খুলনার কয়রা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান গণমানুষের আস্থাভাজন নেতা মাওলানা আ খ ম তমিজ উদ্দিনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শুক্রবার (১৯ জানুয়ারী) বিকেল তিনটায় মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের মাঠে নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। মরহুমের জানাযা নামাজে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তিনি দীর্ঘদিন বার্ধক্য জনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। গতকাল (১৮ জানুয়ারি) বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ৫ মিনিটে তিনি নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। এক ছেলে, তিন মেয়ে ও স্ত্রী সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
তার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে এক নজরে দেখতে ও জানাযা নামাজে অংশ নিতে দূর-দূরান্ত থেকে ধর্ম, বর্ণ, দল-মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এসএম শফিকুল ইসলাম,ভাইস চেয়ারম্যান এড. কমলেস কুমার সানা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা আলম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামাল হোসেন, কয়রা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) টিপু সুলতান, কয়রা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এ্যাড. কেরামত আলী, বিশিষ্ট্য আলেমে দ্বীন মাওলানা রেজাউল করিম, মাওলানা এমরান হুসাইন, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, মাওলানা গোলাম সারওয়ার, মুন্সি আব্দুল হালিম, মাওলানা নুরুল হুদা, কয়রা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক এড. মোমরেজুল ইসলাম,কালনা আমিনীয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনূস আলী, কপোতাক্ষ ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ অদৃশ আদিত্য, কয়রা উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান এড. আব্দুর রশিদ, পিপি এড. মোশাররফ হোসেন, এড. অম্বিকা চরণ সানা, ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম, মোঃ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, শাহনেওয়াজ, আব্দুস সামাদসহ রাজনৈতিক-সামাজিক নেতৃবৃন্দ, সাবেক চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, শিক্ষক ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।জানাযা নামাজের ইমামতি করেন তার জামাতা মাওলানা মুজিবর রহমান।
মাওলানা আ খ ম তমিজ উদ্দিন ১৯৯১ সালে প্রথম কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। পরে ২০১৪ সালে পুনরায় কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকার পরেও পরবর্তীতে তিনি আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন নি। তিনি সততা ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। ধর্ম, বর্ণ, দল-মতের উর্ধে তিনি সর্বস্তরের মানুষের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন। অতি সাধারণ মানুষের ন্যায় জীবন-যাপন করতেন।
১৯৫৪ সালের এক আগষ্ট কয়রা উপজেলার দেয়াড়া গ্রামে তার জন্ম। ১৯৬৭ সালে নাকশা আলীম মাদ্রাসা থেকে প্রথম বিভাগ নিয়ে দাখিল, পরে একই মাদ্রাসা থেকে আলীম পাশ করেন। ১৯৭১ যশোরের লাউরী রামনগর কামিল মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পাশ করেন। ১৯৮১ সালে ঢাকার দুর্বাটি মদিনাতুল উলুম কামিল মাদ্রাসা থেকে কামিল পাস করেন।
এছাড়া ১৯৭৬ সালে খুলনা সিটি কলেজ থেকে বিএ পাশ করেন ও ১৯৮১ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবী বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। তাছাড়া খুলনা সিটি ‘ল’ কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রী লাভ করেন। দীর্ঘদিন কয়রা উপজেলা পল্লী চিকিৎসক সমিতি, দেয়াড়া জামে মসজিদ ও জাকারিয়া শিক্ষা নিকেটন স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮১ সালের ১ এপ্রিল কালনা আমিনীয়া বহুমুখী ফাজিল মাদ্রাসায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে তাঁর কর্ম জীবন শুরু। পরে ১৯৮৬ সালে একই প্রতিষ্ঠানে আরবী প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান, পরবর্তীতে সহকারী অধ্যাপক (আরবী) পদে পদোন্নতি লাভ করেন । ২০১৪ সালের ১ আগষ্ট চাকরী থেকে অবসরে যান।
তিনি ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে গিয়েছেন এবং ইসলামী আন্দোলনের প্রচার ও প্রসারে তাঁর অনেক অবদান রয়েছে। তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর খুলনা জেলার (দক্ষিণ) সাবেক আমীর ছিলেন।
খুলনা গেজেট/ এএজে