শুরুতে কাজের গতি ছিলো মন্থর। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। মেয়াদ শেষ হওয়ার ৬ মাসে দুই দফা সময় বৃদ্ধির পরও শেষ হয়নি খুলনা মহানগরীর আড়ংঘাটা থানাধীন তেলিগাতী কুয়েট রোডে অবস্থিত খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের আধুনিকায়নের কাজ। একই প্রকল্পের আওতায় সিলেট কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের আধুনিকায়নের কাজ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের আধুনিকায়নের কাজও শেষ হয়নি।
আধুনিকায়নের কাজটি হচ্ছে কর্মসংস্থান বিনিয়োগ কর্মসূচির জন্য দক্ষতা skills for employment investment Program (SEIP) প্রকল্পের মাধ্যমে। ১৮ মে SEIP প্রকল্পের সকল কার্যক্রম বাংলাদেশে শেষ হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায় এরপর থেকে SEIP প্রকল্পের আর কোন কার্যক্রম বাংলাদেশে থাকবে না। সকল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। কর্মসংস্থান বিনিয়োগ কর্মসূচির জন্য দক্ষতা skills for employment investment Program (SEIP) প্রকল্পের আওতায় এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)’র আর্থিক সহায়তায় অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়িত হচ্ছে প্রকল্পের আধুনিকায়নের কাজ। এদিকে আগামী মাসে SEIP ‘র কার্যক্রম শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রকল্পের অর্থ ছাড় নিয়ে সংশয় থেকে যায়। সংশয় থেকে যায় প্রকল্পের বাকি ১৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন নিয়েও।
এ ব্যাপারে কর্মসংস্থান বিনিয়োগ কর্মসূচির জন্য দক্ষতা SEIP প্রকল্পের এসইপি আসমা আরা বেগমের সংগে ২০ এপ্রিল রাতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আগামীকাল আমার কর্ম দিবস শেষ হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না। আপনি মাসুদুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আধুনিকায়ন প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দ্যা ইঞ্জিনিয়ার্স এন্ড আর্কিটেক্টস লিঃ ‘র প্রজেক্ট ম্যানেজার (পিএম) মোঃ দেলোয়ার হোসেন খুলনা গেজেটকে বলেন, আগামী মাসে SEIP এর কার্যক্রম শেষ হলেও আমাদের প্রজেক্টের কাজে কোন প্রভাব পড়বে না। প্রকল্পের ৮৫ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বাকি রয়েছে শুধু ফিনিশিং এর কাজ। ৩০ জুনের মধ্যে বাকী ১৫ শতাংশ কাজ শেষ হবে ইনশাল্লাহ। এ লক্ষ্যে দিবা রাত্রি দুই শিফটে আমাদের ২’শ শ্রমিক কাজ করছে। তিনি বলেন, পুরাতন প্রশাসনিক ভবন, ওয়ার্কশপ বিল্ডিং, ১১ হাজার ভোল্টেজের বৈদ্যুতিক লাইন এবং প্রকল্প এলাকার গাছপালা অপসারণের পূর্বেই কর্তৃপক্ষ টেন্ডার আহ্বান করার পর কার্যাদেশ প্রদান করে। প্রকল্প এলাকায় ভবন, গাছপালা, ১১ হাজার ভোল্টেজের বৈদ্যুতিক লাইন অপসারণে যথেষ্ট সময় ক্ষেপন হয়। যার কারনে আমাদের কাজ শুরু করতে কিছুটা বিলম্ব হয়। তিনি আরো বলেন,কাজ শুরুর পর থেকে নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য দাফায় দফায় বৃদ্ধি পেলেও আমরা কখনোও কাজ বন্ধ করিনি। কাজের গুণগতমান বজায় রেখে শুরু থেকে আমরা কাজ করছি। প্রকল্পের কাজ শেষ করে আমাদের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। তারপরও আমাদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সুনাম রক্ষার্থে কোন গাফিলতি বা ত্রুটি না করে যথাযথভাবে কাজটি করে যাচ্ছি। তাছাড়া কাজের গুণগতমান তদারকির জন্য কোরিয়ান কারিগরি কোম্পানি Dosun-Topec-Bets JV ‘র কনসালটেন্ট রয়েছে।কোম্পানির কনসালটেন্ট প্রতিনিয়ত আমাদের কাজের তদারকি করছেন।
জানা যায়, খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি দেশ বিদেশে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা পূরণে কাজ করে যাচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো কর্তৃক কেন্দ্রটি পরিচালিত হয়।
১৯৭৭ সালে ১৩ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত হলেও দীর্ঘদিনে প্রতিষ্ঠানটির উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়ন হয়নি।
দীর্ঘ সাড়ে চার দশক পর ২০২২ সালের ১৫ মে প্রতিষ্ঠানের পুরাতন, জরাজীর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ প্রশাসনিক এবং প্রশিক্ষণের ওয়ার্কশপগুলো ভেঙ্গে নতুন করে প্রতিষ্ঠানটির আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়। সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে, দৃষ্টিনন্দন এবং আধুনিকতার ছোঁয়ায় নির্মিত হচ্ছে ৩ তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবন। ৫ তলা ফাউন্ডেশনেরন প্রশাসনিক ভবনের প্রথম পর্যায়ে তিনতলা নির্মিত হচ্ছে। পরবর্তী পর্যায়ে বাকি দুই তলা নির্মিত হবে। প্রশাসনিক ভবনের দৈর্ঘ্য ২৪০ ফুট এবং প্রস্থ ৫৬ ফুট। উপরে ওঠার জন্য বসানো হচ্ছে লিফট। নির্মিত হচ্ছে আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ৮টি ওয়ার্কশপ, ১টি সাব স্টেশন বিল্ডিং, ফায়ার প্রোটেকশন হাউজ সহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ। skills for employment investment Program (SEIP) ‘র প্রকল্পের আওতায় এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকারও কোরিয়ান সরকারের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় আধুনিকায়ন হচ্ছে এ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি। কাজের গুণগত মান তদারকির জন্য কোরিয়ান কারিগরি কোম্পানি DOSUN-TOPEC -BETS. jV কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করছে। দ্যা ইঞ্জিনিয়ার্স এন্ড আর্কিটেক্টস লিঃ নামে ঢাকার একটি অভিজ্ঞ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজটি করছে। কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের আধুনিকায়নের কাজ শেষ হলে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রশিক্ষণ নিতে আসা যুবকরা প্রশিক্ষণের আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে। উন্নত হবে প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণের মান। দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে প্রতিষ্ঠানটি আরো ভূমিকা রাখতে পারবে। এছাড়াও কোরিয়ান সরকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিতে সফটওয়্যারের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করবে এবং কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে। ফলে প্রতিষ্ঠানটি হবে দেশের অন্যতম একটি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।
২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি আধুনিকায়নের জন্য টেন্ডার আহবান করেন skills for employment investment Program(SEIP)’র প্রজেক্ট ডাইরেক্টর মোঃ ইকলাসুর রহমান।
এদিকে শনিবার ২০ এপ্রিল সরজমিনে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায় প্রচন্ড তাপদাহ উপেক্ষা করে শ্রমিকরা দ্রুতগতিতে কাজ করছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরাও ব্যস্ত তাদের স্ব স্ব কাজ নিয়ে।
খুলনা গেজেট/এনএম