এমন কিছু কে ভেবেছিল? সদ্যই এশিয়া কাপ জেতা শ্রীলঙ্কা মুখোমুখি নামিবিয়ার, সেখানে তো লঙ্কানদের জয়ই ছিল স্বাভাবিক!
তবে সব পাশার দান উলটে দিয়েছে আফ্রিকান দলটি। শ্রীলঙ্কাকে শুধু হারিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, রীতিমতো গুঁড়িয়েই দিয়েছে। ৫৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নদের। তাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শুরুটা হয়েছে বিশাল এক অঘটন দিয়ে।
আজ রোববার জিলংয়ের কার্ডিনিয়া ওভালে বিশ্বকাপ যাত্রা শুরুর ঠিক আগে দিলশান মাদুশাঙ্কাকে হারিয়ে বসে শ্রীলঙ্কা। বাজে শুরুর ইঙ্গিতটাও কি পাওয়া হয়ে গিয়েছিল তাতে?
টসে জিতে ফিল্ডিংয়ে নেমে অবশ্য শুরুটা দারুণই করেছিল লঙ্কানরা। পাওয়ারপ্লেতেই তুলে নিয়েছিল নামিবিয়ার তিন উইকেট। শুরুর ছয় ওভারে কেবল ৩৫ রানই জড়ো করতে পেরেছে নামিবিয়ানরা।
সেই থেকে লড়াইয়ের শুরু গেল বারের সুপার টুয়েলভ খেলা আফ্রিকান দলটির। স্টেফান বার্ড আর অধিনায়ক গেরহার্ড ইরাসমাসের ৪১ বলে ৪৩ রানের জুটি স্থিতি দিয়েছে নামিবিয়াকে। তবে ইরাসমাসকে হারানোর কিছু পর বার্ড আর ডেভিড ভিসার উইকেট খুইয়ে আবারও খাদের কিনারে চলে গিয়েছিল তারা।
এরপরের গল্পটা কেবলই ইয়ান ফ্রাইলিঙ্ক আর ইয়োহাম্ন স্মিটের। দুজন মিলে সপ্তম উইকেট জুটিতে ৩৩ বলে যোগ করেন ৬৯ রান, যা সপ্তম বা তার নিচের উইকেট জুটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তৃতীয় সর্বোচ্চ।
তাতে ভর করেই শ্রীলঙ্কাকে তাদের বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম বিস্মরণযোগ্য ডেথ বোলিং অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় নামিবিয়া। শেষ চার ওভারে নামিবিয়ানরা তোলে ৫৭ রান, লঙ্কানদের বিশ্বকাপ ইতিহাসে শেষ চার ওভারে এর চেয়ে বেশি রান হজমের নজির আছে আর মাত্র একটি, ২০১০ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার কাছে শেষ চার ওভারে ৬২ রান হজম করেছিল দলটি।
সে রেকর্ড না ভাঙলেও নামিবিয়া আসল কাজটা করে ফেলে। বাজে শুরুটা পেছনে ফেলে পেয়ে যায় লড়াইয়ের পুঁজি। তার চেয়েও বড় বিষয়, মোমেন্টামটা চলে এসেছিল নামিবদের পক্ষে।
সেই মোমেন্টামটা কাজে লাগিয়ে শুরুতেই শ্রীলঙ্কার টপ অর্ডার ধসিয়ে দেয় নামিবিয়া। কুশল মেন্ডিসকে ফিরিয়ে নামিবিয়ান উৎসবের শুরুটা করেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার ডেভিড ভিসা। চতুর্থ ওভার করতে আসা বেন শিকোঙ্গোর ডাবল উইকেট মেইডেনে যখন ফিরলেন পাথুম নিশাঙ্কা আর দানুশকা গুনাথিলাকা ফিরলেন, শ্রীলঙ্কার ভিতটা নড়ে গিয়েছিল তখনই। পাওয়ারপ্লে শেষে ফিরলেন দনাঞ্জয়া ডি সিলভা।
ভানুকা রাজাপাকশে আর অধিনায়ক দাসুন শানাকা মিলে লঙ্কানদের আশা দেখাচ্ছিলেন এরপর। ভানুকার বিদায়ে সে আশাও ভাঙে এরপর। শ্রীলঙ্কার অর্ধেক ইনিংস হাওয়া হয়ে যায় ৭৪ রান তুলতেই।
ভানুকাকে ফিরিয়েছিলেন যিনি, সেই বার্নার্ড শল্টজের শিকার হয়ে এরপর ফেরেন ওয়ানিন্দু হাসরাঙ্গা। লঙ্কানদের আশাটা তাতে গিয়ে ঠেকে শানাকায়। সেই শানাকাও প্রথম ইনিংসে দারুণ খেলা ফ্রাইলিংকের শিকার হয়ে। এশিয়ান চ্যাম্পিয়নদের নিভু নিভু বাতিটাও যেন পুরোপুরি নিভে যায় তাতে।
পরের দুই ওভারে প্রমোদ মাদুশান আর চামিকা করুণারত্নেও বিদায় নেন। তাতে দুই অঙ্কে অলআউট হওয়ার শঙ্কায় পড়ে যায় শ্রীলঙ্কা। শেষ দিকে মাহীশ থিকশানার ব্যাটে সে শঙ্কা দূর হয়েছে বটে, তবে তার এক ছক্কায় গরা ১১ বলে ১১ রানের ইনিংস লঙ্কানদের জয়ের দেখা পাইয়ে দিতে পারেনি, ব্যবধানটাই যা কমাতে পেরেছে।
১৯তম ওভারে ডেভিড ভিসার বলে দুষ্মন্থ চামিরা ক্যাচ তুলে দিতেই উল্লাসে মাতে নামিবিয়া। নিজেদের ইতিহাসে এই প্রথম যে কোনো সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে বিশ্বমঞ্চে হারানোর স্বাদ পেয়ে গেছে দলটি!