ভূ-খন্ডে এক সময় চার সহস্রাধিক নদ-নদী বয়ে যেত। বর্তমানে নদীর সংখ্যা ও নদীর অবস্থান বিলুপ্ত প্রায়। নদী মাতৃক বাংলাদেশের নদী হারিয়ে যেতে বসেছে মূলত দখলের ফলে। আর এই নদী দখল কৃষির উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশের সুজলা সুফলা রূপ ক্রমাগত হারিয়ে যেতে বসেছে নদী দখল ও দূষণের ফলে। এমন রূপরেখা এখন খুলনা ডুমুরিয়ায় দেখা মিলছে। বিলুপ্তির পথে এক সময়কার প্রবল খরস্রোতা ভদ্রা নদী। একে রক্তস্নাত আপার ভদ্রা নদীও বলা হয় (২০মে চুকনগর গণহত্যার কারণে)। পাল্লা দিয়ে উপজেলার আটলিয়া ও খর্ণিয়া এলাকার কতিপয় ইট ভাটা মালিক ভদ্রা নদী দখলে মেতে উঠেছে। নদীর চর দখল করে ক্রমান্বয় তারা ভাটার জায়গা প্রসারিত করছে। নদীর বুকে বাঁধ দেওয়ার কারণে স্রোতের গতিপথে ব্যাপক বাঁধা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে পলি ভরাট হয়ে এক সময়কার প্রবল খরস্রোতা ভদ্রা নদী ক্রমাগত সঙ্কীর্ণ হয়ে প্রবহমানতা হারাচ্ছে। নদীর বুকে এমন অত্যাচার চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এই ভদ্রা নদী।
জানা যায়, ভদ্রা নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোর ও খুলনা জেলার একটি নদী। এ নদী যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার পায়রা ইউনিয়ন এলাকায় প্রবহমান মুক্তেশ্বরী টেকা নদী হতে উৎপত্তি। নদীর জলধারা খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ও খর্ণিয়া ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে হাপরখালী নদীতে নিপতিত হয়েছে। ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই নদী সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জোয়ার ভাটার প্রভাবে প্রভাবিত। কিন্তু কালের বিবর্তনে আজ নদী তার যৌবন হারাতে বসেছে। আর সেই সাথে পাল্লা দিয়ে এলাকার কিছু ইটভাটা ব্যবসায়ী নদীর চর দখলে মেতে উঠেছে। ভাটা গুলো নদীর প্রায় সিংহভাগ দখল করে নিয়েছে। প্রায় এক যুগ ধরে চলছে এই দখল। নদীর বুকে বাঁধ দিয়ে সেখানে পুকুর সৃষ্টি করে পলি ভরাট করছে। আর সেই পলি কেটে তা দিয়ে ইট প্রস্তুত করছে। খর্ণিয়া ব্রীজের উপর দাঁড়ালে চোখে পড়বে নদীর বুকে অসংখ্য মানবসৃষ্ট পুকুর। তারা নদীর চর দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ভদ্রা ও হরি নদীর ৪ কিলোমিটারের মধ্যে ১৮টি ইটভাটা রয়েছে। এর অধিকাংশ ইটভাটা নদীর জায়গা দখল করে বসে আছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মনিরুজ্জামান মালী বলেন, ভদ্রা নদী এক সময় ব্যাপক গভীর এবং অনেক চওড়া ছিল। এখন তা তিন ভাগের এক ভাগ আছে, আর দুই ভাগ মারা গেছে। ইট ভাটা মালিকরা দখল করার কারণেই মুলত নদীর এ অবস্থা হয়েছে। নদীতে পলি জমাট হচ্ছে আর ইট ভাটার দখলে চলে যাচ্ছে। যেভাবে ভাটা মালিকরা নদী দখল শুরু করেছে, তাতে আগামী দুই এক বছরের মধ্যে ভদ্রা নদী নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। নদীর গতিপথে বাঁধা সৃষ্টির কারণে চুকনগর, কাঁঠালতলা, খর্ণিয়া বাজারে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
খুলনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আশরাফুল আলম বলেন, এলাকায় নদীর চর দখলীয় ইটের ভাটা গুলোর একটা লিস্ট করে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। এটার বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খুলনা গেজেট/ টি আই