২৯ দিনের নিখোঁজ মরিয়াম মান্নানের মা রহিমা বেগমকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারের পর থেকে এখন পর্যন্ত নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে মুখ খোলেননি রহিমা বেগম। বর্তমানে তিনি পিবিআই কার্যালয়ে রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হবে। এমনটাই জানিয়েছেন পিবিআই খুলনার পিবিআই পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান।
রোববার (২৫ সেপ্টম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বলেন, এখন বাংলাদেশের ’টপ অব দ্যা কান্ট্রি’ রহিমা বেগমের অপরহরণ মামলা। যে মামলাটি আমরা তদন্ত করছি। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ গতকাল (শনিবার) রাতে ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানাধীন সৈয়দপুর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে। উদ্ধারের পর তাকে খুলনায় আনা হয়। আমরা রহিমা বেগমকে আজ সকাল ১১টার দিকে রিসিভ করি। আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। কিন্তু তিনি উদ্ধারের পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনও কথা বলছেন না। তাকে একটু নার্ভাস মনে হচ্ছে। তবে রহিমা বেগম সুস্থ আছেন। আমরা আশা করছি, যে কোন একটা পর্যায়ে তার থেকে সম্পূর্ণ ঘটনা এবং রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হবো।
এতোদিন কোথায় ছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে পিবিআই এসপি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি নিখোঁজ হওয়ার পরে তিনি প্রথমে কয়েকদিন বান্দরবন ছিলেন। তারপর চট্টগ্রামে ছিলেন। এরপর মোকসেদপুর হয়ে তিনি ফরিদপুর আব্দুল কুদ্দুসের বাড়িতে যান। ওই বাড়িতে কিভাবে গেলেন এমন প্রশ্ন আসতে পারে। রহিমা বেগম মহেশ্বরপাশার যে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন, ওখানে ২৮ বছর আগে আব্দুল কুদ্দুস ভাড়া থাকতেন। তিনি সোনালী জুট মিলে চাকরি করতেন, সেই সুবাধে তার সাথে রহিমা বেগমের পরিচয় ছিল। সেই সুবাধে তিনি কুদ্দুসের বাড়ি খুঁজে বের করেন এবং ১৭ সেপ্টম্বর থেকে উদ্ধার করার আগ পর্যন্ত তিনি সেখানে অবস্থান করেন।
পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, আমরা এখনও তদন্ত করছি। প্রাথমিকভাবে উনার (রহিমা) কাছ থেকে সাদা রঙের একটি শপিং ব্যাগ উদ্ধার হয়েছে, যার মধ্যে ওড়না, হিজাব, আয়না, শাড়ি, ওষুধ, স্যালোয়ার কামিজসহ পরিধেয় জিনিস ছিল। তিনি বলেন, স্বাভাবিকভাবে একজনকে অপহরণ করে নিয়ে গেলে এগুলো থাকার কথা নয়। তারপরও আমরা মামলার তদন্ত করছি। তদন্ত শেষে আপনাদের বিস্তারিত তথ্য দিতে পারবো। তবে আপাতত দৃষ্টিতে অপহরণ নাও হতে পারে।
তিনি বলেন, এরআগে উনার(রহিমা) প্রতিবেশীদের সাথে জমি সংক্রান্ত একটি মামলায় বিরোধ আছে। সেই বিরোধকে ঘিরে এ ঘটনা ঘটছে কিনা সেটা আমরা এই মুহুর্তে বলতে পারছি না। তদন্ত করছি, তদন্ত শেষে প্রতিবেদন যখন বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করবো তখন বিস্তারিত আপনাদের জানাতে পারবো।
পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, রহিমা বেগম অপহরণের অভিযোগে পূর্ব থেকে ৬ গ্রেপ্তার রয়েছেন। আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করেছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করবো, তারা এই মামলার সাথে সম্পৃক্ত আছে নাকি সকলে নিরাপরাধ এটা তদন্ত শেষে বলা যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, মা হারিয়ে গেলে স্বাভাবিকভাবে যে কেউ একটু রিয়্যাক্ট করেন। এটাকে আমরা স্বাভাবিকভাবে দেখতে চাই। নিশ্চিই তিনি (মরিয়ম মান্নান) এখন কোন পোস্ট দিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি তিনি সমর্থন ব্যক্ত করবেন এবং উনার ভূল উনি স্বীকার করবেন।
তিনি বলেন, রহিমা বেগমের সঙ্গে ফরিদপুর থেকে আনা তিনজন দৌলতপুর থানা পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। আমরা তাদের এখনও রিসিভ করিনি। রিসিভ করার পর জিজ্ঞাসাবাদ করবো।
তিনি জানান, উদ্ধারকৃত রহিমা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ আদালতে প্রেরণ করা হবে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত আদালত থেকে হবে বলেও জানান তিনি।