আজ সেই ভয়াল ২৮ সেপ্টেম্বর। ২০০২ সালের এই দিনের সন্ধ্যায় সাতক্ষীরায় গুড়পুকুর মেলা চলাকালে মাত্র ১১ মিনিটের ব্যবধানে সাতক্ষীরা রকসি সিনেমা হলে এবং সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামের দি লায়ন সার্কাস প্যান্ডলে পর পর দু’টি শক্তিশালী বোমা হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। ওই বোমা হামলায় সাতক্ষীরা শহরের লাবসার মোকারম হোসেনের ছেলে স্কুল ছাত্র কাজী মেত্তাউল আলম মুক্তা (১৫), জেলার দেবহাটার চকমোহাম্মদআলী গ্রামের আনিসুর রহমানের ছেলে হাফিজুল ইসলাম পিন্টু (২৫) ও শহরের ইটাগাছার ডাক্তার আমিরুল ইসলামের স্ত্রী ডাক্তার সেলিনা পারভীন (৩০) নিহত হয়। আহত হয় শতাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু। আহতদের অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেন। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার দেড় যুগেও মূল রহস্য জানতে পারেনি সাতক্ষীরাবাসী।
২০০২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার পরপরই মেলা চলকালীন রকসি সিনেমা হল ও সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামে সার্কাস প্যান্ডেলে আট মিনিটের ব্যবধানে পরপর কয়েকটি বোমা বিস্ফোরিত হয়।
সাতক্ষীরা আদালত সূত্রে জানা গেছে, রকসি সিনেমা হলে এবং স্টেডিয়ামে লায়ন সার্কাসে বোমা হামলার ঘটনায় ওই দুই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক বাদী হয়ে সাতক্ষীরা সদর থানায় পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুর্গাপদ ঘোষ ও সুখরঞ্জন সমাদ্দার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপি’র অভ্যন্তরীণ কোন্দলে এ ঘটনা ঘটে উল্লেখ করে ২০০৪ সালের প্রথম দিকে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। আদালতের নির্দেশে পুনঃতদন্তে খুলনার সহকারী পুলিশ সুপার মাওলা বক্স ২০০৪ সালের শেষের দিকে আদালতে এ দু’টি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে মামলার দু’টির কার্যক্রম স্থগিত বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে, ২০০৬ সালে টাঙ্গাইলে একটি হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় জেএমবি’র বোমারু মিজান, হাফেজ আব্দুর রাকিব ও শায়ক সাইফুল ইসলাম। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আব্দুর রহমানের নির্দেশে তারা ২০০২ সালের ২ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার গুড়পুকুরের মেলায় বোমা হামলা চালায় বলে স্বীকার করে। ফলে ২০০৬ সালে মামলাটি আবারো প্রাণ ফিরে পায়। সিআইডি’র আবারও তদন্তকালে দেবহাটার শিমুলিয়া গ্রামের মুজিবর রহমান ঘরামীকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। যদিও পরে উত্তরাস্থ র্যাব-১ অন্য একটি মামলায় রিমান্ডে নিয়ে গুড়পুকুরের মেলায় বোমা হামলায় মুজিবর রহমান ঘরামীর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না পাওয়ায় তদন্তকারী কর্মকর্তা আমির হোসেন আমু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সার্কাস প্যান্ডেলে বোমা হামলার মামলায় বোমাররু মিজান ও হাফেজ আব্দুর রাকিবের নামে আদালতে বিস্ফোরক দ্রব্য ও পেনাল কোর্ড আইনে পৃথক দু’টি অভিযোগপত্র দাখিল করেন । যদিও কয়েক মাস আগে মীর্জাপুরে পুলিশের গাড়ি থেকে বোমারু মিজান ও হাফেজ রাকিবকে জেএমবি ছিনিয়ে নেয়। পরে বোমারু মিজানকে খুঁজে না পাওয়া গেলেও পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে হাফেজ আব্দুর রাকিব মারা যায়।
খুলনা গেজেট/এআইএন