বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের দূরবর্তী ছায়াপথ থেকে আসা একটি অস্বাভাবিক ও পুনরাবৃত্তিমূলক সংকেত খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এটি রেডিও শক্তির বিচ্ছুরিত ঝলকানি, যা হৃদস্পন্দনের প্যাটার্নের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। এই সংকেতের উৎস পৃথিবী থেকে কয়েক বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের একটি ছায়াপথে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, দূর ছায়াপথ থেকে আসা এই রহস্যময় সংকেতের উৎস রেডিও শক্তির দ্রুতগতির শক্তিশালী বিস্ফোরণ, যা মহাকাশের গভীর থেকে আসে। এই বিস্ফোরণগুলোও অদ্ভুত। এটি সাধারণ এফআরবি-র (Fast Radio Brust) মিলিসেকেন্ডের চেয়ে তিন সেকেন্ড পর্যন্ত দ্রুতগতির কাছাকাছি।
সংকেতটি এমন একটি ‘পর্যায়ক্রমিক’ প্যাটার্নে জ্বলছে যা মহাবিশ্বে খুব কমই পাওয়া যায়। শক্তির বিস্ফোরণ প্রতি শূন্য দশমিক ২ সেকেন্ডে পুনরাবৃত্তি হয়।
মহাবিশ্বের দূর ও নিকটবর্তী ছায়াপথ থেকে এ পর্যন্ত যত সংকেত শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে তা মধ্যে এটি সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী এফআরবি। এই সংকেতের মধ্যে সবচেয়ে পরিষ্কার পর্যায়ক্রমিক প্যাটার্ন রয়েছে।
সংকেতটির উৎস ঠিক কী হতে পারে তা বিজ্ঞানীদের কাছে এখনো একটি রহস্য। তবে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এটি রেডিও পালসার বা ম্যাগনেটার থেকে নির্গত হতে পারে।
বিজ্ঞানীরা এই উৎস থেকে আরও পর্যায়ক্রমিক সংকেত শনাক্ত করার আশা করছেন। তা সম্ভব হলে তখন একটি অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল ঘড়ি হিসেবে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
উদাহরণ স্বরূপ, বিস্ফোরণের ফ্রিকোয়েন্সি ও উৎস পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এগুলো কীভাবে পরিবর্তিত হয় তা পর্যালোচনা করা সম্ভব হবে। মহাবিশ্ব যে হারে প্রসারিত হচ্ছে তা পরিমাপ করতে তখন এই গবেষণা ব্যবহার করা যেতে পারে।
ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (এমআইটি) কাভলি ইনস্টিটিউট ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্স অ্যান্ড স্পেস রিসার্চের পোস্টডক ড্যানিয়েল মিচিলি বলেন, ‘মহাবিশ্বে এমন অনেক কিছু নেই যা কঠোরভাবে পর্যায়ক্রমিক সংকেত নির্গত করে।
‘আমাদের নিজস্ব গ্যালাক্সিতে আমরা যে উদাহরণগুলো জানি তা হল রেডিও পালসার ও ম্যাগনেটার, যা ঘোরে এবং একটি বাতিঘরের মতো রশ্মি নির্গমন উৎপন্ন করে।
‘আমরা মনে করি এই নতুন সংকেত স্টেরয়েডের ওপর একটি ম্যাগনেটার বা পালসার।’
কানাডিয়ান হাইড্রোজেন ইনটেনসিটি ম্যাপিং এক্সপেরিমেন্ট (চাইম) ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে একটি সম্ভাব্য এফআরবি’র একটি সংকেত শনাক্ত করে, যার ডেটা স্ক্যান করেছিলেন ড্যানিয়েল মিচিলি। ওই সংকেতের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওটা অস্বাভাবিক ছিল।
‘এটি কেবল খুব দীর্ঘ নয়, প্রায় তিন সেকেন্ড স্থায়ী ছিল। তবে পর্যায়ক্রমিক শিখরগুলো উল্লেখযোগ্যভাবে সুনির্দিষ্ট ছিল। ওই সংকেতের একটি সেকেন্ডের প্রতিটি ভগ্নাংশ নির্গত করে বুম, বুম, বুম’ একটি হৃদস্পন্দনের মতো।
খুলনা গেজেট/ এস আই