যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া-সাতমাইল পশুহাট দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পশুর হাট নামেই পরিচিত। এ হাটে ঝিকরগাছা, কলারোয়া, চৌগাছা, শার্শা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন পার্শবর্তী জেলা থেকে আসে গরু ক্রয় করতে। অন্যান্য বছর ভারত থেকে আসতো হাজার হাজার গরু ছাগল। বিএসএফের কড়াকড়িতে এবার ভারতীয় গরু না আসলেও দেশে উৎপাদিত খামারির গরু আসছে হাটে।
বন্যাসহ বিভিন্ন দুর্যোগের কারণে বাইরের ব্যাপারী কম আসায় লোকসানের মুখে পড়েছে খামারি ও ব্যবসায়িরা। গরুর আমদানি বাড়লেও দাম নিয়ে হতাশ তারা। ছোট বড় গরুতে জমজমাট হাট। তবে এবার পশুর দাম কম। বিক্রেতাদের সমাগম থাকলেও নেই ক্রেতা। ফলে ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ই পড়েছে বিপাকে। হাট মালিক কর্তৃপক্ষরা বলছেন উত্তরাঞ্চলে বন্যার প্রভাবে এবার হাটে ক্রেতা কম।
মেহেরপুর, শরিয়তপুর ও ঢাকা চিটাগাং থেকে কিছু ব্যাপারী আসলেও গরুর বাজার মন্দা থাকায় বেশি পশু কিনছে না তারা। ফলে গরু কিনে পড়েছেন বিপাকে। লোকসান পোষাতে ঢাকার বাজার ধরতে অপেক্ষা করছেন তারা।
ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছর পশু কেনা বেচা করে সন্তুষ্ট হয়ে বাড়ি ফেরা যায়। কিন্তু এবার অর্ধশতাধিক গরু কিনে পড়তে হচ্ছে সমস্যায়। লোকসানের মুখে তারা ঢাকার বাজার ধরতে চেষ্টা করছেন।
এদিকে এ বছর কম দামে গরু কিনতে পেরে খুশি ক্রেতারা-এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দাম কম হওয়ায় পশুর প্রতি আগ্রহ ক্রেতাদের।
সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় বছর পাঁচেক আগেও এই হাটে প্রচুর ভারতীয় গরু আসতো। কিন্তু জেলায় গরু মোটাতাজাকরণে কৃষকরা আগ্রহী হওয়ায় এখন আর তেমন আসে না। সাতমাইলের এই বড় হাটে এবার খামার ও বাড়িতে মোটাতাজা করা দেশি গরুর পাশাপাশি হরিয়ানা, সিন্ধি, বুগদায়, ফ্রিজিয়ান, জার্সি, পাকিস্তানি নানা জাতের গরু উঠেছে।
যশোরের রূপদিয়া এলাকার ক্রেতা আজাদ হোসেন বললেন, কোরবানির জন্যে গরু কিনতে দু-তিন হাট ঘুরেছি। গরুর সাইজ অনুযায়ী বিক্রেতারা বেশি দাম হাঁকছেন। গতবছর যে গরু ৭০ হাজারে কিনেছি, এবার তার দাম বলছে এক লাখের বেশি।
শার্শা উপজেলার নাভারণ এলাকার রাজু আহম্মেদ বলেন, মোটামুটি একটি গরু পছন্দ হয়েছে। বাজেট ৭০ হাজার। কিন্তু তারা লাখের নিচে নামতে চাইছেন না।
নজরুল ইসলাম নামে আরেক ক্রেতা বলছেন, বেশ সুন্দর গরু পেয়েছি একটা। কিন্তু দেড় লাখের নিচে বিক্রি করবে না। আমি এক লাখ পর্যন্ত দাম বলেছি। বিকাল পর্যন্ত দেখবো, দামে পোষালে আজই নিয়ে যাবো। না আগামী কাল শনিবারের হাটে আবার দফা আসবো।
বাগআঁচড়া সাতমাইল পশুর হাট ইজারাদার ইলিয়াস কবির বকুল জানান, প্রায় ১৩ কোটি টাকায় হাট ডেকে পড়েছেন বিপাকে। বাজার গরু ভরপুর। ক্রেতা কম হওয়ায় বাড়ছে হতাশা। অন্যান্য বছর কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে বাড়ে পশু আমদানি। গত দু‘হাটে বেচাকেনা হয়েছে প্রায় ১১ হাজার গরু। পশুরহাটে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা-ও সুরক্ষা ব্যবস্থা। ঈদের আগের হাটে বেচা-বিক্রি বাড়ার আশা করছেন হাট কতৃপক্ষ।
শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নারায়ন চন্দ্র পাল জানান, উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পশুরহাটে নিরাপদ পশু বিক্রিতে হাট তদারকি করছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। কেনাবেচায় সবাইকে করা হচ্ছে সতর্ক। পাশাপাশি পুলিশি নজরদারিও বৃদ্ধি করা হয়েছে।
ভারতীয় গরু ছাড়াই দেশে মাংসের চাহিদা পূরণ করার জন্য মানসম্মত ও ডাক্তারী ফর্মূলা ছাড়াই গরু মোটাতাজা করছেন খামারীরা। দেশীয় গরু দিয়েই মানুষের মাংসের চাহিদা পূরণ করা গেলেও দামের কারণে কপালে ভাজ পড়ছে ক্রেতা বিক্রেতাদের। আগামীকাল যেন দাম হাতের নাগালে থাকে এমনটাই প্রত্যাশা গরু ব্যবসায়ী ও ক্রেতা সাধারণের।
খুলনা গেজেট/ এস আই