, মোস্তফাউল বারী লাভলু, মোল্লা মোশাররফ হোসেন মফিজ, অধ্যাপক মনিরুল হক বাবুল, এসএম শামীম কবির, আশরাফুল আলম নান্নু ও এনামুল হক সজল, এ্যাড. তসলিমা খাতুন ছন্দা, খন্দকার ফারুক হোসেন, নূরুল আমিন বাবুল, সেলিম সরদার, মোঃ আবুল বাসার, মোল্যা কবির হোসেন, আতাউর রহমান রুনু, খান ইসমাইল হোসেন, আব্দুল মান্নান মিস্ত্রি ও গোলাম মোস্তফা তুহিন প্রমুখ।
কর্মীসভার শুরুতেই বিএনপি’র প্রতিষ্ঠা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, তার কনিষ্ঠপুত্র আরাফাত রহমান কোকো, জেলা বিএনপি’র আহবায়ক আমীর এজাজ খানের আম্মাসহ নিহত দলীয় নেতাকর্মী-সমর্থকদের মাগফেরাত কামনা এবং জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব এসএম মনিরুল হাসান বাপ্পীর আশু সুস্থ্যতা কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়। এসময়ে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আগামীর রাষ্ট্রনায়ক জনাব তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌম্যত্ব রক্ষায় মহান সৃষ্টিকর্তার সাহায্য প্রার্থনা করা হয়েছে। শুরুতেই কোরআন তেলোয়াত করেন দাকোপ বিএনপি নেতা মোঃ আল আমীন।।
খুলনা গেজেট/কেডি