সারাদেশের ন্যায় শীতে কাঁপছে খুলনা। মহানগরীসহ জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় গেল কয়েকদিনের শীতে শীতে জনজীবন স্থবির হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিশেষ করে রাতের দিকে তাপমাত্রা ১০ থেকে ১১ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসছে। এতে বিপাকে পড়ছে শিশু ও বয়স্ক মানুষেরা। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, এ অবস্থার আরো ২/৩দিন স্থায়ী হবে।
খুলনা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের সরকারি আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ জানান, সারদেশের ন্যায় খুলনা অঞ্চলেও তাপমাত্রা কমছে। শনিবার খুলনায় তাপমাত্রা ছিল ১২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এ বছরে খুলনাতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে । এ রকম তাপমাত্রা আরও ২-৩ দিন থাকবে। ১৫ জানুয়ারির পর তাপমাত্রা একটু বাড়বে। তবে ২০ জানুয়ারি পর আবার তাপমাত্রা কমবে।
তিনি বলেন, খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাাত্রার এমন অবস্থা আরো কিছুদিন চলবে।
এদিকে তাপমাত্রা কমার প্রভাব দেখা যাচ্ছে, নগরীর বিপনী বিতানগুলোতে। শীত নিবারণের জন্য গরম কাপড়, হাত-পা মোজা, টুপি, মাফলার, জ্যাকেট কিনতে অনেকেই সেখানে ছুটছেন ।
নগরীর রেলওয়ে মার্কেট এমন এক ক্রেতা মনিরুল ইসলাম জানান, এখন মনে হচ্ছে শীতকাল এসেছে। ভেবে ছিলাম এ বছর শীতের দেখা মিলবে না। এখন অবস্থা! তাই জ্যকেট কিনতে চলে এসেছি। কিন্তু শীত দেখে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছে। আগে যেসব পোশাক ৫০০/৬০০ টাকা কেনা যেত। সেটি এখন ৭০০-৯০০ টাকা হাকাচ্ছেন।
দোকানো আসা সোহেল রানা বলেন, এখন ব্যবসায়ীদের পোয়াবাড়ো। দাম হাকিয়ে বসে থাকছেন। তারপরও পছন্দ মতো একটি সোয়েটার কিনতে পেরেছি।
তবে শীতে কষ্টে পড়েছেন নিম্ব আয়ের মানুষেরা। রিক্সা চালক আসলাম শেখ বলেন, শীতে অবস্থা কাহিল। কিন্তু পেটতো বাঁচাতে হবে। তাই রিক্সা নিয়ে বের হয়েছি। শীতে লোকজনও কম। আবার আয় না হলে সংসার চালতে পারবো না। আমাদেরই সমস্যা বেশী।
অবশ্য তীব্র শীতে পিঠে-পুলির দোকানে বেচাবিক্রি জমজমাট। নগরীর তারেরপুকুর, মোল্লাবাড়ি মোড়, দোলখোলা, বৈকালী, খালিশপুরের মৌসুমী পিঠার দোকানে ভিড় লক্ষনীয়।
পরিবার নিয়ে পিঠা খেতে আসা মোরশেদ আলম বলেন, শীতে পিঠে খাওয়ার মজাই আলাদা। বাড়িতে পিঠা তৈরীতেও ঝামেলা । তাই ছেলে ও বউকে নিয়ে চলে এলাম তারেরপুকুর। কিন্তু যে ভিড়। দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক গণমাধ্যমকে বলেন, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য যদি ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে আসে, সেখানে শীতের অনুভূতি বাড়তে থাকে। কিন্তু পার্থক্য যদি পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামে, তাহলে শীতের অনুভূতি প্রকট থেকে প্রকটতর হয়। অর্থাৎ হাড়কাঁপানো শীত অনুভূত হয়।
শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) বিভিন্ন জেলার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার তুলনা করে দেখা গেছে-রংপুর, দিনাজপুর, তেঁতুলিয়ার মতো উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ অঞ্চলেই তাপমাত্রার পার্থক্য পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম। এছাড়া ঢাকা, বগুড়া, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলেও তাপমাত্রার পার্থক্য ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কম।
বেশিরভাগ জেলাতেই সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়াতে শীতের অনুভূতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোথাও কোথাও তা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে বলে জানান আবহাওয়াবিদ মল্লিক।
নিয়ম অনুযায়ী, তাপমাত্রা আট থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু, ছয় থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামলে মাঝারি এবং চার থেকে ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়। আর তাপমাত্রা চার ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে হয় অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।
শীত কতদিন থাকতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুরো জানুয়ারিজুড়েই শীতের অনুভূতি থাকবে। ১৬ থেকে ১৮ জানুয়ারির দিকে দেশজুড়ে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া ও ঝড়ো বাতাসসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই বৃষ্টিপাত থেমে গেলে তাপমাত্রা কমে গিয়ে ২০ তারিখের পরে মৃদু বা মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ আবার শুরু হতে পারে
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়ার অবস্থায় বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে বলে জানানো হয়েছে।
সেই সঙ্গে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারী থেকে ঘন কুয়াশা থাকতে পারে এবং এটি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি থাকতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও দিনে ঠান্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে।
রোববারের (১৪ জানুয়ারি) পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। পাশাপাশি মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এটি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি থাকতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও দিনে ঠান্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে।
এছাড়া আগামী সোমবারও (১৫ জানুয়ারি) একই অবস্থা বিরাজ করতে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তবে আগামী পাঁচ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এই সপ্তাহের মাঝামাঝি সময় থেকে পরের সপ্তাহের শুরুর দিকে বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।
খুলনা গেজেট/কেডি