সারাদেশের ন্যায় বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে বুধবার (৫ অক্টোবর) খুলনার পাইকগাছায় শেষ হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জনপদে বিশেষ করে কপিলমুনিতে পূজা উপলক্ষে রীতিমত শুরু হয় উৎসব। মন্ডপ ও পূজা ঘিরে গোটা এলাকাকে সাজানো হয় ভিন্ন রুপে। সর্বশেষ বিসর্জনের আগে স্ব-স্ব মন্ডপের প্রতীমাগুলোকে নিয়ে কপোতাক্ষ নদীতে ট্রলারযোগে দর্শনার্থীদের জন্য ভেসে চলে বিজয়া শোভাযাত্রা।
এসময় কপোতাক্ষের দু’পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজর ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে আবাল, বৃদ্ধ, বণিতা দর্শনার্থীরা দেবীকে শেষ দর্শনের পাশাপাশি সনাতনীরা মেতে উঠেন সিঁদুর বিনিময়ে। দীর্ঘকালের এ রীতি এখনো বয়ে বেড়ায় জনপদের সনাতনীরা। সন্ধ্যার আগ মূহুর্তে প্রতীমাগুলোকে নিয়ে শোভাযাত্রার ট্রলার বা নৌকাগুলো জড়ো হয় স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী কালিমন্দির প্রাঙ্গন কপোতাক্ষ নদের বারুণী শ্বশানঘাট। ঢাকের বাদ্য আর গান-বাজনা ছাড়াই বিদায়ের করুণ ছায়ায় সারিবদ্ধভাবে শুরু হয় একে একে বিসর্জন পর্ব। এসময় বেদনার শুর ভেসে উঠে সনাতনীদের মাঝে।
এর আগে বুধবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৮ টা ৫০ মিনিটে দর্পণ-বিসর্জনের মাধ্যমে বিদায় জানানো হয় দেবী দুর্গাকে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মানুষের মনের আসুরিক প্রবৃত্তি কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেওয়াই মূলত বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য। এ প্রবৃত্তিগুলোকে বিসর্জন দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠাই এ আয়োজনের উদ্দেশ্য।
এর আগে ১ অক্টোবর থেকে চন্ডীপাঠ, বোধন ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে ষষ্ঠী তিথিতে ‘আনন্দময়ীর’ আগমনে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের শুরু হয়। এরপরের ৪ দিন পূজামন্ডপগুলোতে পূজা-অর্চনার মধ্যদিয়ে ভক্তরা শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন দেবী দুর্গার প্রতি। এরপর দশমী তিথিতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়।
এবার দেবী দুর্গা জগতের মঙ্গল কামনায় গজে (হাতি) চড়ে মর্ত্যালোকে (পৃথিবী) আসেন। এতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঝড় বৃষ্টি হবে এবং শস্য ও ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে স্বর্গে বিদায় নেন নৌকায় চড়ে। যার ফলে জগতের কল্যাণ সাধিত হবে বলে মনে করেন সম্প্রদায়টি।
সনাতনধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস মতে, বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দেবী ফিরে গেলেন স্বর্গলোকের কৈলাসে স্বামীর ঘরে। পরের বছর শরতে আবার তিনি ফিরে আসবেন মর্তলোক এই ধরণীতে যা তার বাবার গৃহ।
পূজার শুরু থেকে প্রতিমা বিসর্জনের জন্য সব ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এবার পাইকগাছা উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভায় সর্বমোট ১৬৫ টি মন্ডপে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিন প্রতীমা বিসর্জন পর্ব দেখতে ও সামিল হতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে পূজা উদযাপন পরিষদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দলের নের্তৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী,সাংবাদিক, সূধী সমাজের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের নের্তৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন কপিলমুনি কালীবাড়ী ঘাটে।