চুলকে মজবুত, টেকসই এবং চুলপড়া প্রতিরোধে চুলের যত্ন সঠিক উপায়ে করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখতে হবে প্রত্যেকের চুল একরকম নয় এবং বিভিন্ন চুলের ধরন অনুযায়ী আলাদা আলাদা উপায়ে যত্ন নেয়া প্রয়োজন। অতএব, সঠিক চুলের যত্নের জন্য আপনাকে প্রথমে চুলের ধরন জানতে হবে, তারপর যে উপায়ে নিয়মিত পরিচর্যা করে আপনার চুলকে নিরাপদে রাখতে পারেন তা হলো-
তৈলাক্ত চুলের যত্ন
তৈলাক্ত চুলের যত্ন করা একটু জটিল। এই ধরনের চুল খুব তাড়াতাড়ি চটচটে হয়ে যায়, যা আবার সহজে স্টাইল সেট করা হয় না।
তৈলাক্ত চুলের যত্নগুলো হলো-
১. চুল ধোয়ার জন্য হালকা শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
২. প্রতিদিন চুল ধোয়া গুরুত্বপূর্ণ, মাথার ত্বকে শ্যাম্পু খুব বেশি ব্যবহার করবেন না।
৩. সবসময় ঠাণ্ডা বা হালকা গরম পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। গরম পানি ব্যবহার করলে মাথার ত্বক থেকে বেশি তেল বের হয়ে যায়, যা চুলকে আঠালো করে তোলে।
৪. গরম তেল দিয়ে মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করুন, তারপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
৫. খুব যদি তৈলাক্ত হয় তবে কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন না।
৬. এ ধরনের চুল চকচকের কারণে হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করবেন না।
৭. ঘন ঘন চুল আঁচড়ানো থেকে বিরত থাকুন। কারণ এটি মাথার ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল বের করে।
৮. মাথার ত্বক বেশি ঘষবেন না।
৯. পানিতে লেবু মিশিয়ে চুল ধোয়া হলে চুল থেকে অতিরিক্ত তেল দূর হয়।
১০. প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং পর্যাপ্ত পানি পান করাও তৈলাক্ত চুলের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
শুষ্ক চুলের যত্ন
অতিরিক্ত সূর্যালোক এবং ঘামের কারণে চুল শুষ্ক হয়ে যায়। এ ছাড়া কালার করা, কার্লিং করা, স্ট্রেইট করা বা কোনো রাসায়নিক চিকিৎসা চুলের প্রাকৃতিক তেলের ক্ষতি করে, যার কারণে চুল শুষ্ক হয়ে যায়।
১. এই ধরনের চুলে প্রতিদিন শ্যাম্পু করা এড়িয়ে চলুন। কারণ এটি মাথার ত্বকের প্রাকৃতিক তেলের ক্ষতি করে এবং চুল আরও শুষ্ক হয়ে যায়।
২. উচ্চ প্রোটিনযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। হালকা এবং অম্লীয় শ্যাম্পু শুষ্ক এবং প্রাণহীন চুলের জন্য সর্বোত্তম।
৩. শ্যাম্পু করার পর প্রতিবার কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এটি চুলকে নরম ও চকচকে করে তুলবে।
৪. হিট অ্যাক্টিভেটেড ময়েশ্চারাইজিং কন্ডিশনার ব্যবহার করুন অথবা সপ্তাহে একবার তেলের চিকিৎসা নিন।
৫. হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন। ড্রায়ার, কার্লিং, স্ট্রেইটিং এবং ইস্ত্রি চুলকে শুষ্ক এবং প্রাণহীন করে তোলে। যদি ড্রায়ারের ব্যবহার প্রয়োজন হয়, তাহলে এটি সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় ব্যবহার করুন।
৬. হেয়ার স্প্রে, হেয়ার জেল এবং অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থযুক্ত স্টাইলিং ক্রিম থেকে দূরে থাকুন। এটি চুলকে শুষ্ক করে তোলে।
৭. ভেজা চুল সহজে ভেঙে যায়, তাই ভেজা চুল আঁচড়ানোর সময় সতর্ক থাকুন।
৮. সূক্ষ্ম দাঁতযুক্ত চিরুনির পরিবর্তে মোটা দন্তযুক্ত চিরুনি ব্যবহার করুন, এটি চুলকে স্থির করা সহজ করবে এবং ভাঙবে না।
৯. চুল ব্রাশ করার জন্য একটি নরম ব্রিসল হেয়ার ব্রাশ এবং চিরুনি ব্যবহার করুন।
স্বাভাবিক চুলের যত্ন নেবেন
সাধারণ চুলের অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন হয় না। এই ধরনের চুলের যত্নগুলো হলো-
১. সপ্তাহে দু’বার শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে কন্ডিশনার লাগান।
২. দুই মাস পর পর চুল ছাঁটুন।
৩. চুল ধোয়ার জন্য সবসময় ঠাণ্ডা বা হালকা গরম পানি ব্যবহার করুন।
৪. মাসে একবার হেয়ার মাস্ক লাগান।
৫ চুলের সুস্বাস্থ্যের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করুন।
কোঁকড়া বা ভাঁজযুক্ত চুলের যত্ন
১. এ ধরনের চুলে সপ্তাহে ২ দিনের বেশি শ্যাম্পু করতে নেই।
২. চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য চুল ধোয়ার পর কন্ডিশনার লাগান।
৩. কোঁকড়া চুলের জন্য বিশেষভাবে তৈরি শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
৪. সূক্ষ্ম দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করবেন না।
৫. স্টাইলিং পণ্যের অতিরিক্ত ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
লম্বা চুলের যত্ন
১. ঘুমানোর সময় শক্ত বেণী বাঁধবেন না। কারণ স্ট্রেচিং করলে চুল ভেঙে যেতে পারে।
২. দৈর্ঘ্য বজায় রাখার জন্য প্রতি ৩-৪ মাসে চুল ছাঁটা। (মহিলাদের ক্ষেত্রে)
৩. মোটা দাঁতযুক্ত চিরুনি দিয়ে জট পাকানো চুল বিচ্ছিন্ন করুন। ভুল করে ব্রাশ ব্যবহার করবেন না। এর ফলে চুল ভেঙে যেতে পারে।
৪. তোয়ালে দিয়ে ভেজা চুল ঘষার পরিবর্তে হালকা হাতে টিপুন।
এসব যত্ন নেয়ার পরও যদি দেখেন প্রতিদিন আপনার ১০০-এর অধিক চুল পড়ে যাচ্ছে এবং মাথা খালি হয়ে যাচ্ছে তখন ডাক্তারের চিকিৎসা বা পরামর্শ নিতে হবে।
খুলনা গেজেট/এনএম