শিবুর মনটি খুব আনচান করছে। জীবন স্যারের কথা খুব মনে হচ্ছে। জীবন স্যার যখন কথা বলতেন, যেন শব্দ দিয়ে ছবি এঁকে দিতেন। কথাগুলো ছবি হয়ে ভেসে উঠতো। দেখতে দেখতে সময় যায়। গাছের পাতা বিবর্ণ হয়। রাস্তার মাটি সরে যায়। এলাকার মানুষগুলোর চেহারায় পরিবর্তন হয়। নোনা পানিতে ক্ষেত ভরে থাকে। তবে নদীতে জোয়ারভাটা ঠিকই হয়। জোয়ারে নিয়ে আসে ঘোলা পানি। ভাটায় যায় বেশীরভাগ স্বচ্ছ পানি। ঘোলা মানে বালু মেশানো পানি। বালু মানে পলি বা পলল। এই পলি-মাটি থিতু হয়ে এখানকার ভূমি গড়ে উঠেছে। হুমম, আগে জল; পরে সেই জলের সাথে আসা পলি জমে গড়ে ওঠে জমি; তারপর জঙ্গল বা বনভূমি গড়ে ওঠে; পরে জন-বসতি বা মানুষের বসবাস। জল-জমি-জঙ্গল-বসতি। এই ঘোলা জল দেখে কবি জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন – রূপসার ঘোলাজলে কিশোর এক ডিঙ্গা বায়।
এক সময় এলাকাটি ছিল সমূদ্র-গর্ভে। ছিল নোনা বনভূমি। বছরের পর বছর পলি-মাটি জমে ভূমি গড়ে উঠেছে। সেই পলিতে গড়ে উঠেছে জঙ্গল, নোনা-বনভূমি। ম্যানগ্রোভ বা বাদাবন। আর মানুষ এসেছে সেই ভূমিতে বসতি গড়ে তুলতে। বসতির প্রয়োজনে বন কাটা পড়েছে। বন আরও দক্ষিণে সরে গেছে। শত শত ছোট-বড় নদী। বসতিগুলো ছোট ছোট দ্বীপের মতো। ভৈরব-রূপসা-কাজীবাছা-পশুর দক্ষিণমুখী একটি শ্রোত; পশ্চিম দিকে কপোতাক্ষ দক্ষিণমুখী আর একটি শ্রোত। আরও পশ্চিমে ইছামতি-কালিন্দি একটি শ্রোত। এই নদীগুলো সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে এঁকেবেঁকে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। পশুর নদের মোংলার পাড়ে বন্দর। বনের মধ্যে দিয়ে ১৩০ কিলোমিটারের মতো নদ-নদী প্রবাহিত হয়েই তবে পড়েছে সাগর মোহনায়। হিরণ পয়েন্ট। এই বড় দুই নদী-শ্রোতের মাঝে অনেক নদী। শুধুমাত্র দক্ষিণমুখী নদী নয়, আছে পূর্ব-পশ্চিমমুখী নদী, আছে অশ^খুরাকৃতির ন্যায় নদী। শুধুমাত্র খুলনা উপকূলেই এমন দেখা যায়। একেবারে স্বতন্ত্র্য। অন্য উপকূল হতে আলাদা। এটা গাঙ্গেয় প্লাবনভূমির একেবারে নীচের অংশ। এখানে স্থায়ীভাবে মাটির বাঁধ দেয়া হয় নোনা পানি আটকানোর জন্যে। এখন সেই নোনার কদর। সেই নোনা টেনে আনা হচ্ছে। জোয়ারের পানির সাথে নোনা আসে, পলিও আসে। জীবন স্যার আর এলাকায় নেই। কোথায় যেন চলে গিয়েছেন। ভিটেমাটি ছেড়ে গেছেন। পাশের বাড়ির স্বপনদের কাছে না-কি জমি বিক্রি করেছেন, না-কি ওদের দিয়ে গিয়েছেন, কিছুই পরিষ্কার নয়। কেউ কিছু বলতে চায় না। তবে তিনি আর আসবেন না। সকলে বলাবলি করছেন, তিনি ভারতে গিয়েই মুখ লুকিয়েছেন।
