খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

খুলনা-৪ আসনে কে হাসবেন বিজয়ের হাসি,মূর্শেদী না দারা?

একরামুল হেসেন লিপুু

খুলনার ছয়টি আসনের মধ্যে জমজমাট লড়াইয়ের আভাস মিলছে রূপসা-ভৈরব, আঠারোবাকি ও আতাই নদীর তীর ঘিরে। মনোনয়নপত্র দাখিলের পর থেকেই এই আসনটি ছিল আলোচনায়। এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল, পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের মাধ্যমে ফিরে পাওয়া আর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পাল্টাপাল্টি অভিযোগে এখানে নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়েছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে দু’প্রার্থীই নির্বাচন কমিশনের জবাবদিহিতার মুখোমুখি হয়েছেন। জেলার রূপসা-তেরখাদা ও দিঘলিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনটি খুলনা-৪। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম মূর্শেদী। ৫জন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ লড়ছেন ১২ জন। তবে তাদের মধ্যে মূল লড়াই হচ্ছে আব্দুস সালাম মূর্শেদী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রয়াত এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার ছোট ভাই, খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারার সঙ্গে। শেষ মুর্হূতে জল্পনা-কল্পনা চলছে  নির্বাচনে কে হাসবেন বিজয়ের হাসি? প্রয়াত সুজা পরিবারের দারা নাকি, সাবেক তারকা ফুটবলার মূর্শেদী? আর এ নিয়ে চলছে নানা হিসেব-নিকেশ। অবশ্য জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী দুই প্রার্থীই।

৩ জানুয়ারি খুলনা প্রেসক্লাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পদে থেকে ৯০ শতাংশ আমার সাথে আছেন। আর ওপেনলি কাজ করছেন ৫০-৬০ শতাংশ। এরা সাহসী। আর যারা সাহসী না একটু ভয় পান,  তারা একটু পাশ কাটিয়ে চলেন, এমন ভোটাররা নিশ্চুপ । আর কিছু আছেন তারা বলছেন ভাই আমার তো উপায় নেই আপনি বুঝতে পারছেন আমাকে তো অমুক জায়গা থেকে ফোন দিচ্ছে, এইজন্য আমি পারতেছি না।’

পরদিন ৪ জানুয়ারি খুলনা প্রেসক্লাবে পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে আব্দুস সালাম মুূর্শিদী উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে তার ডান পাশে বসে থাকা খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুন অর রশিদকে দেখিয়ে বলেন, আমার ডানে আমাদের পিতৃতুল্য সভাপতি আর বাকি যারা (উপস্থিত) আছেন সবাই আপনারা দেখছেন। আমি কাউকে পরিচয় করিয়ে দিবো না। এই দৃশ্য দেখে আপনাদের মনে হয় না আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা আমার সাথে আছেন।

তিনি বলেন, আমার ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা দিয়ে বলি, খুব বেশী না ৬-৭ বছরের। আওয়ামী লীগ অভিমানী কিন্তু তারা বেঈমানি করে না। আওয়ামী লীগের ব্যাচ লাগিয়ে যদি কেউ বলেন আমি কেটলিতে ভোট চাই, তাহলে তিনি তার অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ বিতর্কিত করছেন। ’

তবে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ যাই থাকুক  রবিবারের (৭ জানুয়ারি) নির্বাচন সুষ্ঠু, সুন্দর, শান্তিপূর্ণ, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে দু’জনই নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থাশীল। সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত একটানা এ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সবকিছু মিলিয়ে খুলনা-৪ আসনে হ্যাভিওয়েট দুই প্রার্থী নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহও বেড়েছে।

২১ নভেম্বর উচ্চ আদালত থেকে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, ক্রীড়া সংগঠকএস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা উচ্চ আদালত থেকে প্রার্থীতা ফিরে পাওয়ার সংবাদ মুহূর্তের মধ্যে নিরুত্তাপ রুপসা, তেরখাদা, দিঘলিয়ার নির্বাচনী মাঠে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। আনুষ্ঠানিকভাবে দারা মাঠে নামার পর আওয়ামী লীগ মনোনীত হেভিওয়েট প্রার্থী ব্যবসায়ী ও সাবেক কৃতি ফুটবলার আব্দুস সালাম মুূর্শিদীর নেতা কর্মী, সমর্থকদের মধ্যে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। এই হিসেব-নিকেশে বিভক্ত হয়ে পড়েন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। দলের একাংশ দারার প্রতীকের পক্ষে অপর অংশ বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শিদীর নৌকার পক্ষে অবস্থান নেয়। অপরদিকে এ আসনটি রয়েছে বিএনপি-জামায়াতের ভোট ব্যাংক। বিএনপি ও সমমনারা ভোট বর্জন করায় ভোটার উপস্থিতি কিছুটা হলেও  প্রভাব ফেলবে। আবার যারা ভোট কেন্দ্রে যাবেন, তাদের ভোট কার বাক্সে যাবে – তা নিয়েও কৌতুহল রয়েছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশের ভাষ্য, মোস্তফা রশিদী সুজার মৃত্যুর পর তারা অভিভাবকহীন হয়ে পড়েন। ওই অঞ্চলের উন্নয়নে ও তূণমূলকর্মীদের রক্ষা কবজ ছিলেন প্রয়াত সুজা। ফলে তাঁর ভাই প্রার্থী হওয়ায় তারা প্রয়াত সুজার ছায়া দেখছেন।

এই অংশের অভিযোগ, বিগত ৫/৬ বছরে ত্যাগী নেতাকর্মীরা বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। তাই দারার ওপরই আস্থা রাখতে চান।

দলটির অপর অংশের ভাষ্য, ব্যবসায়ী সালাম মূশের্দী নৌকা প্রতীকে লড়ছেন। এখানে ব্যক্তির চেয়ে দলই বড়। তাই তারা নৌকার পক্ষে কাজ করছেন।

এমন অবস্থায় খুলনার ভৈরব, রূপসা, আতাই আর আঠারোবাকি নদীর পাড়ের লাখ লাখ মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন ৭ জনুয়ারি নির্বাচনে কে হাসবেন বিজয়ের হাসি। রূপসার কৃতি সন্তান আব্দুস সালাম মূর্শিদী? না কী খুলনার রাজনৈতিক পরিবারের কৃতি সন্তান এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা?

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, রূপসা, তেরখাদা, দিঘলিয়া এ ৩টি উপজেলা নিয়ে খুলনা-৪ আসন গঠিত। আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৫৫ হাজার ১৮৭ জন। এদের মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮৭৮ জন। পুরুষ ভোটার ১লাখ ৭৭ হাজার ৩০৮ জন। ভোট কেন্দ্র ১৩৩ টি।

খুলনার ৬ টি সংসদীয় আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও ১,২ ও ৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিপরীতে শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় নির্বাচনে কোন উত্তাপ ছড়াইনি। এসব আসনে ভোটার উপস্থিতি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। খুলনা-৪, ৫ ও ৬ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় এ ৩ টি আসনে ভোটগ্রহণে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!