নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা নির্বাচনের বাকি মাত্র ৮ দিন। ২১ মে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। খুলনার ফুলতলা, তেরোখাদার মতো দিঘলিয়া উপজেলায়ও ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা জমে উঠেছে। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মিলে ১৫ প্রার্থীর প্রচারণা এখন তুঙ্গে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন বিরামহীনভাবে। ছুঁটছেন হাট-বাজার পাড়া-মহল্লা, চায়ের দোকান আর বাড়িতে বাড়িতে । চষে বেড়াচ্ছেন গ্রামের অলিগলি,রাস্তাঘাট। প্রার্থীদের রঙিন পোস্টার ছেয়ে গেছে উপজেলার ৫৩টি গ্রাম। চলছে মাইকিংয়ে প্রচারণা, উঠান বৈঠক আর নির্বাচনী সভা। চায়ের দোকানে চলছে সরব আলোচনা।
তবে নির্বাচনে ১৫ প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই প্রার্থী বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শ্রম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মারুফুল ইসলাম ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সভাপতি মল্লিক মহিউদ্দিনকে নিয়ে।
উপজেলা নির্বাচনে অফিস সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনে মোট ১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদেরমধ্যে ৪ জন চেয়ারম্যান , ৮ জন ভাইস চেয়ারম্যান ও ৩ মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জন পদে।
চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শ্রম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মারুফুল ইসলাম আনারস প্রতীক নিয়ে, সাবেক ৩ বার নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক সেনহাটী ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মল্লিক মহিউদ্দিন দোয়াত কলম নিয়ে, জেলা বিএনপি’র সাবেক সহ- শ্রম বিষয়ক সম্পাদক ও স্টার জুট মিল শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি গাজী এনামুল হাচান মাসুম হেলিকপ্টার প্রতীক নিয়ে। এছাড়া বয়সে তরুণ ল্যান্ড ব্যবসায়ী মোঃ জাকির হোসেন লড়ছেন মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে। গাজী এনামুল হাচান মাসুম ও জাকির হোসেন প্রথমবারের মতো উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
সর্বশেষ ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মারুফুল ইসলাম বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খান নজরুল ইসলামকে ১ হাজার ৫৩৩ ভোটে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে শেখ মারুফুল ইসলাম ভোট পেয়েছিলেন ১৭ হাজার ৫৬৪, খান নজরুল ইসলাম পেয়েছিলেন ১৬ হাজার ৩১ ভোট আর মল্লিক মহিউদ্দিন পেয়েছিলেন ১৪ হাজার ৯০১ ভোট।
ওই নির্বাচনে ভোটের ফলাফলে এবারের নির্বাচনে সর্বোচ্চ আলোচনায় থাকা শেখ মারুফুল ইসলাম ও মল্লিক মহিউদ্দিনের মধ্যে ভোটের ব্যবধান ছিলো ২ হাজার ৬৬৩। নির্বাচনে খান নজরুল ইসলাম অংশগ্রহণ করছেন না। এদিকে নির্বাচনের দলীয় মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী না থাকায় মূল দল এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিচ্ছিন্নভাবে তাদের পছন্দের প্রার্থীদের সমর্থন দিয়েছেন। আবার দলের কিছু অংশ নিশ্চুপও রয়েছেন।
এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী, পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় চেয়ারম্যান পদে মূলত লড়াই হবে এ দুই প্রার্থীর মধ্যে। এক্ষেত্রে বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ মারুফুল ইসলাম রয়েছেন বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে। গত নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর থেকেই তিনি পরবর্তী নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু করেছেন। বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় পরবর্তীতে তিনি নৌকা প্রতীক পাবেন না বিষয়টা মাথায় রেখে দল মত নির্বিশেষে উপজেলার সকল স্তরের মানুষের সাথে ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক তৈরি করেছেন। যার সুফল তিনি এ নির্বাচনে পাচ্ছেন।
এছাড়া উপজেলার ৬ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য থেকে শুরু করে সংরক্ষিত মহিলা সদস্যরা তার পক্ষে রয়েছেন।স্থানীয় সংসদ সদস্যের আশীর্বাদ এবং সমর্থন রয়েছে তার উপর।
নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ৮ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে ৬ জনই নবাগত।
বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোঃ আলী রেজা বাচা লড়ছেন চশমা প্রতীক নিয়ে, দিঘলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ জামিল মোর্শেদ মাসুমের প্রতীক টিউবওয়েল, আওয়ামী লীগ সমর্থিত মোঃ আসাদুজ্জামান খামারীর প্রতীক তালা, মোঃ বজলুর রহমান ফকিরের প্রতিক মাইক, শেখ ইনামুল হোসেনের প্রতীক পালকী, মোঃ তহিদ মিয়ার প্রতীক বই, ইমামুল ইসলামের প্রতীক উড়োজাহাজ, গোবিন্দ মণ্ডলের প্রতীক টিয়া পাখি।
সর্বশেষ ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে মোঃ আলী রেজা বাচা ৮ হাজার ৯১০ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে তিনি পেয়েছিলেন ১৭ হাজার ৩৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী খানজাহান আলী থানা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মোঃ মিজানুর রহমান রুপম পেয়েছিলেন ৮ হাজার ১২৯ ভোট। মোঃ তহিদ মিয়া পেয়েছিলেন ২ হাজার ৬২৩ ভোট। এবারের নির্বাচনে মোঃ মিজানুর রহমান রুপম অংশগ্রহণ করছেন না।
মহিলা ভাই চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩ জন। ৩ জনই আওয়ামী লীগ সমর্থিত। এরা হলেনঃ বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মমতাজ শিরীন ময়না। তার প্রতীক ফুটবল, নাসরীন আক্তার হীরার কলম আর নাসিমা বেগমের প্রতীক হাঁস।
গত নির্বাচনে মমতাজ শিরীন ময়না ২৩ হাজার ৭০৪ ভোট পেয়ে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী মোসাম্মৎ সামসুন নাহার। তার প্রাপ্ত ভোট ছিলো ২৩ হাজার ৪। এবারের নির্বাচনে সামসুন নাহারনঅংশগ্রহণ করছেন না।
৬ টি ইউনিয়ন নিয়ে দিঘলিয়া উপজেলা গঠিত। এর মধ্যে খুলনা মহানগরীর আড়ংঘাটা থানাধীন আড়ংঘাটা ইউনিয়ন ও খানজাহান আলী থানাধীন যোগীপোল ইউনিয়ন দিঘলিয়া উপজেলার অন্তর্ভুক্ত। ৬ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৩০ হাজার ৭৪৮। ২১ মে এ উপজেলার ৫৩ টি গ্রামের ভোটাররা ৫৪ টি ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে।
খুলনা গেজেট/এইচ