বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরবসহ ৪৯ জন নেতা-কর্মীকে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (সিএমএম) ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ ও মোহাম্মদ শেখ সাদী আজ সোমবার এই রায় দেন। চারটি মামলায় তাঁদের এই কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এ নিয়ে গত দুই মাসে ঢাকার আদালতে ২১টি মামলায় বিএনপির ২৬৫ জনের কারাদণ্ড হলো। আর বিগত এক বছরে ২৯টি মামলায় ২৯৯ জনের কারাদণ্ড হলো।
এর আগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান (হাবীব), ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল আলিম (নকি), বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম, যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারের সাজা হয়েছে।
এ নিয়ে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেন, একের পর এক বিএনপি নেতা-কর্মীদের সাজা দেওয়া হচ্ছে। চলমান সরকার বিরোধী আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে এবং নির্বাচনে বিএনপি নেতাদের অযোগ্য করার জন্যই এই সাজা হচ্ছে।
যে অভিযোগে বিএনপি নেতাদের সাজা হলো
মামলার এজাহারের অভিযোগ অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি সন্ধ্যার সময় নিউমার্কেটের চার নম্বর গেটে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য বিএনপি নেতা-কর্মীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এই ঘটনায় স্থানীয় বিএনপির ১৩ জন নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে পুলিশ নিউমার্কেট থানায় মামলা করে। পরে তদন্ত করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী , তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলালসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২১ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। তাতে বলা হয়, জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য সেদিন বিএনপি নেতা-কর্মীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। এই ঘটনার সঙ্গে বিএনপি নেতা হাবিবুন নবী খান সোহেল, আজিজুল বারী হেলাল ও মীর সরাফাত আলী সফুর জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। পুলিশের দেওয়া ওই অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে আদালত ২০২১ সালের ১৫ই মার্চ বিএনপি নেতা হাবিবুর নবী খান সোহেলসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এই মামলায় পুলিশের পক্ষ থেকে সাক্ষী করা হয়েছিল ২০ জনকে। রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে সাক্ষী হাজির করেছেন পাঁচজন। আর ওই পাঁচজনই ছিলেন পুলিশ বাহিনীর সদস্য। প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় গত ১৭ জুলাই।
আর পঞ্চম নম্বর সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয় গত ৯ নভেম্বর। গতকাল ঢাকার সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ এই রায় দেন। দণ্ডবিধির ১৪৩ ( বেআইনি সমাবেশ) ধারার অপরাধে হাবীব উন নবী খান সোহেলসহ ১৪ জনের ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর দণ্ডবিধির ৩২৩ (আঘাত) ধারায় সোহেলদের এক বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ২০১৫ সালে মে মাসে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় একটি প্রাইভেটকারে আগুন দেওয়ার মামলায় যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরবসহ সাতজনকে দুই বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দণ্ডবিধির ৪৩৫ (বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার করে আগুন দেওয়া) ধারায় সাইফুল ইসলামদের সাজা দিয়েছেন আদালত। ঢাকার সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শেখ সাদী আজ এই রায় দেন। এই মামলায় পুলিশ চারজনের সাক্ষ্য নিয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজন পুলিশ বাহিনীর সদস্য।
এ ছাড়া ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দায়ের করা একটি মামলায় বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলামসহ ১৪ জনকে দুই বছর তিন মাস করে সাজা দিয়েছেন আদালত। দণ্ডবিধির ১৪৩ ( বেআইনি সমাবেশ) ধারার অপরাধে রফিকুলসহ ১৪ জনের ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর দণ্ডবিধির ৩৩২ (সরকারি কাজে বাধা দেওয়া) ধারায় তাদের প্রত্যেকের দুই বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাজধানীর শাহজাহানপুর থানায় দায়ের করা মামলায় বিএনপির ১৪ জন নেতাকর্মীর ২ বছর ৩ মাস করে কারাদণ্ড দিয়ৈছেন আদালত। ঢাকার সিএমএম আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহ এ রায় দেন।
রায়ের সময় আসামিদের কেউ আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
বিএনপি নেতাদের পক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, নীহার হোসেন ও তাহেরুল ইসলাম বলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মুয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ অনেক নেতা-কর্মীর মামলার বিচার শেষপর্যায়ে।
খুলনা গেজেট/এনএম/এম