শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বলেছেন, ডিসেম্বর মাস বাঙালির জন্য একদিকে আনন্দের, অন্য দিকে শোকের। পাকিস্তানি সেনারা স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার-আলবদর-আল শামস বাহিনীর সহযোগিতায় ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে মেধাশূণ্য করতে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রতিবেশী দেশ ভারতে এক কোটি মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। জাতির সেই দুর্যোগকালে ভারত, ভুটান ও রাশিয়া আমাদের সহযোগিতা করেছিলো। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতি ও অবকাঠামো পুনর্গঠনের মাধ্যমে তিনি এ যাত্রা শুরু করেছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নৃশংস হত্যাকা-ের ফলে দেশে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রা থমকে দাঁড়ায়।
তিনি আজ (বৃহস্পতিবার) বিকালে খুলনা শ্রম ভবন প্রাঙ্গণে নবনির্মিত জাতির পিতার ম্যুরাল উদ্বোধন এবং রপ্তানিমুখী শিল্পের কর্মহীন দুস্থ শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা বাস্তবায়ন বিষয়ক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকরা হলো দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছেন। সরকার শ্রমিক ফাউন্ডেশন থেকে শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। করোনাকালে সরকার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জার্মান ফেডারেল সরকারের যৌথ সহযোগীতায় প্রায় ১৫০০ শত কোটি টাকা বাজেটের একটি কার্যকর ও ব্যাপক সামাজিক সুরক্ষা নীতিমালা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করছে। এই কর্মসূচির আওতায় কর্মহীন হয়ে পড়া একজন দুস্থ শ্রমিক প্রতিমাসে তিন হাজার টাকা করে সর্বোচ্চ তিন মাস আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, সারাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রতিষ্ঠানিক খাত থেকে ১৬৩২০ জন শ্রমিকের মাঝে মোট ৬৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। খুলনা অঞ্চলে ১৯৭৫ টি চেকের মাধ্যমে ৫ কোটি ৬৫ লাখ ৬ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা মহানগর ও জেলার ১২০৭ জনকে তিন কোটি ৬২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, পুলিশ কমিশনার মোঃ মাসুদুর রহমান ভূঞা, জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা। খুলনা শ্রম দপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এসএম নজরুল ইসলাম, ঢাকা শ্রম দপ্তরের পরিচালক আবু আশরীফ মাহমুদ, মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রণজিৎ কুমার ঘোষ ও সাংবাদিক মল্লিক সুধাংশু বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে শ্রম পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান জানান, শ্রমিকের আর্থসামাজিক মর্যাদা ও অবস্থান উন্নত করার অভিপ্রায়ে খুলনা শ্রম দপ্তর নানাবিধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। করোনাকালে খুলনা অঞ্চলে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরের প্রায় ৫৪ হাজার শ্রমিকের ডাটাবেজ প্রণয়ন করে কেসিসি ও জেলা প্রশসানের মাধ্যমে তাদেরকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। শ্রম কল্যাণ কেন্দ্রের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা প্রদানের পাশাপাশি শ্রমিক-কর্মচারীদের করোনা টিকা গ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণ ও রেজিস্ট্রেশনে সহায়তা করা হয়েছে।
খুলনা গেজেট/ বিএমএস