সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছট গ্রামের মোড়ল বাড়ির সামনে পাউবো’র বেড়িবাঁধের ভাঙন পয়েন্টে মাটি ভরাট করে উচু করা হলেও এখনো আতঙ্ক কাটেনি গ্রামবাসীর। রোববার (৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় খোলপেটুয়া নদীতে ভাটা হওয়ার পর পাউবো কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের নেতৃত্বে গ্রামবাসী রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত সেখানে কাজ করেন। এতে করে নদীর পরবর্তী জোয়ারের পানি ঢোকা বন্ধ করা সম্ভব হলেও ভাঙন রোধে দ্রæত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ফের ভাঙতে পারে ঝকিপূর্ণ ওই বেড়িবাঁধ। ফলে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারি গ্রামবাসীদের মধ্যে।
তবে সোমবার (১০ অক্টোবর) সকাল থেকে বিছট গ্রামের ওই ভাঙন পয়েন্টে নতুন করে কাজ শুরু করবেন পাউবো’র সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। নদী ভাঙনরোধে সেখানে জিও ব্যাগে বালি ভরে ডাম্পিং করা হবে। এছাড়া পাউবো’র উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা আজ বিছট গ্রামের ভাঙন কবলিত বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করতে পারেন বলে জানিয়েছেন সেখানে দায়িত্বে থাকা পাউবো’র সেকশনাল অফিসার মোঃ আলমগীর কবির।
উল্লেখ্য, রোববার (৯ অক্টোবর) ভোর রাত তিনটার দিকে হঠাৎ কওে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর আওতাধীন ৭/২ নম্বর পোল্ডারের আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছট মোড়ল বাড়ির সামনে বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দেয়। মুহুর্ত্বেও মধ্যে বেড়িবাঁধের প্রায় ৫০ মিটার এলাকাজুড়ে খোলপটুয়া নদীতে ধসে পড়ে। দিনভর এই ভাঙন অব্যহত থাকে। বিছট গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত ভেড়িবাঁধ সংস্কার কাজ চলমান অবস্থায় বসতবাড়ি সংলগ্ন এলাকায় বাঁধ হঠাৎ করে নদীগর্ভে ধসে পড়ায় গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভাঙ্গন আতঙ্কে অনেকে তাদের মূল্যবান জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেয়া শুরু করে।
খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশনাল অফিসার (এসও) আলমগির কবির ও ঠিকাদার দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌছে ভাঙন পয়েন্টে মাটি দিয়ে নদীর পানি ঢোকা বন্ধ করতে গ্রামবাসীদের সাথে নিয়ে নদীতে ভাটা নামার সাথে সাথে সন্ধ্যায় কাজ শুরু করেন। এসময় গ্রামের মসজিদে মাইকিং করে গ্রামবাসীকে বাঁধ রক্ষায় কাজ করতে এগিয়ে আসার আহবান জানানো হয়। গ্রামবাসীদের সাথে নিয়ে লাইট জ্বালিয়ে রাত ১০ টা পর্যন্ত একটানা কাজ করে ভাঙন পয়েন্টে উচু করে বাঁধ দিয়ে কোন রকমে নদীর পরবর্তী জোয়ারের পানি ঢোকা বন্ধ করা হয়।
এদিকে বিছট মোডল বাড়ীর সামনের বাঁধের পাশাপাশি আশাশুনি উপজেলার আরো পৃথক চারটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের দেয়া তথ্যমতে, শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখালী বশিরের গেট, প্রতাপনগর ইউনিয়নের কোলা মধ্যপাড়া জামে মসজিদ, কুড়িকাহুনিয়া লঞ্চ টার্মিনালের দক্ষিণ পাশে ও আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছট খেয়াঘাট ও বিছট মোড়লবাড়ির সামনে এই ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভরা পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে ভাঙন দেখা দেওয়ায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ।
