খুলনা, বাংলাদেশ | ১৭ মাঘ, ১৪৩১ | ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  কুষ্টিয়ার মিরপুরে ট্রাক-সিএনজি অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ৩
  রংপুরের চায়নার মোড় মহাসড়কে বাস-মাহিন্দ্রা সংঘর্ষে ৩ জন নিহত

সাগর-রুনি হত্যা: তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অন্তহীন অপেক্ষা

গেজেট ডেস্ক

রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি খুন হয়েছিলেন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি।

এ হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন আটজনকে গ্রেপ্তার, ১৬০ জনের জবানবন্দি গ্রহণ, ডিএনএ টেস্টের জন্য আমেরিকা পাঠানো, ফলাফলের অপেক্ষো— এই অন্তহীন চক্রে কেটে গেছে ১১ বছর।

মামলাটির তদন্ত শেষ করে অভিযোগপত্র জমা দিতে পারেনি তদন্ত সংস্থা র‌্যাব। সর্বশেষ পয়লা ডিসেম্বর আদালতে প্রতিবেদন জমার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে যায়। এর মধ্য দিয়ে ৯৫ বার পেছায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা।

বারবার সময় নিয়েও অভিযোগপত্র দিতে না পারাকে ন্যায়বিচার নিশ্চিতে অনীহা হিসেবে দেখছেন দুই সাংবাদিকের স্বজনরা।

নিহত রুনির ভাই ও মামলার বাদী নওশের আলম রোমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তারা আমাদের সঙ্গে কোনো কথা বলছেন না। বছরের পর বছর তারা একই কথা বলে আসছেন। ডিএনএ টেস্টের রেজাল্ট পেতে কত বছর লাগে?

‘এটা কি আমাদের দেশের গ্রামগঞ্জের ভূমি অফিস না আমেরিকা? আমাদের দেশেও তো তার আগে চলে আসে। এসব কথায় বোঝা যায়, বিচার করার কোনো ইচ্ছে তাদের নাই, যে কারণে হচ্ছে না। বিচারহীনতার ১১ বছর পার করছি আমরা, আমাদের পরিবার।’

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় করা হয় মামলা।

মামলাটি ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল থেকে তদন্ত করছে র‌্যাব। বাহিনীটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন মামলার অগ্রগতি প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা এ পর্যন্ত ১৬০ জনের জবানবন্দি নিয়েছি। গ্রেপ্তার আটজনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ডিএনএ টেস্টের নমুনা আমেরিকায় পাঠানো হয়েছে, যেটার ফলাফল এখনও আসেনি।’

শেরে বাংলা নগর থানায় করা মামলায় রুনির বন্ধু তানভীর রহমানসহ আসামির সংখ্যা আট। অন্য আসামিরা হলেন বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড এনাম আহমেদ (হুমায়ুন কবির), রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ, পলাশ রুদ্র পাল, তানভীর ও আবু সাঈদ। আসামিদের প্রত্যেককে একাধিবার রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তাদের মধ্যে কেউ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি।

৪৮ ঘণ্টা শেষ হয়নি ১১ বছরেও

ঘটনার পরই তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের ঘোষণা দেন। সন্দেহভাজন হিসেবে আটজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়, কিন্তু খুনিরা আজও ধরাছোঁয়ার বাইরে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ৪৮ ঘণ্টা সময়সীমা পার হওয়ার পর ১৩ ফেব্রুয়ারি তখনকার আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, এ জোড়া হত্যাকাণ্ডের তদন্তে ‘প্রণিধানযোগ্য’ অগ্রগতি হয়েছে।

কয়েক দিন পর ২৬ ফেব্রুয়ারি তখনকার ডিবির ডিসি ও ডিএমপির মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম বলেছিলেন, হত্যাকাণ্ডের মোটিভ সম্পর্কে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। দ্রুততম সময়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হবে।

মনিরুল ইসলামের এ বক্তব্যের দুই দিন পর ২৮ ফেব্রুয়ারি খুনিদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে হাইকোর্ট। ঘটনার প্রায় দুই মাস পর ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টে হাজির হয়ে সাগর-রুনি হত্যা তদন্তে তারা ব্যর্থ হয়েছেন বলে স্বীকার করেন মনিরুল ইসলাম।

ওই দিনই উচ্চ আদালত র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব) তদন্তের দায়িত্ব দিয়ে র‌্যাবের ডিজিকে নির্দেশ দেন, একজন সুদক্ষ, অভিজ্ঞ এবং এএসপি পদমর্যাদার নিচে নয় এমন একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে এ মামলার তদন্ত করাতে।

হাইকোর্টের নির্দেশনার পর র‌্যাবের আবেদনে ভিসেরা রিপোর্টের জন্য ২৬ এপ্রিল সাগর-রুনির মরদেহ কবর থেকে তুলে আবার ময়নাতদন্ত করা হয়।

মেহেরুন রুনির ভাই নওশের রোমান ও মা নুরুন নাহার মির্জা এবং সাগর সরওয়ারের মা সালেহা মনিরসহ দুই পরিবারের অনেক সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষ করেই প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।’

এক দশক ধরে সাংবাদিকরা তাদের দুই সহকর্মীকে হত্যার বিচার দাবি করে আসছেন। বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করছেন তারা।

খুলনা গেজেট/ বি এম এস




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!