জীবন স্যার ক্লাসে ভরাট গলায় এসব বলতেন। আরও বলতেন, জননী জন্মভূমিস্চ স্বর্গাদপী গরিয়সী। শিবু’র স্যারের কথা খুবই মনে পড়ছে। ঘুরে-ফিরে ক্লাসের স্যারকেই চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে। স্যারকে সরিয়ে অন্যদিকে মন দিতে চাইছে, কিন্তু পারছে না। জননী। মা। মায়ের চেয়েও বড় জন্মভূমি। আমাদের দুটো মা। একটি আমাদের যিনি জন্ম দিয়েছেন, গর্ভে ধরেছিলেন, তিনি। আর একটি মা যে ভূমিতে আমার জন্ম, সেটা। জন্মভূমিকে মায়ের অধিক ভালোবাসতে হবে। তার বাড়ির বারান্দায় ছিল সারি সারি কয়েকটি ছবি। বাঁদিক থেকে ডাইনে বসানো প্রথম ছবিটি বাংলাদেশের মানচিত্র, তারপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের, এরপর আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা বিশ^কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাুকরের ছবি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের, একেবারে শেষের ছবিটি তাঁর -একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পর্বের। প্রতি সন্ধ্যায় সেসব ছবিতে ধূপ-ধুনোর আলো-ধোঁয়া দেয়া হতো। সেই মানুষটি লজ্জা-ঘৃণায়-অপমানে পালিয়ে গেল সেই মা-ভূমিকে ছেড়ে। আ-হা। এ যে যন্ত্রণার! তবে যে তপন দা’ বলেছিল, সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার কিছুই নেই। এটি অর্থনৈতিক কর্তৃত্ববাদিতার ফল। রাষ্ট্র এই ধনীদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। তাই অপেক্ষাকৃত গরীব, দুর্বল, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ হচ্ছে; এটাই হয়ে থাকে।
তপন দা’ অবশ্য এই এলাকার ভৌগলিক পরিবেশকেও ভূমির উপর আক্রমণের জন্যে দায়ী করেন। এমনতরো জোয়ার-ভাটার অঞ্চল, ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল, উর্বর ভূমি আর কোথায় মিলবে! কিন্তু শেষ পর্যন্ত জীবন স্যার আর এই পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারলেন না। যিনি দেশটিকে ভালোবেসেছিলেন অনেক, অনেক বেশী। যৌবনে, ১৯৭১এ যুদ্ধ করেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গর্ব করতেন। শিক্ষকতায় আনন্দ পেতেন। নিজের কাজে তৃপ্তিবোধ ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লজ্জায় সেই তিনিই দেশ ছেড়ে চলে গেলেন। এখন আর চিংড়ি চাষ নিয়ে বিরোধিতা নেই বললেই চলে। সবকিছু চুপচাপ। সবাই যেন সবকিছু মেনে নিয়েছে। যার যার জমি গেছে নোনা পানির তলায়, তারা চেষ্টা করছে হারি (জমির ভাড়া) বাবদ টাকা আদায় করার। শিবুদেরও দশ বিঘে জমি গেছে ওই চিংড়ির ঘেরে। এখন এলাকার চেয়ারম্যান হয়েছে চিংড়ি চাষীর প্রতিনিধি। অনেকবার চেয়ারম্যানের কাছে হাঁটাহাঁটি করেও শিবু’র বাবা একটি টাকাও পায়নি। অবশ্য, জমি সে লীজ (ভাড়া) চুক্তি করে দেয়নি। তার মতো আরও অনেকেই লীজ চুক্তি করেনি। গ্রামের অনেকেই ওই চুক্তি করেনি। শোনা গেছে, তারা চুক্তি না করলে কি হবে, চিংড়ি ঘের মালিক একটি লীজ-চুক্তি প্রশাসনকে দেখিয়েছে, তাতে নাকি সকলেরই সই আছে। কেউ সই না করলেও সকলের সই সেখানে উঠেছে। কিভাবে হ’ল? তপন দা’র ব্যাখ্যা, ওরে হয়, হয়; সবকিছু হয়। যাদের টাকা আছে তাদের ক্ষমতা আছে; আর টাকা থাকলে সবকিছুই হয়। ওই যে বলে না, টাকায় বাঘের চোখও মেলে!
