নগরীর রূপসা স্ট্যান্ড রোডে কেসিসি পরিচালিত খুচরা বাজারে আটা কিনতে এসেছিলেন গৃহপরিচারিকা আমেনা খাতুন। গৃহকর্তার বাড়িতে প্রতিমাসে ৭ কেজির আটার প্রয়োজন হয়। কিন্তু এদিন তিনি সাড়ে ৩ কেজি আটা কিনেছেন। জানতে চাইলে এ পণ্যটির দাম গত কয়েকমাস ধরে হু হু করে বেড়ে যাওয়ায় গৃহকর্তা পরিমাণে কম কিনতে দিচ্ছেন বলে জানান।
একই দৃশ্যের দেখা মেলে দোলখোলা মোড়ের একটি মুদি দোকানে। সেখানে গৃহকর্মী রহিমা বেগম বলেন, গত ৬ মাস ধরে এ পণ্যটির দাম উর্ধ্বমূখী হওয়ায় বাড়ির মালিক আটা কিনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন।
নগরীর কয়েকটি বাজারে ঘুরে তথ্য মেলে, ৬ মাস আগেও যে খোলা আটা ৪০ টাকা আর প্যাকেট আটার মূল্য ছিল ৪৬ টাকা। ৬ মাসের ব্যবধানে এ পণ্যটির দাম দেড় গুণ বেড়েছে। বর্তমানে যথাক্রমে ৬০ ও ৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আটার দাম বৃদ্ধির জন্য খুলনার খুচরা ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা একে অপরের বিরুদ্ধে আঙ্গুল তুলছেন। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন অধিক মুনাফা অর্জনের জন্য পাইকাররা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছেন। আর পাইকাররা বলছেন রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গম আমদানি ও এলসি বন্ধ হওয়ার কারণে এ পণ্যটির দাম বেড়েছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, আটার সরবরাহ খুলনার বাজারে বেশ আছে।
রূপসা বাজারের ক্রেতা আমেনা খাতুন বলেন, ৬ মাস আগেও খোলা এবং প্যাকেটজাত আটা যথাক্রমে ৪০ ও ৪৬ টাকায় কিনেছি। ৬ মাস পর তা ৬০ এবং ৭২ টাকায় কিনতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম প্রতিদিন বাড়ছে। ফলে গৃহকর্তা পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। মাসে এখন ৭ কেজি আটার পরিবর্তে সাড়ে ৩ কেজি কিনতে দেন।
রূপসা বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী নান্টু বলেন, বাজারে আটার সরবরাহ ভালই আছে। সপ্তাহ শেষে কোম্পানীর প্রতিনিধিরা আটার মূল্য বৃদ্ধির আগাম শুনান দেন। আমাদের বাজার থেকে বেশী দরে কিনে এ দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। তাছাড়া অনেক ক্রেতাকে জিজ্ঞাসা করলেই তারা ওএমএসের ওপর নির্ভরশীলতার কথা জানান।
দোলখোলা মোড়ের ব্যবসায়ী হক বলেন, প্রতিসপ্তাহে বাড়ছে এ পণ্যটির দাম। গত ৬ মাস ধরে অল্প অল্প করে বেড়েই চলেছে আটার দাম। ব্যবসায়ে বর্তমানে কোন স্থিতিশীলতা নেই। আটার দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে পাইকারী ব্যবসায়ীদের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, গম আমদানি নির্ভর পণ্য। রাশিয়া থেকে এ পণ্যটি আমদানি করা হয় চাহিদার বৃহৎ অংশ। ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে আমদানি কমতে থাকে। এ সময়ে ভারত থেকে গম আমদানি করা হলেও পরবর্তীতে তারা রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। ফলে সংকট শুরু হতে থাকে। আর প্রয়োজনের তুলনায় গমের আমদানি কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা এ পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দেয়। বর্তমানে তা ৭২ টাকায় এসে দাড়িয়েছে।
তিনি খুলনা গেজেটকে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে গত কয়েক মাসে দোকানের বেচাকেনা কমে গেছে। মাসে যা বিক্রি হতো এখন তা অর্ধেকে নেমে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, বাজার ব্যবস্থায় তদন্তে গাফিলতির কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের দাম এ পর্যায়ে এসে পৌছেছে। সামনে কি হবে তা তিনি বলতে পারেননি। দাম কমানের জন্য তিনি বলেন, বাজার মনিটরিংসহ ব্যবসায়ীরা যাতে কোন পণ্য গুদামজাত করতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
আটার দাম বৃদ্ধির কারণে রুটির দাম বেড়েছে। ৪ টাকার রুটি এখন ৬ টাকায়, আবার কোথাও কোথাও এর থেকে বেশী টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সাইজও ছোট হয়ে গেছে। রিক্সা চালক মতিউর রহমান বলেন, একযুগ ধরে তিনি খুলনায় রিক্সা চালাচ্ছেন। পরিবারের সদস্যরা গ্রামের বাড়িতে থাকেন। খাবারের জন্য তাকে হোটেলের ওপর নির্ভর করতে হয়। প্রতিদিনে সকালে ৪ টি রুটি দিয়ে নাস্তা শুরু করলেও রুটির দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন তিনি ২ টি রুটি খেয়ে কাজে নামেন। এতে তার শারীরিক অনেক কষ্ট হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানোর জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। না হলে তাদের মতো খেটে খাওয়ার মানুষের মরণ ছাড়া আর কোন উপায় থাকবেনা!
সম্প্রতি খুলনার এক সাংবাদিক আটার অস্বাভাবিক মূল্য বৃ্দ্ধিতে ব্যক্তিগত ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে পোষ্ট দিয়েছেন। সেখানে লিখেছিলেন প্রতিদিন তিনি সকালে দু’টি আটার রুটি খেতেন। বর্তমানে আটার মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে এখন তিনি একটি খান!