পদ্মা সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ টি জেলার কয়েক কোটি মানুষের দীর্ঘদিনের একটি লালিত স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে ২৫ জুন। দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে । ওই দিন সকাল ১০ টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যাশিত স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের পরের দিন সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। পদ্মা সেতু নিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের আশা, স্বপ্ন ও প্রত্যাশা পূরণের বিষয় তুলে ধরে খুলনা গেজেটকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন প্রাক্তন মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী, বর্তমান খুলনা -৫ আসনের সংসদ সদস্য , গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ।
তিনি তার মতামত ব্যক্ত করে বলেন, অনেকে বিশ্বাস করতে পারেননি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় প্রত্যয় এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণে একের পর এক যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম একটি সংযোজন স্বপ্নের পদ্মা সেতু। আগামী ২৫ জুন যার বাস্তব রূপ দেখতে এ অঞ্চলের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। পদ্মা সেতুর কারণে বাঙ্গালী জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত। সারাবিশ্ব এর প্রশংসা করছে। পদ্মা সেতু বাংলাদেশকে ২০৪১ সালে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার পথকে সুগম করলো।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর ফলে উন্নয়ন অবহেলিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ টি জেলার সামগ্রিক উন্নয়ন হবে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং প্রবৃদ্ধি দুটোই হবে। শিল্প-কলকারখানা প্রসারিত হবে। কৃষিজাত পণ্যের বাজার প্রসারিত হবে। এ অঞ্চলের কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্য স্বল্প সময়ে এবং অল্প খরচে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে অধিক মুনাফা পাবে। চিংড়ি রপ্তানি সহজতর হবে। মংলা, পায়রা সমুদ্র বন্দর এবং ভোমরা স্থল বন্দরের কার্যকারিতা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। এ অঞ্চলের সামগ্রিক যাতায়াত ব্যবস্থা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের আমূল পরিবর্তন হবে। জিডিপি এবং রাজস্ব আয় দুই বৃদ্ধি পাবে।
তিনি বলেন, এক সময় পদ্মা পার হয়ে রাজধানী ঢাকা ছিলো এ অঞ্চলের মানুষের জন্য দূর্গম পথ। ছোট বেলায় আমরা দেখেছি খুলনা থেকে রাত ৯ টায় স্টিমারে রওনা দিলে পরেরদিন সন্ধা ৬ টায় মানুষ ঢাকায় পৌঁছাতো। পদ্মা পার হতে গিয়ে বৈরী আবহাওয়ার কারণে দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। প্রতি বছর শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশার কারণে পদ্মা দু’পাড়ে শত শত যানবাহন এবং হাজার হাজার মানুষের দূর্ভোগ আমরা প্রত্যক্ষ করি। এ অঞ্চলের মেধাবীরা রাজধানী ঢাকার সংগে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ না থাকা এবং অনুন্নত যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে ইচ্ছা থাকা সত্বেও ঢাকায় যেয়ে পড়াশুনা করতে পারেনি। বহু রোগী সময়মতো পদ্মা নদী পার হতে না পেরে মৃত্যুবরণ করেছে। ঈদের সময় ঘরমুখো মানুষের দূর্দশা আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে দেখেছি। যুগ যুগ ধরে চলা আসা এ সব দূর্ভোগ দূর্দশা থেকে পদ্মা সেতু এ অঞ্চলের মানুষদের মুক্তি দিবে এবং পদ্মা এ অঞ্চলের মানুষদের জন্য আশীর্বাদ হবে।
সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ আরো বলেন, পদ্মা সেতু একটি প্রোডাক্টিভ খাত। যে খাতের মাধ্যমে আগামী ১৭ বছরের মধ্যে টোল আদায়ের মাধ্যমে পদ্মা সেতু তৈরীর সম্পূর্ণ টাকা উঠে আসবে।