আজকাল প্রতি রাতেই বন্দুকের, বোমার আওয়াজ পাওয়া যায়। চিংড়িঘেরগুলো পাহারা দেওয়ার জন্যে শহর থেকে আনা অস্ত্রধারীরা থাকে। তাদের জন্যে ঘেরের পাশেই ঘর উঠেছে। সেখানেই তারা থাকে। হৈ হল্লা করে। রাতের বেলা তারাই এসব আওয়াজ করে। প্রথম প্রথম এসব আওয়াজ শুনে শিবু চমকে উঠতো। ঘুমের ঘোরেই কেঁপে কেঁপে উঠতো। মাকে জড়িয়ে ধরতো। মাও তাকে কাছে টেনে জড়িয়ে রাখতো। পরে এটি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। ভয়ও কমেছে। শুধু কি রাতের বেলা! দিনের বেলায়ও তারা বন্দুকের আওয়াজ করে। যখন-তখন যাকে-তাকে গালি-গালাজ করে। মারধর করে। তাদের দৌরাত্মে চলাফেরা করা দায়। মা- বোনেরা ভয়ে কুঁকড়ে থাকেন। আগে চলা-ফেরার যে শান্তি ছিল, তা আর নেই। এলাকার মধ্যে চলাফেরায় কেউ কোন বাধা দিতো না। একে অপরের খোঁজ-খবর নিতো। বড়দের সমীহ করতো। ছোটদের ¯েœহ করতো। সম্প্রীতি ছিল। সেসবে চিড় ধরতে শুরু করেছে।
আচমকাই সে মায়ের কাছে বায়না ধরে – মা, এবারে কিন্তু আমি একদিন মেলায় যাবো। মা জবাব দেয়, ‘মেলার-তো অনেক দেরী আছে। তহোন দেহা যাবে।’ চৈত্র সংক্রান্তির মেলা। তিন দিন ধরে মেলা হয়। তার আগে পাট পুজো হয়। সেই পুজোর জন্যে অস্টক দল গান গেয়ে বেড়ায়। পালা করে, সুর করে নানা ঘটনার বর্ণনা দেয়। সবচেয়ে শিবুর মনে ধরে যে লোকটা শিব সেজে ঘুরে বেড়ায়। মুখে কালি, মাথায় জটা, তাতে একটি প্লাস্টিকের সাপ জড়ানো, পেটটা বড় তৈরি করা, হাতে ডম্বুরি। আর কথায় কথায় সাপ নিয়ে ছোটদের ভয় দেখানো। এবার কি মেলা হবে! সেখানেও-ত নোনা পানি।
এলাকাবাসী প্রকৃত বিপদটি টের পায় আরও পরে। পুরোদমে বর্ষা শুরু হয়েছে। আমন ধানের বীজতলা করতে হবে। ধানের জমিতে চাষ দিতে হবে, কিন্তু জমিতে এখনও নোনা পানি। আমন ধান চাষের জন্যে নোনা পানি সরিয়ে নেয়ার কথা। চুক্তি অনুযায়ী এ সময় জমি চিংড়ি চাষীর দখলে থাকবে না। কিছু কিছু এলাকায় কেউ কেউ জমি ছেড়ে দিয়েছে, কিন্তু অনেক জায়গায় জমি ছেড়ে দেয়নি। শিবুদের জমিও ছাড়েনি। তাদের জমিটা একটু ভিতরে। এখনও সেখানে নোনা পানি থৈ থৈ করছে। শিবুর বাবা অনাথবন্ধু প্রতিদিনই জমির দিকে যান, ঘুরেফিরে চলে আসেন। আর হা-হুতাশ করেন। — এ আমাইগে কি হলোরে। আমরাতো সব না খাইয়ে মইরে যাবো। নিজিগি জমি, ভাগের জমি সবতো নোনা জলে ডুবোনো। এই জল কবে সরবে, আর কবে জমিতি পাতা ফেলবো। ধান না হলি কি খাবো। কি দিয়ে সংসার চলবে। সক্কুলিরতো না খাইয়ে মরতি হবে। আমাইগে কি কোনভাবে মুক্তি নেই। মুক্তি না হলি মরণই হোক, তাওতো হয় না।
