২১ ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটির দিন। এমন দিনেও বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের অ্যাথলেটিক্স ট্র্যাকে ব্যস্ততা। ক্ষুদে অ্যাথলেটরা টার্ফে দৌড়াচ্ছেন। পাশে দাঁড়িয়ে দেখছেন এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে দুই পদকজয়ী জহির রায়হান ও মাহফুজুর রহমান।
ইরানের তেহরান থেকে গতকাল (মঙ্গলবার) রাতে দেশে ফিরে আজ দুপুরেই নিজেদের চিরচেনা ভুবনে এসেছেন অ্যাথলেটরা। টার্ফের ওপর হয়েছে মিষ্টিমুখ ও ফুল পরিয়ে দেওয়া পর্ব। ৪০০ মিটার স্প্রিন্টে রৌপ্যজয়ী জহির রায়হান ও হাইজাম্পে ব্রোঞ্জজয়ী মাহফুজুর রহমান উভয়ের চাহিদা প্রায় একই, ‘আমরা নিয়মিত অনুশীলন এবং পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পেলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও সফল হতে পারব।’
মাহফুজুর রহমান ২০১৯ সালে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে রৌপ্য পেয়েছিলেন। পাঁচ বছর পর দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে এশিয়ান পদক গলায় ঝুলছে তার। ফেডারেশনের কাছে তার দাবি, ‘উন্নত মানের অনুশীলন ও বিদেশি কোচের সান্নিধ্য চাই। এতে আমার পারফরম্যান্স আরও ভালো হবে।’ ২০১৭ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে বিশ্ব যুব অ্যাথলেটিক্সে সেমিফাইনালে ওঠে চমকে দিয়েছিলেন জহির। তার সঙ্গে দৌড়ানো অনেকেই এখন বিশ্ব অ্যাথলেটিক্সের প্রতিষ্ঠিত নাম। ধারাবাহিক অনুশীলন থাকলেও বাংলাদেশের অ্যাথলেটদেরও বিশ্ব পর্যায়ে থাকার সক্ষমতা আছে বলে মনে করেন জহির, ‘আমরা এশিয়ান পর্যায়ে জিতেছি, ধারাবাহিকভাবে অনুশীলনে থাকলে আমরা অলিম্পিক পর্যায়েও খেলতে পারব।’
অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু জহির-মাহফুজের চাহিদার প্রেক্ষিতে বলেন, ‘তারা যে প্রত্যাশা করছে এটা খুবই স্বাভাবিক এবং ন্যায্য। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সেই সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা চেষ্টা করছি তাদের চাহিদা পূরণের। একটা পরিকল্পনা আমাদের সভাপতিকে দেওয়া হবে। সভাপতি অবশ্যই সেটা বাস্তবায়নে সহায়তা করবেন।’ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের প্রাথমিক পরিকল্পনা রয়েছে জহির-মাহফুজের সঙ্গে প্রতিভাবান রিতু, রুমকিসহ আরও কয়েকজনকে ভারতে কয়েক মাসের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
ইংল্যান্ড প্রবাসী ইমরানুর রহমান ২০২২ সালে ঢাকায় এসে জাতীয় রেকর্ড গড়ে দ্রুততম মানব হন। এরপর থেকেই ফেডারেশনের আকর্ষণ ইমরানকে ঘিরে। আন্তর্জাতিক প্রায় প্রতিটি প্রতিযোগিতায় ইমরান অংশগ্রহণ করেছেন। সাবেক-বর্তমান অনেক অ্যাথলেটের এ নিয়ে খানিকটা অনুযোগ থাকে। জহির-মাহফুজের পদক যার খানিকটা প্রতিবাদী উত্তর বলে মনে করছেন তারা। এই প্রসঙ্গে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের মন্তব্য, ‘আমরা ফেডারেশন কিন্তু বেশি খেলোয়াড় পাঠানোর চেষ্টা করি। এশিয়ান অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে পাঁচজন গিয়েছে, এবার ইনডোরেও তাই। আমাদের ফেডারেশনের খেলায় বেশি অ্যাথলেট অংশগ্রহণের ব্যাপারে কার্পণ্য থাকে না। অলিম্পিক এসোসিয়েশনের অধীনের গেমসগুলোতে অ্যাথলেট সংখ্যা নির্ধারণ করে অলিম্পিক।’
হাইজাম্পার মাহফুজের পদকের মাধ্যমে ফেডারেশন স্প্রিন্টের বাইরের ইভেন্টগুলোতেও বিশেষ নজর দিচ্ছে বলে জানান আব্দুর রকিব মন্টু, ‘১০০ মিটার স্প্রিন্টে প্রতিযোগি থাকে ৬০ জনের বেশি। ৪০০ মিটারে ৪০ জন। এরকম ইভেন্ট ভেদে ভিন্নতা রয়েছে। আমরা স্প্রিন্টের পাশাপাশি জাম্প, থ্রো এবং অন্য ইভেন্টেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের শটপুট রেকর্ডধারীরা এখন দক্ষিণ এশিয়ার মানের পারফর্ম করছে।’
গত বছর শেখ কামাল স্কুল-মাদ্রাসা টুর্নামেন্ট থেকে ৩৫ জন প্রতিভাবানকে বাছাই করেছিল ফেডারেশন। তাদের মধ্যে ১৮ জন ঢাকায় এবং ১২ জন বিকেএসপিতে অনুশীলন শুরু করেছে সপ্তাহ দু’য়েক। আজ দুপুরে জহির-মাহফুজকে দেখে অনুপ্রাণিত ক্ষুদে অ্যাথলেটরা। ক্ষুদে অ্যাথলেটদের এই প্রকল্প চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন সাধারণ সম্পাদক, ‘আমাদের আবাসন সমস্যা রয়েছে। এখানে অ্যাথলেটরা অনুশীলন করছে। তবে থাকতে হচ্ছে ভলিবল বা অন্য কোনো স্থাপনায়। আবাসনের পাশাপাশি যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণও সংকট। এরপরও আমরা মেধাবীদের অ্যাথলেটিক্সে ধরে রাখার চেষ্টা করব।’
ইরান থেকে ইমরানুর রহমান ইংল্যান্ডে ফিরে গেছেন। ২ মার্চ স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে বিশ্ব ইনডোর অ্যাথলেটিক্সে ৬০ মিটারে অংশ নেবেন তিনি। ওই আসরের সভায় যোগ দিতে যাবেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুর রকিব মন্টু।
খুলনা গেজেট/ এএজে