প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান আবু দাউদ জানান, প্রতাপনগর ইউনিয়নের শ্রীপুর কুড়িকাহুনিয়া লঞ্চ ঘাটের দক্ষিণ অংশের শেষ সীমানায় প্রায় দুই শত ফুট বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ফাটল ও ধ্বস দেখা গেছে। যেকোন মুহূর্তে সম্পূর্ণ বেড়িবাঁধ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে প্লাবিত হতে পারে গোটা এলাকা। ভাঙন ও প্লাবন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন এলাকাবাসী। ভরা পূর্ণিমার গোনে নদীর স্রোতের সারাসরি আঘাতে প্রতিনিয়ত বেড়িবাঁধের কোন না কোন স্থানে এ ধরনের ভাঙন হচ্ছে। জোয়ারের সময় নদীর পানি বৃদ্ধিসহ ঝড়োহাওয়ায় তুফানের আঘাত ক্ষতবিক্ষত করে চলেছে পাউবোর উপকূলরক্ষা বেড়িবাঁধ।
তিনি আরও জানান, ঘুর্ণিঝড় আম্ফানের পর প্রায় দুই বছর নদীর জলে প্লাবিত ছিল প্রতাপনগর ইউনিয়ন। শ্রীপুর কুড়িকাহুনিয়া লঞ্চ ঘাটের দক্ষিণ অংশের শেষ সীমানার এ অংশে ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে যেকোন মুহূর্তে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হতে পারে। এছাড়া কোলা মধ্যপাড়া জামে মসজিদ ও হাজরাখালী বশিরের মাছের ঘেরের গেট সংলগ্ন এলাকায় বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বেড়িবাঁধের এসব ভাঙনের বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। আজ সোমবার থেকে পাউবো জিও বস্তা দিয়ে ভাঙন রোধে কাজ করবে বলে আশ্বস্ত করেছে।
এমন আতঙ্কের কথা উল্লেখ করে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ সদস্য প্রার্থী তোষিকে কাইফু বলেন, আশাশুনি উপজেলার তিন ইউনিয়নের পাঁচটি পয়েন্টে বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকায় বিরাজ করছে আতঙ্ক। শনিবার (৮ অক্টোবর) দিনগত রাতে এসব এলাকার বেড়িবাঁধে নতুন করে ধ্বস নেমেছে। বাঁেধর কান্ট্রি সাইডে জিও টিউব দেওয়ার পাশাপাশি রিভার সাইটে হাজার হাজার জিও বস্তা ভর্তি বালু দিয়ে ডাম্পিং না করলে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করেন তিনি। বাঁধ ভাঙার আগে থেকে সিরিয়াস হলে ভাঙন রোধ করা সম্ভব।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সকশনাল অফিসার (এসও) আলমগির কবির জানান, ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে পর্যাপ্ত জিও বস্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঠিকাদারকে সাথে নিয়ে রোববার রাতে টর্চের আলো জ্বালিয়ে গ্রামবাসীর সহায়তায় আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছট গ্রামের মোড়ল বাড়ির সামনের ভাঙন পয়েন্টে আমরা কাজ করেছি। সেখানে মাটি দিয়ে উচু করা হয়েছে। আজ সোমবার সকাল থেকে ঠিকাদার জিও ব্যাগ ও টিউব নিয়ে নিজ দায়িত্বে সেখানে কাজ করবেন।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানেওয়াজ তালুকদার বলেন, বিছট গ্রামের ভাঙনটি নদী ভাঙন। এই প্রাকৃতিক ভাঙনটি রক্ষা করা খুবই কঠিন। ভাঙনের খবর পেয়ে আমার সকশনাল অফিসার ওই গ্রামের বাঁধ সংষ্কারের কাজের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারকে সাথে নিয়ে সেখানে কাজ করছেন। ভাঙন পয়েন্টে ডাম্পিং করার জন্য পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ ও টিউব দরকার। সম্ভব হলে আমি নিজে আজ সোমবার ওই এলাকায় যাবো। উপকূলের জনগণের যানমাল হেফাজতের জন্য বেড়িবাঁধ রক্ষায় আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চারিয়ে যাচ্ছি।
এহেন পরিস্থিতিতে জরুরী ভিত্তিতে ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড তথা সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দ্রæত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন উপকূলীয় এলাকাবাসী।