শিবু ভাবে, মরণ চাইলেই কি হয়! কষ্টে থাকা, ব্যথায় কুঁকড়ে থাকা মানুষ মরতে চায়! কিন্তু মানুষ কি মরতে চায়? সামাজিক দায়-দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে মানুষ কি সমাজ-সংসার হতে পালাতে চায়। নিষ্কৃতি পেতে চায়। এ কারণে মরণকে আহ্বান করা। কখনও কখনও আপন মনে গেয়ে ওঠা, মরণরে তুহু মম শ্যাম সম। কবিও কি কখনও মরতে চেয়েছিলেন, না-কি তিনি মানুষের মনোবেদনা উপলব্ধি করে একথা লিখেছেন। কিন্তু অনাথবন্ধুরাতো জীবনের সামনের দিনগুলো অন্ধকার দেখতে শুরু করেছেন। একভাবে জীবনকে টেনে নিয়ে যাওয়া মানুষগুলো হঠাৎ করেই তার ছেদ ঘটায় মুষড়ে পড়েছে। এ অবস্থাই কি চলতে থাকবে, এর কি শেষ হবে না। নিজেদের সহায়-সম্পদ নিয়ে কি নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। এটাতো অরাজকতা! কিন্তু কিছু বলার উপায় নেই। বললেই বিপদ। কথায় কথায় বাড়ি-ঘরে হামলে পড়া, আগুন দেয়া, মেয়েদের দিকে তাকিয়ে কুৎসিত কথা বলা। মেয়েরা আর রাস্তায় বেরুতে পারে না। ঘরে থেকেও বিপদ থেকে মুক্তি নেই। সেদিন ওই কোণার বাড়িতে কয়েকজন ঘের পাহারাদার ওই বাড়ির হাঁস ঘেরের পানিতে নেমেছে বলে বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করে; মেয়েদের গায়ে হাত দেয়; হায়!
খুলনা শহরে শাসক দল জাতীয় পার্টির অফিসের পাশে একটি সুসজ্জিত ঘরে সভা বসেছে। সেখানে জাতীয় পার্টির নেতারা আছেন। আরও আছেন অন্যান্য দলের দু’-একজন নেতা। সেখানে বসে দাকোপের বাকী জমিগুলো ভাগ-বাটোয়ারা করে নোনা পানির চিংড়ি ঘের গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। একজন নেতা খুবই গরম বক্তব্য দেন : ’আমাদের সরকার বৈদেশিক মূদ্রা আনার জন্যে চিংড়ি চাষ শুরু করেছে। কিন্তু কতিপয় লোক বাধা দিচ্ছে। বাধাদানকারীরা মোটেই দেশের উন্নয়ন চায় না। তাদেরকে হঠিয়ে আমাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ওই এলাকাটি হিন্দু প্রধান। হিন্দুরা পাকিস্তান চায়নি। বাংলাদেশেরও উন্নয়ন চায় না। তাদের জমিগুলোয় নোনা পানি তুলে চিংড়ি চাষ করতে হবে। যদি কেউ সহজে রাজি হয়, তবে কিছু পয়সা দেয়া যাবে। না হলে জোর করে দখল নিতে হবে। পুলিশ আমাদের সাথে, নেতারা আমাদের সাথে, সরকার আমাদের সাথে।’ এ কথা বলে তিনি নেতার ভাইপোকে দায়িত্ব দেন। তার দিকে আঙ্গুল তুলে তিনি বলেন, এই শরীফ তুমি তোমার লোকজন নিয়ে এলাকায় যাবে, বাঁধ কাটবে, পানি তুলবে, চিংড়ি চাষ হবে; কেউ বাধা দিলে তাকে পিটিয়ে এলাকা ছাড়া করে দেবে। আর যেসব জায়গায় পানি সরানোর জন্যে ওখানকার মানুষরা আবদার জুড়েছে, তাদেরকে বুঝিয়ে দেবে, ওসব হবে না। নোনা পানি থাকবে, চিংড়ি চাষ হবে; তাদের ধান কিভাবে হবে তা আমরা জানি না। যেই ইনিয়ে-বিনিয়ে কথা বলতে আসবে, তাকে পিটিয়ে এলাকা ছাড়া করে দেবে। পুলিশের সাথে আমার কথা হয়েছে, তারা কিচ্ছু বলবে না।
