খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ৭ দিনের জন্য আন্দোলন স্থগিত করেছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা
  ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ারম্যানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
  ৪০তম ব্যাচের ক্যাডেট এসআইদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত
ঢাকা কলেজে র‌্যাব-ডিবির অভিযান, আটক ১

নিউমার্কেটে ছাত্র-ব্যবসায়ী সংঘর্ষে পাইকগাছার ইম‌নসহ শনাক্ত ৬

পাইকগাছা প্রতিনিধি

নিউমার্কেটে ছাত্র-ব্যবসায়ী সংঘর্ষে নাহিদ মিয়া ও মুরসালিনকে মারধর করে হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে পুলিশ। যে ৬ জনকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ তারা ছাত্রলীগের ঢাকা কলেজ শাখার বিলুপ্ত কমিটির নেতাকর্মী এবং ঢাকা কলেজের ছাত্র। পরিচয় প্রকাশ না করলেও পুলিশ বলছে, নাহিদ মিয়াকে ‘কুপিয়ে’ হত্যা এবং মুরসালিনকে মারপিট করার ঘটনায় যারা জড়িত তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই তাদের নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না।

এদিকে নাহিদ মিয়া ও মুরসালিন ‘হত্যায়’ জড়িতদের ধরতে রোববার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে ঢাকা কলেজের ছাত্রবাসে অভিযান চালিয়েছে ডিবি পুলিশ। অভিযানে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে সে নাহিদ মিয়া বা মুরসালিন হত্যায় জড়িত কি-না সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে একাধিক নির্ভরশীল সূত্রে জানাযায়, কুরিয়ার সার্ভিসকর্মী নাহিদকে এলোপাথাড়ি কুপানোর ঘটনায় জড়িত ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ নেতা ও বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ইমন বাসার। তার গ্রামের বাড়ি খুলনার পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালী এলাকায়। সে ঢাকা কলেজের ইন্টারন্যাশনাল হলের ১০১ নম্বর রুমে থাকতো বলেও সূত্র জানিয়েছে। তবে সে আটক হয়েছে কিনা? বা তার পরিচয় তদন্ত স্বার্থে প্রকাশ করেনি প্রশাসন।

এদিকে নাহিদ মিয়া ও মোরসালিন হত্যা মামলায় শনাক্ত হওয়া ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে রোববার ঢাকা কলেজে অভিযান চালিয়েছে ডিবি। ডিবির ধানমন্ডি জোনাল টিমের এডিসি ফজলে এলাহির নেতৃত্বের ওই অভিযান চালানো হয়। সেখানে একজনকে আটক করার খবর পাওয়া গেছে। তবে ডিবি পুলিশ এ বিষয়ে কোন বক্তব্য জানায়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অভিযান শেষে দুটি মোবাইল সেট ও জহির হাসান জুয়েল নামের এক শিক্ষার্থীকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। আটক জুয়েল ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।

ওই ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক মো: কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি শুনেছেন যে ছাত্রাবাসে র‌্যাব ও ডিবির সদস্যরা এসেছিলেন। তারা দুটো মোবাইল ফোন জব্দ করেছেন। তবে কোনো শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে কিনা, তা তিনি জানেন না।

ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মো. ফারুক হোসেন বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় নাহিদ মিয়া ও মুরসালিনের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলা দুটি ডিবি তদন্ত করছে। পুলিশ ঘটনার দিনের সবগুলো সিসি ক্যামেরা ফুটেজ, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি বিশ্লেষণ করেছে। যেহেতু সংঘর্ষের ঘটনায় নাহিদ মিয়া নামে একজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে সেই ঘটনায় যারা জড়িত তাদের কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। একইভাবে মুরসালিনকে মারপিট করার ঘটনায়ও কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে হেলমেট পরে ধারালো অস্ত্রধারী যে ৬ জনের পরিচয় মিলেছে তারা সবাই ঢাকা কলেজের ছাত্র। এরা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির নেতাকর্মী।

একাধিক ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার দিন বেলা ১২টা ৪৫ মিনিটে ব্যবসায়ীরা ঢাকা কলেজের ছাত্রদের ধাওয়া দেন। ব্যবসায়ীদের পক্ষে সামনে থেকে অবস্থান নিয়ে নাহিদও ছাত্রদের ধাওয়া দিয়েছিলেন। ছাত্ররা পাল্টা ধাওয়া দিলে ফিরে আসার সময় নূরজাহান মার্কেটের গেটের সামনে পা পিছলে মাটিতে পড়ে যান নাহিদ। তখন ছাত্রদের মধ্যে কয়েকজন রড, লাঠি, ইট দিয়ে নাহিদকে বেধড়ক পেটাতে থাকে। এভাবে দুই থেকে তিন মিনিট পেটানোর পর নাহিদ নিস্তেজ হয়ে পড়েন। নাহিদকে মেরে ছাত্ররা পেছনে চলে যাওয়ার সময় রামদা হাতে কালো হেলমেট পরা একজন ছাত্র এসে নাহিদকে কোপাতে থাকে। হলুদ হেলমেট ও লাল রঙের গেঞ্জি পরা আরেক ছাত্র এসে নাহিদকে কোপাতে থাকা ছাত্রটিকে চড় মেরে সরিয়ে দেয়। এরপর ব্যবসায়ী পক্ষের যুবকরা নাহিদকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

নাহিদ হত্যা মামলার বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, ‘এটা খুবই সেনসিটিভ মামলা। অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে চলছে তদন্ত। এটা নিয়ে আমরা কোন তাড়াহুড়ো করতে চাই না। আমরা শতভাগ নিশ্চিত হয়েই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনব। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেককেই চিহ্নিত করেছি, কিন্তু কারও পরিচয় সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হতে পারিনি। আমরা যখন নিশ্চিত হব, তখনই গণমাধ্যমকে সব তথ্য জানানো সম্ভব হবে।’

সোমবার (১৮ এপ্রিল) রাতে এবং মঙ্গলবার দিনভর চলা এই সংঘর্ষে অর্ধ শতাধিক মানুষ আহত হয়। তাদের মধ্যে নাহিদ মিয়া নামের ১৮ বছর বয়সী এক তরুণকে রাস্তার ওপর কোপানো হয়। এলিফ্যান্ট রোডের ডাটা টেক কম্পিউটার নামের একটি দোকানের ডেলিভারি অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে কাজ করতেন নাহিদ। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে তার মৃত্যু হয়। পরদিন রাতে তার চাচা মো. সাঈদ একটি হত্যা মামলা করেন। আর মঙ্গলবার সংঘর্ষের মধ্যে ইটের আঘাতে আহত দোকান কর্মচারী মুরসালিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বৃহস্পতিবার ভোরে। এ ঘটনায় ওইদিন রাতে হত্যা মামলা করেন তার বড় ভাই নুর মোহাম্মদ।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!