নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় টালমাটাল শ্রীলঙ্কায় নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আজ। বুধবার (২০ জুলাই) শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের সদস্যরা ভোট দিয়ে দেশের নতুন নেতা নির্বাচিত করবেন।
এর আগে অবশ্য নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে ফের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়। বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকট ও গণআন্দোলনের মধ্যে পদে থাকা অবস্থায়ই সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার এক সপ্তাহ পর নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ভোট দিতে প্রস্তুত শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের সদস্যরা।
গোতাবায়ার উত্তরসুরী হিসেবে শ্রীলঙ্কান প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহেকে দেশটির ক্ষমতাসীন দল মনোনীত করেছে এবং ভোটাভুটির লড়াইয়ে তিনিই সামনের সারিতে রয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
কিন্তু রাজাপাকসে পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত রনিল বিক্রমাসিংহে শ্রীলঙ্কায় গভীরভাবে অজনপ্রিয়। এছাড়া গত সপ্তাহে বিক্ষোভকারীরা তার ব্যক্তিগত বাসভবনে আগুন দেওয়ার পর তিনি পদত্যাগ করবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে পদত্যাগ করার পর বিক্রমাসিংহের পদত্যাগও দাবি করে আসছেন বিক্ষোভকারীরা।
এদিকে প্রেসিডেন্ট পদের লড়াইয়ে প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহে গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারেন শাসক দলের এক এমপির কাছ থেকে। ক্ষমতাসীন দলের ভিন্নমতাবলম্বী ওই আইনপ্রণেতার নাম দুল্লাস আলাহাপেরুমা। বিক্রমাসিংহের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাকে সমর্থন দিয়েছে শ্রীলঙ্কার প্রধান বিরোধী দল।
আলাহাপেরুমা শ্রীলঙ্কার শাসক দল পোডুজানা পেরামুনা (এসএলপিপি)-এর একজন সিনিয়র সংসদ সদস্য। রাজাপাকসের অধীনে তিনি মন্ত্রী ছিলেন। তবে গত এপ্রিলে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হলে তিনি পদত্যাগ করেন।
বিবিসি বলছে, বুধবারের এই নির্বাচনে যিনিই জয়ী হবেন, তিনি কার্যত সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের মেয়াদের বাকি সময় দায়িত্বপালন করবেন। মূলত ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দায়িত্বপালন করবেন নতুন প্রেসিডেন্ট।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নতুন প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে রনিল বিক্রমাসিংহে, দুল্লাস আলাহাপেরুমা এবং বামপন্থি ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার পার্টির নেতা অনুরা কুমারা দিসানায়েকের মধ্যে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। বুধবার শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের মোট ২২৫ জন সংসদ সদস্য ভোট দেবেন। জয়ী হতে হলে কোনো প্রার্থীকে মোট ভোটের অর্ধেকেরও বেশি ভোট পেতে হবে।
এদিকে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে শ্রীলঙ্কায় ফের জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। গত রোববার সন্ধ্যায় দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে এক বিজ্ঞপ্তিতে এই আদেশ জারি করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘জননিরাপত্তা নিশ্চিত, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঠেকানো এবং সরকারি জরুরি সেবা ও সরবরাহ অব্যাহত রাখতে বর্তমান পরিস্থিতিতে এই আদেশ সমীচীন।’
জরুরি অবস্থা জারির মানে দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়া। জননিরাপত্তা ও সরকারি সম্পদ ও স্থাপনা রক্ষায় এই সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যেকোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে পারেন।
এছাড়া ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে তল্লাশি চালানোর ও জনবিক্ষোভ দমনের ক্ষমতাও দেওয়া হয় আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে।
উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর বর্তমানে সবচেয়ে ভয়াবহ আর্থিক সংকট পার করছে শ্রীলঙ্কা। বর্তমানে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বলতে কিছু নেই। ফলে খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যও আমদানি করতে পারছে না দক্ষিণ এশিয়ার ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ অধ্যুষিত ছোট এই দ্বীপরাষ্ট্র।
এ পরিস্থিতিতে গত মার্চ থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয় শ্রীলঙ্কায়। আন্দোলনের চাপে গত মে মাসে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসে। তারপর গত সপ্তাহে গোপনে দেশ থেকে পলায়ন করেন তার ছোটভাই ও শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। তার দেশ ত্যাগের পর থেকে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে আছেন।
দেশ ছাড়ার পর ইমেইলে পদত্যাগ পত্র পাঠান গোতাবায়া। শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণও করেছে। এখন দেশটির সংবিধান অনুযায়ী একটি সর্বদলীয় সরকার গঠিত হবে। আর সেই সরকারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন পার্লামেন্ট সদস্যরা।