শেখ রিয়াজ হোসেন। পিতা শেখ আবুল হোসেন। বাড়ি খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার পানিগাতী গ্রামে। ৩৫ বছর বয়েসই একজন নিঃস্বার্থ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠক হিসেবে উপজেলাব্যাপী ব্যাপক সুনাম এবং পরিচিতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।
২০১০ সাল থেকে স্বপ্রণোদিত হয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে নিজে এবং অন্যান্যদের অনুপ্রাণিত করে টিম লিডার হিসেবে সমাজের সেবামূলক নানা ধরনের কাজ করে যাচ্ছেন । দেশের যে কোনো দুর্যোগ, মহামারী এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষের পাঁশে এসে দাঁড়ান। তাঁদের সহযোগিতায় এবং মানসিক সাহস যোগান।
তাঁর উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের মধ্যে ৫ নভেম্বর ২০১৯ ঘূর্ণিঝড় বুলবুল চলাকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত দিঘলিয়া উপজেলার মোমিনপুর ভেড়ীবাধঁ স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে সংস্কার করেন । তাঁর সহযোগিতায় এ পর্যন্ত ৩০০ জনকে রক্তদান করা হয়েছে। সালাম মূর্শেদী সেবা সংঘের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হিসেবে সংঘের সদস্যদের নিয়ে নানাবিধ সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। ঠোঁটকাটা শিশুদের মুখে হাঁসি ফোঁটানোর জন্য নিরন্তর চেষ্টা হিসেবে তাঁদের চিকিৎসা সেবা প্রদান প্রদান করে চলেছেন এবং এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন দরিদ্র পিতামতার ঠোঁটকাটা শিশুদের মুখে হাঁসি ফুঁটিয়েছেন।
দিঘলিয়া উপজেলায় তিনিই সর্বপ্রথম ‘পরিচ্ছন্ন দিঘলিয়া’ নামে কোন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোক্তা। এ সংগঠনের মাধ্যমে তিনি তার সংগঠনের অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সদস্যদের নিয়ে পরিল্পিতভাবে দিঘলিয়া এলাকার বর্জ্য নিষ্কাশন ও পরিষ্কার পরিছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছেন। সেবাসংঘের মাধ্যমে তিনি এলাকার অনেক অসহায়দের গৃহ নির্মাণ করে দিয়েছেন।
বৈশিক মহামারি কোভিড-১৯ করোণাকালীন সময়ে তিনি দিঘলিয়া উপজেলায় সারমিন সালাম অক্সিজেন ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় গুরুতপূর্ন ভূমিকা পালন করেন। এ অক্সিজেন ব্যাংকের মাধ্যমে তিনি মহামারী কোভিড-১৯ করোনাকালীন সময়ে অসহায় রোগীদের মোটরসাইকেলে কাঁধে করে নিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করেছেন।
মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে এলাকার দরিদ্র, অসহায় মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। নৈতিক ও চারিত্রিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে সমাজে নারী ও যুবকদের নিয়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্র পরিচালনা ও চর্চা করা থাকেন প্রতিবন্ধী অসহায় ও দুঃস্থ্য শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বিভিন্ন রকম কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন।
কোভিড-১৯ চলাকালীন সময়ে ডোর টু ডোর এসেন্সিয়াল ফুড এন্ড ড্রাগ সাপ্লাইয়ের দিঘলিয়া উপজেলার পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। এ সময় উপজেলার প্রায় ৫ হাজার মানুষকে বিভিন্ন মাধ্যমে খাবারের ব্যবস্থা করে এলাকায় ব্যাপক প্রশংসিত হন। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং বিশুদ্ধ অক্সিজেন সরবরাহের লক্ষ্যকে সামনে রেখে তাঁর নেতৃত্বে দিঘলিয়া উপজেলায় প্রতি বছর বৃক্ষ রোপন করা হয়।
২০১৭ সালে দিনাজপুরের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে তাঁর নেতৃত্বে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পরিচ্ছন্ন দিঘলিয়ার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি তাঁর সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী সদস্যদের নিয়ে মশক নিধন অভিযান পরিচালনা করেন। ফলশ্রুতিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বর্ণনা মতে দিঘলিয়া উপজেলায় ডেঙ্গুর হার শূন্যের কোঠায় নেমে আসে।
শেখ রিয়াজ হোসেন খুলনা গেজেটকে তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, প্রচারের আশায়, কোন কিছু পাওয়ার বিনিময়ে কিংবা পুরস্কৃত হওয়ার লোভে এ সকল মানবিক কাজগুলো করিনা। আমার এ সকল ভালো কাজগুলো দেখে সমাজের অন্যান্য যুবকরা যাতে উৎসাহিত হয় এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এ সকল মানবিক কাজগুলো উদাহরণ হয়ে থাকবে এই মানসিকতা থেকেই স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে মানবিক কাজগুলো করে থাকি।
খুলনা গেজেট/ টি আই