খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  হাইব্রিড মডেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, রাজি পাকিস্তান; ভারতের ম্যাচ দুবাইয়ে : বিসিবিআই সূত্র
  গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত, গুম কমিশনের সুপারিশে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে

এক বছরেও শেষ হয়নি কুয়েট এপ্রোচ সড়কের উন্নয়ন কাজ, দুর্ভোগ

একরামুল হেসেন লিপুু

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)’র প্রধান ফটকের সামনের এপ্রোচ সড়ক উন্নয়ন কাজ শুরু হয় গত বছরের জানুয়ারি থেকে। তখন থেকেই গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি দিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, কর্মকর্তা কর্মচারী, প্রশিক্ষণার্থী, কিন্ডারগার্ডেন স্কুলের কোমলমতি শিশুসহ যাতায়াতকারী সাধারণ মানুষ এবং যানবাহন চালকদের দুর্ভোগ শুরু হয়। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

চলতি মাসের ২৬ জানুয়ারি কাজের মেয়াদ শেষ হলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এখনও কাজ শেষ করতে পারেনি। এক বছরে সড়কের দু’ পাশে ড্রেনের কাজের মোট অগ্রগতি ৬০ শতাংশ হলেও  মূল সড়কের কাজ এখনো শুরু করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মাহবুব ব্রাদার্স প্রাঃ লিমিটেড।

ড্রেনের কাজ করতে যেয়ে সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলায় ক্ষুব্ধ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সড়কটির উন্নয়ন কাজের বাস্তবায়নকারী সংস্থা কেসিসি’র মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক গত বছরের ১২ জানুয়ারি সড়কটির উন্নয়ন কাজের উদ্বোধনের সময় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তার সে নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি।

জানা যায়, খুলনা যশোর জাতীয় মহাসড়কের ব্যস্ততম ফুলবাড়িগেট থেকে কুয়েট এপ্রোচ সড়ক শুরু। এপ্রোচ সড়কের পরেই রয়েছে তেলিগাতী কেডিএ সিটি আউটার বাইপাস সড়ক। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(কুয়েট) ছাড়াও সড়কটিতে রয়েছে খুলনা সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (এইচএস টি টিআই) , গভঃ ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, খুলনা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, খুলনা মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, খানজাহান আলী থানা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, মিজান প্রি ক্যাডেট স্কুল, আল হিরা প্রি ক্যাডেট মাদ্রাসাসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান, ক্লিনিক , প্যাথলজিসহ অসংখ্য দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রশিক্ষণার্থীসহ অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করে থাকে। চলাচল করে শতশত যানবাহন। কিন্তু গত এক বছরে সড়কটির দুই পাশ দিয়ে ড্রেন নির্মাণসহ উন্নয়ন কাজের খোঁড়াখুঁড়ির কারণে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি দিয়ে যাতায়াতকারী মানুষ এবং যানবাহন চালকদের যেন দুর্ভোগের শেষ হচ্ছে না। বর্ষা মৌসুমে দুর্ভোগের মাত্রা বেড়ে দ্বিগুণ হয় । আর শুষ্ক মৌসুমে সড়কটি দিয়ে যাতায়াতকারীদের ধূলাবালির যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়।

কুয়েটের অবকাঠামো এবং একাডেমিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী ড. মোঃ জুলফিকার হোসেন খুলনা গেজেটকে বলেন, শুরু থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অগোছালোভাবে কাজ শুরু করে। কাজে ধীরগতির সাথে সাথে পরিকল্পনার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। শুরু থেকে কাজটি সম্পন্নের ব্যাপারে সিটি মেয়রের আন্তরিকতা পরিলক্ষিত হলেও সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীদের যথেষ্ট গাফিলতি রয়েছে।

তিনি বলেন, গত এক বছরে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ১১৮৫ মিটার ড্রেন নির্মাণের কাজই শেষ করতে পারেনি। ড্রেন নির্মাণের কাজ শেষ না করে মূল সড়কের কাজ করতে পারবে না তারা। বর্ষা মৌসুমের আগে সড়কের ইটের খোয়ার কাজ সম্পন্ন করতে না পারলে সড়কটি দিয়ে চলাচলকারীদের দুর্ভোগের মাত্রা বহুগুনে বেড়ে যাবে । তিনি বলেন তাড়াহুড়া করে ড্রেনের কাজ করতে যেয়ে ২ থেকে আড়াই ফুট চওড়া ড্রেন নির্মাণের জন্য তারা বড় এসকোভিটার ব্যবহার করছে। বড় এসকোভিটার বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানার ভীতর ঢুকিয়ে ড্রেন নির্মাণের মাটি খননের ফলে দক্ষিণ পাশের সম্পূর্ণ সীমানা প্রাচীর ধসে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে তারা হুমকীর মুখে ফেলে দিয়েছে।

কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান বলেন, কাজের ধীরগতি এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হওয়ায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের যথেষ্ট গাফিলতি রয়েছে। কাজের গতি বাড়ানো এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করার জন্য তাদেরকে বারবার মৌখিক এবং লিখিতভাবে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। সর্বশেষ তাদেরকে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে কাজের অতিরিক্ত ২০ শতাংশ অগ্রগতি দেখাতে না পারলে কন্টাক্ট বাতিল করা হবে।

কুয়েট এপ্রোচ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার রবিউল হোসেন বিদ্যুৎ বলেন, শুরু থেকে নানা জটিলতার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে কাজটি করতে হচ্ছে। সড়কের দক্ষিণ পাশের জমির মালিকেরা ১ ইঞ্চি জায়গাও ছাড় না দিয়ে তাদের ঘরবাড়ি, দোকানপাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছে। ফলে ড্রেন নির্মাণ করতে যেয়ে শুরু থেকে আমাদেরকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে কাজ করতে হচ্ছে।সম্মুখীন হতে হচ্ছে নানা ধরনের জটিলতার। তিনি বলেন, কুয়েট প্রশাসনের অনুরোধে দুই/আড়াই মাস পর আমরা কাজ শুরু করেছি । তাদের সঙ্গে সমন্বয় করেই আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানার পাশ দিয়ে ড্রেন নির্মাণের কাজ করছি। কেডিএ, কেসিসি এবং এলজিইডি এই তিনটি সংস্থার সমন্বয়ে কুয়েট এপ্রোচ সড়ক উন্নয়নের কাজ চলছে। কেডিএ বলছে কুয়েটের সীমানা ১০ ইঞ্চি সড়কের ভীতর ঢুকে গেছে। কেসিসির প্রধান প্রকৌশলীর আল্টিমেটাম সম্পর্কে তিনি বলেন, এডিশনাল কাজের ২০ শতাংশ কাজ ২৮ জানুয়ারির মধ্যে আমাদেরকে করতে বলেছে এবং তারা আমাদের কাজের একটা পরিকল্পনা চেয়েছে। তাদের চাহিদা মোতাবেক আমরা শতভাগ কাজ করতে না পারলেও ৮০ শতাংশ কাজ করেছি। তিনি বলেন, আগামী জুনের পর জিওবি এবং এডিবি এ জাতীয় প্রজেক্ট বাতিল করবে। সুতরাং জুন পর্যন্ত আমরা সময় পাচ্ছি। আশা করি তার আগেই মার্চের মধ্যে আমরা কাজটি শেষ করতে পারবো।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) কর্তৃপক্ষের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে এলজিইডি ও কেসিসি’র যৌথ উদ্যোগে দ্বিতীয় নগর অঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গত বছরের জানুয়ারি থেকে সড়কটি আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সিটি কর্পোরেশন গত বছরের ১২ জানুয়ারি মাহবুব ব্রাদার্স প্রাঃ লিঃ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সড়কটি আধুনিকায়ন এবং সৌন্দর্য বর্ধনের উন্নয়ন কাজের কার্যাদেশ প্রদান করে। কার্যাদেশ অনুযায়ী চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো।

কার্যাদেশ অনুযায়ী খুলনা-যশোর মহাসড়কের ফুলবাড়িগেট হতে গভঃ ল্যাবরেটরি হাইস্কুল পর্যন্ত ১১৮৫ মিটার সড়ক আধুনিকায়নে ব্যয় ধরা হয় ২২ কোটি ৮৪ লাখ ৫৪ হাজার ২৩০ টাকা। গভারমেন্ট অফ বাংলাদেশ (জিওবি) এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) কাজটিতে অর্থায়ন করছে।

প্রকল্পের আওতায় খুলনা-যশোর মহাসড়কের কুয়েট রোডের প্রবেশদ্বারে আধুনিক ট্রাফিক আইল্যান্ড ও গাড়ি পার্কিং এর সুব্যবস্থা থাকবে। কুয়েট রোডের প্রবেশদ্বার হবে ৬০ ফুট প্রশস্ত। ২ লেন বিশিষ্ট সড়কটির প্রত্যেক লেন প্রশস্ত হবে সাড়ে ২২ ফুট। ১ ফুট উঁচু হবে সড়কটি। সেই হিসেবে মূল এপ্রোচ সড়কটি প্রশস্ত হবে ৪৫ ফুট। সড়কের মাঝখানে রোড ডিভাইডারসহ দুই পাশে পানি নিষ্কাশনে থাকবে ৫ ফুট প্রশস্ত ড্রেন। ড্রেনের উপর দিয়ে জনসাধারণের চলাচলের জন্য ফুটপাতের ব্যবস্থা থাকবে। কুয়েট প্রধান ফটকের সামনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় নির্মিত হবে দৃষ্টিনন্দন আইল্যান্ড।

গত বছরের ১২ জানুয়ারি প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনকালে তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময় ২০২৪ সালের ২৬ জানুয়ারির মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!