খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

আমি কি এতই কালো?

আয়শা আক্তার জ্যোতি

আমি আলো। নামটা আলো হলেও গায়ের রঙ আলো ছড়ায় না। শ্যাম বর্ণের মেয়ে গো আমি। তাই সবাই কটাক্ষ করে বলে ওই দেখ আলো আসলো। আর চারপাশটা কেমন জানি অন্ধকার হয়ে গেলো। বাবা-মায়ের বড় আদরের হলেও শ্যাম বর্ণটাকে উপেক্ষা করে চলাটা খুবই দুষ্কর। আমার আলো নামের দুই তিনটা গল্প বললে বুঝেন পারবেন আমার নামটার স্বার্থকতা।

প্রথম গল্পটা যখন আমি কলেজে ভর্তি হলাম। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে যখন কলেজে গেলাম তখন বুঝলাম ছোট্ট আলো হয়ে যদি বাকিটা অধ্যায় পার করতে পারতাম তাহলে বোধহয় ভালো হতো। এসএসসিতে জিপিএ 5 পেয়েও তেমন একটা লাভ হলো না। আমার শ্যাম বর্ণের জন্য আমার কোনো বন্ধু হলো না।  তবে হ্যা, ফাস্ট ইয়ারে কিছু না হলেও সেকেন্ড ইয়ারের প্রথম দিকে একটা ছেলের সাথে আমার বেশ ভালো বন্ধুত্ব হলো। আস্তে আস্তে আমি তার প্রতি দুর্বল হলাম। তারও আমাকে ভালো লাগতে শুরু করলো । পহেলা বসন্তে সে যখন আমাকে দেখা করতে বললো। আমি অনেক আনন্দের সাথে আমার মায়ের বিয়ে শাড়ি পরে, চুল খুলে, চোখে কাজল আর কপালে একটা ছোট টিপ পরে তার সামনে যখন গেলাম, দেখি তার হাত ভরা বিভিন্ন ধরণের প্রসাধনী। যা আমার শ্যাম বর্ণকে দুর করবে। সে আমাকে তড়িঘড়ি করে সবকিছু দিয়ে চলে গেলো। তখন বুঝলাম আমাকে ভালো লাগলেও আমার শ্যাম বর্ণ তার পচ্ছন্দ নয়।  না তখন আমি আর তার কাছে আমার শ্যাম বর্ণ নিয়ে ফিরতে পারলাম না। এইচএসসি পরীক্ষার দুই মাস আসে সে আস্তে করে আমার থেকে সরে যায়। ভুলে যায় আমাদের একসাথে কাটানো স্মৃতি। সবকিছু সামলে পরীক্ষাটা ভালো হয়।তারপর আর কখনো তার সাথে আমার দেখা হয় নি।

আচ্ছা আর একটা ঘটনা বলি শুনুন তাহলে। কলেজের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়। এইবার আর কোনো ছেলের প্রতি আমি দুর্বল হয়নি। কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবারে হলে যা হয়।  বাবা না চাইতেও বাবার বন্ধুর ভাইয়ের ছেলের জন্য আমাকে দেখতে আসে। তারা কিন্তু জানে আলো শ্যাম বর্ণের। যেদিন তারা আসে আমার তার সাধ্যের বাইরে গিয়ে তাদেরকে আত্মীয়তা করে। অনেক উৎসাহ দিয়ে মা আমাকে তাদের সামনে নিয়ে যায়।  আমি তাদের সামনে বসার পরে তাদের মুখে আমার কত প্রশংসা।

আন্টি : আলো একটু হেঁটে দেখাও তো মা?  দেখি তোমার চুল কত লম্বা?  আন্টির কত প্রশ্ন। আচ্ছা আলো তুমি রান্না পারো? সেলাই জানো? এটা পারো? ও্টই জানো।  সবকিছু শেষ হলে ছেলেটা তার মাকে আড়ালে ডেকে বলে-

ছেলে : আম্মা আমি একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করি। অনেক লোকের সাথে আমার উঠা বসা। আজকে এখানে কালকে ওখানে। এইরকম শ্যাম বর্ণের বউকে নিয়ে আমি কিভাবে সবসময় দাওয়াতে যাবো?  আমার একটা প্রেস্টিজ আছে না।

মাঃ কি করবো বল। তোর চাচুর কথায় তোর বাবা জোর করে নিয়ে এলো।

মা ছেলের কথোকথন শেষ হলে সময় মতো জানাবো বলে চলে গেলো। কিন্তু তাদের আর সময় হলো না।

আমার শ্যাম বর্ণের আরো একটা মজার কথা বলি শুনো। আমার ক্যাম্পাসের সিনিয়র। কেনো জানি না আমাকে বেশি কিছু দিন ধরে একটা ছেলে আমাকে ফলো করে। একদিন অনেক সাহস নিয়ে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। একদিন কোনোদিক কিছু না ভেবে সোজা প্রশ্ন কি চাই? কেনো ফলো করেন আমায়? উত্তরে তিনি বললো ভালো লাগে আমায়। তারপর তার সাথে আমার বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হয়।  আমরা একে অন্যকে বেশ পছন্দ করতাম। একসাথে ভালোমন্দ নিয়ে বেশ পাঁচটা বছর পার করেছিলাম । এইভাবে আমাদের পড়াশোনা শেষ হলো। আমি একটা স্কুলে চাকরি পেলাম। তিনি বিসিএস ক্যাডার হলেন।  তারপর পরে আস্তে আস্তে কেনো জানি না আমাদের যোগাযোগটা কমে যেতে থাকে। শেষ যেদিন আমাদের দেখা হয়। সেইদিন তার সাথে কথা বলে মনে হয় তার সাথে বোধ হয় আমার প্রথম দেখা।

এক পর্যায়ে সে আমাকে প্রশ্ন করল, আচ্ছা আলো তোমাদের মেয়েদের শরীরে কী নেশা আছে! আমরা ছেলেরা কেনো তোমাদের ভালোবাসি? তখন আমি বলি, একটা কথা আছে জানো তো পজিটিভ আর নেগেটিভ। পজিটিভ যতক্ষণ নেগেটিভকে কাছে পায় না ততক্ষণ ভাবে যত আকর্ষণীয় বা যতসুন্দর সবই বোধ হয় নেগেটিভ এর কাছে। তারপর আস্তে আস্তে পজেটিভ যখন নেগেটিভকে কাছে পায়, তখন বুঝতে পারে আমিও তার। তাদের কাছে আশা ভরসা আর অল্প অল্প করে গড়ে তোলার নাম ভালবাসা। ভালোবাসার দিয়েই তো ছেলেরা মেয়েদের মন জয় করে একে অন্যকে আপন করে নেয়।

এভাবেই আমরা শ্যামবর্ণের মেয়েরা প্রতিমূহুর্তেই আলোচনা, সমালোচনা এবং ঘৃণার পাত্রী হয়ে উঠি। আসুন মানসিকতা বদলাই।

খুলনা গেজেট/এএজে




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!