মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
শনিবার (১২ আগস্ট) সকালে পুলিশের এ বিশেষায়িত ইউনিটের প্রধান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান গণমাধ্যমকর্মীদের বিষয়টি জানান। তিনি জানান, গ্রেপ্তার হওয়া চারজন পুরুষ হলেন রফিকুল ইসলাম, হাফিজ উল্লাহ, খায়রুল ইসলাম ও শরিফুল ইসলাম। তাঁদের বাড়ি সাতক্ষীরা, কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে। এই ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের বাইরে দুই নারী জঙ্গিও আস্তানায় ছিলেন।
এর মধ্যে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার এক পরিবারের তিন জন রয়েছেন। তারা হলেন তালার দক্ষিণ নলতা গ্রামের সাইকেল মেকানিক শরিফুল ইসলাম (৪৬), তার স্ত্রী আমেনা বেগম (৩৮) ও মেয়ে হাবিবা (২০)। গত ২৫ জুলাই বাড়ি থেকে একসঙ্গে বের হন তারা। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিলেন।
আজ রবিবার সকালে তালার খলিলনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ নলতা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খুলনা-পাইকগাছা সড়কের পাশে ছোট্ট একটি দোকান রয়েছে শরিফুলের। সেটি এখন তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, দোকানটিতে সাইকেল মেরামত করে সংসার চালাতেন শরিফুল। পরিবারটি অত্যন্ত দরিদ্র।
শরিফুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তাদের বসতঘরটি তালাবদ্ধ অবস্থায় আছে। পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, গত ২৫ জুলাই সকালে স্ত্রী আমেনা বেগম, মেয়ে হাবিবাকে নিয়ে সিরাজগঞ্জের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন শরিফুল। ওই দিন বিকাল থেকে তাদের মোবাইল নম্বর বন্ধ পান স্বজনরা। কোনোভাবেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন তারা।
শরিফুলের বড় ভাই নজরুল মোড়ল বলেন, শরিফুল সাইকেল মেকানিকের কাজ করে সংসার চালায়। কখনও খারাপ কোনও কাজের সঙ্গে জড়িত হয়েছে, এমন তথ্য এলাকার মানুষ দিতে পারবে না। আপনারা খোঁজখবর নিয়ে দেখুন। জঙ্গির যোগসূত্র তো দূরের কথা, এর অর্থও আমরা বুঝি না।
তিনি আরও বলেন, দুই বছর আগে এই জঙ্গি সন্দেহে সিরাজগঞ্জ থেকে শরিফুলের মেয়ে জামাতা শান্তকে আটক করা হয়েছিল। বর্তমানে সে কারাগারে। গরু বিক্রয় ও জমি বন্ধক রেখে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে তাকে আদালত থেকে জামিনে মুক্ত করতে সিরাজগঞ্জে যাচ্ছিল শরিফুল, তার স্ত্রী এবং মেয়ে। এখন তারাও ফেঁসে গেলো। আমরা জানি না, কেন আমার নিরীহ ভাইয়ের পরিবারকে জঙ্গি বলে ফাঁসানো হলো।
শরিফুল কোনও দলের রাজনীতি করেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে নজরুল মোড়ল বলেন, জাকের পার্টির ভক্ত শরিফুল। প্রতি বছর ওরস হলে যায়। মাঝেমধ্যে আমি যাই ওরসে। এটা তো কোনও রাজনৈতিক দল না। জঙ্গির সঙ্গে আমার ভাইয়ের পরিবারের যোগসূত্র আছে, এটা আমি কখনও বিশ্বাস করি না। তাদের আটকের কথা শুনে আমরা হতভম্ব।
ওই পরিবারের বিষয়ে জানতে চাইলে তালা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চৌধুরী রেজাউল করিম জানান, এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাইছি না। তবে আমরা পরিবারটির বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি।
খুলনা গেজেট/এনএম