র্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন বলেন, ‘মিয়ানমার অনেক আগে থেকেই চাচ্ছে বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য, অনেক আগে থেকেই। রোহিঙ্গা ঢোকানো থেকে শুরু করে পায়ে পাড়া দিয়ে…। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়চেতা মনোভাব ও প্রজ্ঞা; উনি কখনো যুদ্ধে জড়াবেন না। কারণ, আমি এখন যুদ্ধে জড়ানো মানে দেশটা শেষ হয়ে যাওয়া।’
শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র্যাবপ্রধান এই মন্তব্য করেছেন। কাশিয়ানীর এম এ খালেক ডিগ্রি কলেজ মাঠে কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি।
মিয়ানমার সরকারের যুদ্ধে জড়ানোর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে র্যাব প্রধান এম খুরশীদ হোসেন বলেন, ‘মিয়ানমারে এখন সামরিক সরকার রয়েছে। তাঁরা এখন চাচ্ছে যে যুদ্ধ বাধাতে পারলে ও (মিয়ানমারের জান্তা সরকার) সেফ (বেঁচে যাবে) হবে। কারণ ওর দেশে যে অবস্থা তৈরি হয়েছে ওর দেশের আরাকান আর্মি ওর বিরুদ্ধে গিয়ে বিভিন্ন জায়গা দখল করছে। সরকার (মিয়ানমারের জান্তা সরকার) বাঁচার জন্য উসকানি দিচ্ছে।’
মিয়ানমার এখন মাদক চোরাচালানের বড় রুট উল্লেখ করে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, মাদক এখন মিয়ানমার থেকে বেশি আসছে। এটি পরিকল্পিতভাবে পাঠানো হচ্ছে। মাদক নিয়ন্ত্রণ এখন বড় চ্যালেঞ্জ। যেকোনো মূল্যে এ রুট বন্ধ করা হবে। মাদক হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসা। রাতারাতি ধনী হওয়ার ব্যবসা। কারা এ ব্যবসা করেন, তা জনপ্রতিনিধিসহ সবাই জানে। কিন্তু সবাই সবকিছু জানলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করে না। কোনো একক বাহিনীর পক্ষে মাদক নির্মূল করা সম্ভব না। মাদক নির্মূল করতে হলে সবাই মিলে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
এম খুরশীদ হোসেন আরও বলেন, পরবর্তী প্রজন্মের কাছে যদি মাদক চলে যায়, তাহলে দেশ হুমকির মুখে পড়বে। ভারতীয় সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করা হলেও মিয়ানমার থেকে ইয়াবা, আইসসহ বিভিন্ন মাদক সমানে পাচার হচ্ছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে ‘অল আউট অ্যাকশনে’ যেতে হবে। গডফাদার, কিশোর গ্যাং কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
খুরশীদ হোসেন বলেন, নতুন প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে শুধু বই-খাতা দিলে হবে না। এই বাস্তবতা কিন্তু এখন আর নেই। তাই বাচ্চাদের শৈশব থেকে শেখাতে হবে। নীতি-নৈতিকতা পরিবার থেকেই শিখতে হয়। শুরু থেকেই বাচ্চাদের গড়ে তুলতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজে পড়ে এসব শিখতে পারবে না। মূল নীতি–নৈতিকতা পরিবার থেকে শিখতে হবে, এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের মূল ভূমিকা রয়েছে ও এরপর শিক্ষকদের।
শিক্ষক ও অভিভাবকদের উদ্দেশে মহাপরিচালক বলেন, আপনাদের মডেল হতে হবে। কারণ, পরিবারের পরেই আপনাদের স্থান। আপনাদেরই সঠিক শিক্ষা দিতে হবে। আর ছেলেমেয়েকে স্কুল–কলেজে পাঠিয়ে ঘরে বসে থাকলে হবে না। খবর রাখতে হবে মাদকের সহজলভ্যতা সন্তানটিকে শেষ করে দিচ্ছে কি না।
দেশে অভিজ্ঞ লোকের অভাব রয়েছে উল্লেখ করে খুরশীদ আরও বলেন, এখনকার প্রত্যেকটি ক্যাডারে মধ্যে পেশাদারির খুব ঘাটতি রয়েছে। যেমন লেখাপড়ায় ঘাটতি রয়েছে, পেশাদারিতে ঘাটতি রয়েছে, শৃঙ্খলায় ঘাটতি রয়েছে। এটাকে পূরণের চেষ্টা এখন থেকেই করতে হবে। যাতে পরবর্তী প্রজন্ম অবাধ্য না হয়ে যায়।
এম এ খালেক ডিগ্রি কলেজ মাঠে আয়োজিত সংবধর্না অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন র্যাব-৬–এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ফিরোজ কবির। আরও উপস্থিত ছিলেন ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম, এম এ খালেক ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ কে এম মাহাবুব, ভাটিয়াপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক জাহিদুর রহমান, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিম তালুকদার, পুলিশ সুপার (অপারেশন) কাজী মাহাবুবুল আলম প্রমুখ।
আলোচনা সভা শেষে ২০২৩ সালের কাশিয়ানী উপজেলার এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ১০৯ শিক্ষার্থীদের হাতে ক্রেস্ট ও জন প্রতি ১০ হাজার করে বৃত্তির টাকা তুলে দেন খুরশীদ হোসেন।
খুলনা গেজেট/কেডি