যশোরে নাশকতা প্রস্তুতির অভিযোগে বিএনপি জামায়াতের দেড়শ’ নেতাকমীকে আটক করেছে পুলিশ। এরমধ্যে যশোর সদর উপজেলা এলাকা থেকে ৬৯ জন, বেনাপোল থেকে ৩১ জন, কেশবপুর থেকে চেয়ারম্যানসহ ১১ জন রয়েছেন। এছাড়া, অন্যান্য উপজেলা থেকে ৩৯ জনকে আটক করা হয়েছে বলে থানা পুলিশ সংশ্লিষ্ট সূত্রটি জানিয়েছে।
এদিকে, রোববার বিএনপি আহুত হরতাল যশোরে ঢিলেঢালাভাবে পালিত হয়েছে। এদিন অধিকাংশ দোকানপাট খোলা ছিল। তবে যশোর থেকে ১৮টি রুটের বাস চলাচল বন্ধ ছিল। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। হরতালের পক্ষে শহরে মিছিল করেছে বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠন। আর হরতালের প্রতিবাদে যশোরে শান্তি মিছিল ও সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠন। তবে আটক ও হরতাল নিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে অনাকাঙ্খিত নানা ঘটনা নিয়ে রোববার সারাদেশে সকাল সন্ধ্যা হরতাল আহবান করে দলটি। আর এ হরতালে যাতে জানমালের কোনো ক্ষতি করতে না পারে এবং নাশকতা সৃষ্টি বা প্রস্তুতি নিতে না পারে সে জন্য পরশু মধ্যরাত থেকেই কঠোর অবস্থানে মাঠ নামে যশোর পুলিশ। আর নাশকতা প্রস্তুতির অভিযোগে পরশু রাতে এবং রোববার সকালে ও দুপুরে যশোর সদর এলাকা থেকে আটক হয় বিএনপি-জামায়াতের ৬৯ জন নেতা কর্মী। এরমধ্যে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুরুল হক খোকন ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনসারুল হক রানা রয়েছেন। নাশকতা প্রস্তুতিসহ কয়েকটি ধারায় মামলা দিয়ে আটককৃতদের আদালতে চালান করা হয়েছে। তবে বিএনপি ও স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য মিলেছে, আটকৃতদের একাংশকে ঢাকা থেকে আসা ৭টি বাস থেকে নামিয়ে আটক করা হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকা থেকে গতপরশু রাতে ছেড়ে আসা লিটন ট্রাভেলস ও স্টার লাইন্স পরিহন থেকে যশোরে হামিদপুর ও ফতেপুর রাস্তায় আটক করা হয় অনেককে। বাস দুটি এদিন বিকেল পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে ছিল। পরে গাড়িগুলো ছেড়ে দেয়া হয়।
বেনাপোল পোর্ট থানা এলাকা থেকে সকালে নাশকতা প্রস্তুতি অভিযোগের মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ৩১ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। তবে আটককৃতদের পরিবারের অভিযোগ তারা সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।
বেনাপোল পোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামাল হোসেন ভূঁইয়া জানিয়েছেন, বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা নাশকতার উদ্দেশ্যে জড়ো হয়ে গোপন বৈঠক করছে, এমন খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালায়। এ সময় অন্যান্যরা পালিয়ে গেলেও ৩১ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আগেও নাশকতা মামলা ছিল। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা একটি বাস কেশবপুরে পৌঁছালে থানা পুলিশ ১১ জনকে আটক করে। এদের মধ্যে স্থানীয় একজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রয়েছেন। আটককৃতরা বিএনপি রাজনীতির সাথে জড়িত।
এদিকে, রোববার যশোরে হরতাল ঢিলেঢালাভাবে পালিত হয়েছে। দু’একটি এলাকা বাদে দোকানপাট ও অফিস আদালত সব খোলা ছিল। স্বাভাবিক কার্যক্রম চলেছে ব্যাংকগুলোতেও। তবে যশোর থেকে দূরপাল্লার ১৮টি রুটের বাস চলাচল বন্ধ ছিল। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রী সাধারণ। হরতাল চলাকালে সকালে ও দুপুরে শহরে মিছিল করেছে বিএনপি।
সকালে যশোরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে, সকাল ৬টা থেকে যশোর বাস টার্মিনাল থেকে ছাড়েনি কোনো দূরপাল্লার বাস। তবে স্থানীয় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। সকালে হরতালের সমর্থনে বিএনপির নেতারা মিছিল বের করলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তিনি বলেন, সকাল ৭টায় শহরের বড় বাজার থেকে হরতালের সমর্থনে মিছিল বের হয়ে দড়াটানা মোড়ে এলে মিছিলকারীরা পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। এ সময় মিছিল থেকে কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। গত পরশু রাতে এবং গতকাল সকালে কমপক্ষে তাঁদের ৫০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
হরতালে বিএনপির নেতাকর্মীদের আটকের ব্যাপারে যশোর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সুনিদিষ্ট অভিযোগে সদর উপজেলা এলাকা থেকে ৬৯ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের এ সংক্রান্ত মামলায় আদালতে চালানও দেয়া হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এমএম