যে কথা, সেই কাজ! পরদিন সকালেই আঁধার থাকতে থাকতেই শতাধিক ট্রলারে লোকজন অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দাকোপ সদরের ভদ্রা, ঢাকি নদীর পাড়ে শরিফের বাহিনী হামলে পড়ে। একদল লোক অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে থাকে, আর একদল যে যার মতো বাঁধ কেটে নদীর পানি ঢোকাতে শুরু করে। মাঝে মাঝে উল্লাসে তারা নিজেরাই চেচামেচি করতে থাকে, বন্দুকের গুলি ফোটায়। মানুষ সেই শব্দেই ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে নদীর পাড়ে, জমির পাশে এসে দেখে অস্ত্রধারীরা বাঁধ কাটছে, নোনা পানি তুলছে; সাপের মতো এঁকেবেঁকে সেই পানি জমির একপাশ দিয়ে শুরু করে আর এক পাশ ছোঁয়ার দৌড়-প্রতিযোগিতায় নেমেছে। আশেপাশের আগেকার অভিজ্ঞতা হতে মানুষ আর অস্ত্রধারীদের কাছে ভেড়ে না; কেউই বাধা দিতে এগোয় না।
শিবুদের বাড়িতে, গ্রামে সর্বত্র এখন নান আলোচনা। আর ফিসফিস, কানাঘুষা। সেদিনও নতুন এক খবর শোনা গেল। ম-লরা আর নেই। চলে গিয়েছে। কোথায় গিয়েছে তা জানে না। তাদের বাড়ি এখন চিংড়ি চাষী শরিফের পাহারাদার রফিকের দখলে। রফিক বলেছে, সে ম-লদের বাড়ি-জমি কিনে নিয়েছে। আর তাদের ই-িয়ায় পৌঁছে দিয়েছে। ওরা সেখানেই ভালো থাকবে। আর রফিকরা এখানে থাকবে। গ্রামের লোকেরা এসব কথা শোনে, আর প্রমাদ গোনে, নিজেদের বিপদ যেন আরও কাছে আসতে দেখে। আচ্ছা, সকলেই কি এলাকা ছেড়ে চলে যেতে পারবে! যারা পারবে না, তারা কিভাবে এখানে থাকবে। আর সত্যিই কি রফিক ম-লদের টাকা দিয়ে জমি কিনেছে। তাতো বুঝার উপায় নেই। সত্যতা যাচাই করবে কি করে! তবে কেউ কেউ বলাবলি করছে, রফিকরা দলবল নিয়ে একদিন রাতের বেলা ম-লদের বাড়িতে চড়াও হয়েছিল। সুন্দরবন হতে হরিণ ও নানাবিধ মাছ ধরে সেখানে নিয়ে হাজির হয়। বাড়ির মেয়েদের ওই রাতে তাই রান্না করে দিতে হয়। রাতে সেই বাড়িতে তারা খাওয়ার আসর বসায়। পরে পুরুষদের বাড়ির বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে মেয়েদের থাকতে বাধ্য করে। ওই রাতে সেখানেই তারা রাত কাটায়। এতে লজ্জা-ঘৃণায় তারা সকলেই দেশান্তরি হয়েছে। কি করে টিকে থাকবে! (চলবে)