সার্বিয়া থেকে বাংলাদেশে সমরাস্ত্র নিয়ে আসার সময় ইউক্রেনীয় একটি কার্গো উড়োজাহাজ উত্তর-পূর্ব গ্রিসে বিধ্বস্ত হয়েছে। শনিবার গভীর রাতে গ্রিসের উত্তরাঞ্চলের কাভালা শহরে বিধ্বস্ত ওই কার্গো উড়োজাহাজের ৮ ক্রুর সবাই মারা গেছেন। রোববার সার্বিয়ার কর্তৃপক্ষ ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ড্রোনে তোলা দুর্ঘটনাস্থলের ছবিতে দেখা যায়, গ্রিসের কাভালা শহরের প্রত্যন্ত একটি এলাকার মাঠে আছড়ে পড়েছে অ্যান্তনোভ অ্যান-১২ কার্গো উড়োজাহাজটি। গ্রিক কর্তৃপক্ষ বলেছে, উড়োজাহাজটিতে মোট ৮ জন ক্রু ছিলেন। ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ৮ ক্রুর সবাই ইউক্রেনের নাগরিক।
সার্বিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, সার্বিয়ার প্রতিরক্ষা কারখানায় তৈরি সাড়ে ১১ টন পণ্য পরিবহন করছিল উড়োজাহাজটি। আর এই পণ্যের ক্রেতা ছিল বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তিনি বলেছেন, বিমানের ক্রুদের সবাই মারা গেছেন।
গ্রিসের কর্তৃপক্ষ বিধ্বস্ত এই কার্গো উড়োজাহাজের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করতে পারেনি। তবে উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের এই ঘটনা তদন্তের জন্য দুর্ঘটনাস্থলে বিশেষ দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী এবং সামরিক বিশেষজ্ঞদের মোতায়েন করেছে দেশটি।
সার্বিয়ার প্রতিরক্ষা কারখানায় তৈরি সাড়ে ১১ টন পণ্য পরিবহন করছিল উড়োজাহাজটি। আর এই পণ্যের ক্রেতা ছিল বাংলাদেশ।
সার্বিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী নেবোজসা স্টেফ্যানোভিস বলেছেন, বিধ্বস্ত কার্গো উড়োজাহাজটিতে মর্টার শেল এবং প্রশিক্ষণ শেল ছিল। এটি নিস থেকে স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৪০ মিনিটে যাত্রা শুরু করে। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৈরি সাড়ে ১১ টন পণ্য পরিবহন করছিল উড়োজাহাজটি। এই পণ্যের ক্রেতা ছিল বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
সার্বিয়ার এই প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটি সার্বিয়ার কোম্পানি ভ্যালির মালিকানাধীন ছিল। কোম্পানিটি সামরিক সরঞ্জাম এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষা পণ্যের বৈদেশিক বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য নিবন্ধিত একটি বাণিজ্যিক সংস্থা।
সার্বিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশন চ্যানেল ইআরটি বলেছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পাইলট গ্রিসের এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছে জরুরি অবতরণের অনুমতি চাওয়ার পরপরই রাডারের সঙ্গে উড়োজাহাজটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইআরটিনিউজে আপলোড করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মাটিতে দ্রুতগতিতে আছড়ে পড়ার আগে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। পরে উড়োজাহাজটিতে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটে।
এদিকে, বিমানটি জর্ডানের দিকে যাচ্ছিল বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেলেও দেশটির সিভিল এভিয়েশন রেগুলেটরি কমিশনের (সিএআরসি) একটি জ্যেষ্ঠ সূত্র তা অস্বীকার করেছে। ওই সূত্র দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা পেত্রাকে বলেছে, জ্বালানি নেওয়ার জন্য জর্ডানের কুইন আলিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৯টায় যাত্রাবিরতি করার কথা ছিল উড়োজাহাজটির।
গ্রিসের যে এলাকায় উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে, শনিবার রাত থেকে বিস্তৃত সেই এলাকা ঘিরে রেখেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের বাড়িঘরের দরজা ও জানালা বন্ধ এবং দুর্ঘটনাকবলিত এলাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
রোববার সকালের দিকে গ্রিসের সামরিক বাহিনীর একজন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন, অগ্নিনির্বাপক কর্মীদের ঠোঁট জ্বালাপোড়া করছে এবং বাতাসে সাদা ধুলা ভাসছে। দেশটির ফায়ার ব্রিগেড সমন্বয়কারী মারিওস অ্যাপোস্টোলিডিস বলেন, আমাদের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়ছে, তা আমরা জানি না।
খুলনা গেজেট/ এস আই